ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

শ্রদ্ধার সঙ্গে লেখা হোক প্রতিটি শব্দ

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৮
শ্রদ্ধার সঙ্গে লেখা হোক প্রতিটি শব্দ বইমেলা। ছবি: জিএম মুজিবুর

অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: বইপ্রেমীদের জন্য বিশ্বের অনেক দেশেই আয়োজিত হয় বইমেলা। কিন্তু বাংলার বইমেলা যেন অন্য সব দেশের থেকে আলাদা। কারণ, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের প্রধান দু’টি ঐতিহাসিক কালপর্বের একটি। আর সেটি হচ্ছে ‘ভাষা আন্দোলন’।

এ সূত্র ধরেই বাঙালির বইমেলায় উঠে আসে বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয়। পাশাপাশি এ প্রাণের মেলায় মিশে আছে বাঙালির আবেগ, দেশপ্রেম ও স্বত্বা।

ভাষার জন্য যে লড়াই হয়েছিল ১৯৫২ সালে, তা আজও দীপ্তমান একুশ শতকের বাঙালি চিত্তে। ভাষাকে ভালোবাসে বলেই, তারা ছুটে আসেন অমর একুশে গ্রন্থমেলায়, ঘুরে ঘুরে দেখেন মেলা প্রাঙ্গণ, হাজারো বইয়ের ভিড়ে খুঁজে নেন নিজের পছন্দেরটি। আর এ কারণেই তারা নির্দ্বিধায় বলতে পারেন ভাষাকে বিকৃত না করার দীপ্ত অঙ্গিকার।

মেলা প্রাঙ্গণে বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) কথা হয় চলচ্চিত্র নির্মাতা সাইদুল আনাম টুটুলের সঙ্গে। স্টলে স্টলে ঘুরে চলচ্চিত্র বিষয়ে বেশ কয়েকটি বই কিনেছেন তিনি।  

এবারের বইমেলা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেলা প্রতিবারই বড় হচ্ছে। ২০ বছর আগে যখন বইমেলায় আসতাম, তখন সবার হাতে শুধু বই দেখতাম। আর এখন বেশি চোখে পড়ছে সেলফি তোলার প্রতিযোগিতা। তবে বইয়ের মান কিছু দিক থেকে বেশ উন্নত হয়েছে। কভার, বাইন্ডিং, পৃষ্ঠা, ছাপার দিক থেকে কিছু বই বেশ ভালো করেছে। কিন্তু এর বিপরীতও আছে। কিছু প্রকাশনী যেন শুধু বাণিজ্যিক চিন্তা থেকেই মেলায় অংশ নিচ্ছে।  

শুধু বাণিজ্যিক চিন্তা বাদ দিয়ে নৈতিকতার দিকেও নজর দেওয়া উচিত এবং বইয়ের বানানের প্রতি আরও মনোযোগী হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

আরেক চলচ্চিত্র নির্মাতা ও কলাম লেখক ফরিদুর রহমান বললেন 'মুরগী লেখক'দের কথা। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, সেদিন বাংলাবাজার গিয়েছিলাম। এক প্রকাশকের সঙ্গে অনেকক্ষণ ধরে গল্প হচ্ছিলো। হঠাৎ তিনি বললেন, ভাই একটু অপেক্ষা করেন, একটা 'মুরগী' এসেছে। আশ্চর্য হয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে প্রকাশক বললেন, এরা লেখার মান দিয়ে নয়, টাকা দিয়ে বই প্রকাশ করে লেখক হওয়ার ইচ্ছা পূরণ করেন।

তিনি বলেন, একসময় প্রতিটি প্রকাশক বই সম্পাদনা ও বইয়ের প্রুফ দেখার জন্য আলাদা মানুষ রাখতেন। এখন তো সেটা নেই বললেই চলে। লেখক যেভাবে দিচ্ছেন, তারাও ওভাবেই ছাপছেন। এটা আমাদের সাহিত্যের জন্য খুব বড় একটা হুমকি। পাশাপাশি ভাষার বিকৃতি তো আছেই।

ভুল বানান, অশুদ্ধ বাক্যরীতিতে ভরপুর একাধিক বই যাচাই করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক মোবাশ্বেরা খানম বললেন, যেই একুশের চেতনা ছড়িয়ে দিতে এই বই মেলার আয়োজন করা হয়েছে, সেই বই মেলাতেই এমন ভুলভাল বই এলে তরুণ প্রজন্মের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছাবে। এ বিষয়টি নিয়ে প্রকাশকদের সতর্ক থাকা উচিৎ।

ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিবিএ ও ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্টের শিক্ষার্থী নাদিম বলেন, ভিনদেশি ভাষাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে আমরা যেন বাংলাকে ভুলতে বসেছি। বাংলা ভাষার কোনো বিকৃতি আমরা সহ্য করব না।

গ্রন্থমেলা চত্বরে এবিষয়ে কথা হয় কবি কামাল চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, বইমেলায় এখন প্রচুর নতুন বই আসছে। সেগুলো সৃজনে-মননে অসাধারণ। তবে সমস্যা হলো, কিছু কিছু লেখক এমন কিছু লিখছেন, যা আমাদের ভাষার বিকৃতির একটা অংশ বলা যেতে পারে। প্রকাশকরা‌ এ ব্যাপারে আরও সচেতন হতে পারেন। বই সম্পাদনার ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শেষ সময়ে তাড়াহুড়ো করে বই প্রকাশের কোনো মানে হয় না, এ বিষয়টা খুব ভালোবেসে করা উচিত।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৫ ঘণ্টা; ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৮
এইচএমএস/এনএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।