ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

বইমেলা: যেন জ্বলতে না জ্বলতেই নিভছে প্রদীপ

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০২১
বইমেলা: যেন জ্বলতে না জ্বলতেই নিভছে প্রদীপ ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল

ঢাকা: বইমেলা থেকে করোনার কারণে পরিবর্তন করা হয়েছে অমর একুশে বইমেলার সময়সূচি। আড়াই ঘণ্টা সময় কমিয়ে মেলা এখন বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত।

তবে পাঠক বা প্রকাশক, সবার অভিমত- যেহেতু স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে, সেহেতু সময় কমিয়ে দেওয়াটা ঠিক যুক্তিসঙ্গত নয়।  
বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) বিকেলে মেলার সোহরাওয়ার্দী প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, অন্য দিনের তুলনায় এদিন মেলায় প্রথম থেকেই লোকসমাগম ছিল। তবে প্রদীপ ভালো করে জ্বলে ওঠার আগেই যেন নিভে গেলো। জমে ওঠার মুহূর্তেই বন্ধ হলো মেলার গেট।

বিকেলে মেলায় কথা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্স ফেলো তৌহিদুল হাসান নিটোলের সঙ্গে। কয়েকটি বই কিনে আরোও কিছু বই কেনার জন্য ঘুরছিলেন মেলা প্রাঙ্গণেই।

কথা হলে তিনি বলেন, বইমেলা অন্য কোনো মেলার মতো না যে এলাম আর কিনে নিয়ে চলে গেলাম। এখানে যারা প্রকৃত পাঠক, বইয়ের ক্রেতা, তারা স্টলে স্টলে ঘুরে বইয়ের পাতা উল্টে দেখে, দু-চার লাইন পড়ে বাছ-বিচার করে তবেই একটা বই কেনেন। কিন্তু এই আসতে আসতেই, দুটো বই কিনতেই ঘোষণা আসছে মেলার সময় শেষ। তাহলে কীভাবে হলো!

তিনি বলেন, করোনার কারণেই যদি মেলার সময়ে এই পরিবর্তন আনা হয়, তবে আমি মনে করি মেলার সময় না কমিয়ে বরং বাড়ানো উচিত। কেননা মেলার সময় কমালে জনসমাগম বাড়বে। ফলে করোনার ঝুঁকি বাড়বে।

আরেক পাঠক নাজমুল হাসান বলেন, মেলার সময় কমিয়ে দেওয়ার এই বিষয়টা অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য। আমি প্রায়ই মেলায় আসি, যতটুকু দেখেছি, সবাই মাস্ক ব্যবহার করছেন এবং বড় পরিসর হওয়ায় নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখেই চলাফেরা করছেন। কিন্তু আজ এই অল্প সময়েই মেলায় অনেক মানুষ হয়ে গেছে। এটা একদিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ।

হাসিব আবেদিন নামে এক পাঠক বলেন, মাত্র তিন ঘণ্টায় একটা মেলা কিছুতেই ঘুরেফিরে দেখে কেনাকাটা করার জন্য যথেষ্ট না। আমার অফিসই তো শেষ হয় ৫টায়। আমার অফিস এখানেই, কাছেই বলে অফিস থেকে সরাসরি মেলায় আসতে পেরেছি। যাদের অফিস দূরে, তারা আসবে কীভাবে আসবে।

এদিকে মেলার সময় কমানোয় বেশ ক্ষুব্ধ প্রকাশকরাও। বিশেষ করে তাদের সঙ্গে কোনো প্রকার কথা না বলেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ব্যবসায়িকভাবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলেই মনে করছেন।

প্রকাশকদের মতে, বইমেলার মূল পাঠক আসা এবং বইয়ের বেচাকেনা শুরু হয় সন্ধ্যার পর থেকে। আর তার আগেই যদি মেলা বন্ধ হয়ে যায়, তবে তো কিছুই হলো না। ফলে ক্ষতি পোহাতে হবে প্রকাশকদের।

এদিকে মেলার সময় নির্ধারণ নিয়ে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৃহস্পতিবার বিকেলে সভা করেছেন বিভিন্ন প্রকাশক ও প্রকাশক সমিতির নেতারা। তবে প্রাথমিকভাবে সভায় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ।

বিকেলে মেলা পরিদর্শন করেছেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. বদরুল আরেফিন। মেলা পরিদর্শন শেষে তিনিও কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তিনি এসময় মেলা, মেলার সার্বিক বিষয় এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়গুলো দেখে সন্তোস প্রকাশ করেন।

নতুন বই: বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে ১ এপ্রিল অমর একুশে বইমেলায় নতুন বই এসেছে ৭২টি। এরমধ্যে গল্প-১৫টি, উপন্যাস-১০টি, প্রবন্ধ-৬টি, কবিতা-২২টি, শিশুসাহিত্য-১টি, জীবনী-২টি, মুক্তিযুদ্ধ-১টি, বিজ্ঞান-১টি, ইতিহাস-৩টি, বঙ্গবন্ধু বিষয়ক-৪টি, রম্য/ধাঁধা-১, অনুবাদ-১ এবং অন্যান্য-৪টি বই।

এসব বইয়ের মধ্যে নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্র থেকে সুলতানা রিজিয়ার গল্পগ্রন্থ ‘নির্বাচিত গল্প’, কথাপ্রকাশ থেকে মোশতাক আহমেদের কিশোর গোয়েন্দা গল্প ‘নিতুর টিয়া’, রফিকুর রশীদের গল্পগ্রন্থ ‘আতংকিত রাত্রিদিন’, সিঁড়ি প্রকাশন থেকে চঞ্চল শাহরিয়ারের কাব্যগ্রন্থ ‘অনুভবে ফিরে আসা’, অবসর থেকে ক্ষিতিমোহন সেনের ‘ভারতীয় মধ্যযুগের সাধনার ধারা’, আগামী প্রকাশনী থেকে মোনায়েম সরকার এবং আবদুল গাফফার চৌধুরীর বঙ্গবন্ধু বিষয়ক পৃথক গ্রন্থ ‘আমার বঙ্গবন্ধু আমার বাংলাদেশ’, সময় প্রকাশন থেকে মোহাম্মদ ফয়েজ উজ্জামানের জন-ইতিহাস গ্রন্থ ‘মুজিবনগর সরকার ১৯৭১’ এবং চৌধুরী শহীদ কাদেরের ‘ত্রিপুরা ১৯৭১’, নাগরী প্রকাশন থেকে আন্দালিব রাশদীর কাব্যগ্রন্থ ‘মহুয়ার সাথে’, এবং কবি প্রকাশনী থেকে রেজাউদ্দিন স্টালিনের কাব্যগ্রন্থ ‘বরফের বই’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

আগামীকালের সময়সূচি: ২ এপ্রিল ২০২১ শুক্রবার অমর একুশে বইমেলা ২০২১-এর ১৬তম দিন। এদিন মেলা শুরু হবে বেলা ১১টায় এবং চলবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত।

বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০২১
এইচএমএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।