ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

বইয়ের দাম চড়া, অসন্তুষ্ট পাঠক

আদিত্য আরাফাত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৬
বইয়ের দাম চড়া, অসন্তুষ্ট পাঠক ছবি: দীপু মালাকার/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বইমেলা থেকে: দাম ক্রয় ক্ষমতার বাইরে হওয়ায় অনেক পাঠকই চাহিদা অনুযায়ী এবার বই কিনতে পারেননি। মেলায় বইয়ের দাম বৃদ্ধি নিয়ে ক্রেতারা খোদ প্রকাশকদের সামনেই প্রতিবাদ করেছেন।

ক্রেতাদের অভিযোগ, বইয়ের দাম এবার লাগামছাড়া।

এমন অভিযোগের সোজাসাপটা জবাবও রেখেছেন প্রকাশকরা। তারা বলছেন, কাগজ, কালি, প্লেট, কাভার পেপার, পজেটিভ, লেমিনেটিং ফয়েল পেপার, আঠাসহ বই ছাপানোর প্রায় সব দ্রব্য বা কাঁচামালই আমদানি নির্ভর। ফলে ডলারের কারণেও তাদের বইয়ের উৎপাদন খরচ বেড়েছে।

এবার মেলায় বই কিনতে আসা পাঠকরা জানিয়েছেন, বইয়ের দাম এবার অনেক বেড়েছে, আমাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে ছিল। তবুও দাম চড়া হলেও পছন্দের বই কিনেছেন পাঠক।

রোদেলা প্রকাশনীর প্রকাশক রিয়াজ খান বাংলানিউজকে বলেন, বইমেলা শুরুর আগে কাগজের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি হওয়াতে বইয়ের দাম বাড়াতে বাধ্য হন প্রকাশকরা। এছাড়া ছাপার অন্য অনুষঙ্গের দাম বাড়ায় বইয়ের দামের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ে।

তিনি বইমেলা কেন্দ্র করে কাগজের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানান।

মেলা ঘুরে দেখা যায়, এবার সবচেয়ে বেশি বেড়েছে শিশুদের বইয়ের দাম। চার রঙে ছাপা ৮ পৃষ্ঠার একটি বইয়ের দাম এক থেকে দেড়শ’ টাকা। শিশুরা মেলায় এলে একটি বা দু’টি বই পেয়ে তৃপ্ত হয় না। চার–পাঁচটি বই কিনে দিলে তবেই তারা খুশি হয়। ফলে মেলায় এসে প্রিয় সন্তানের হাসি মুখ দেখতে মিলিয়ে যাচ্ছে অভিভাবকদের মুখের হাসি।

রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বইমেলা ঘুরে দেখা যায়, মিরপুর থেকে আসা স্কুল শিক্ষক শারাফাত ইসলাম বই হাতে নিচ্ছেন আর মলাট উল্টিয়ে দাম দেখেই রেখে দিলেন। নিজে পড়ার জন্য দেড়হাজার টাকা বাজেট নিয়ে মেলায় এসে শেষ পর্যন্ত উদ্যানের শিশু কর্নার থেকে সন্তানের জন্য কার্টুনের বই আর কমিকস্ নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

মেলা থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় কথা হয় শারাফাতের সঙ্গে। ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, আমি প্রতিবছরই মেলায় আসি। প্রতি মেলায় একাধিকবার এসে বাজেট অনুযায়ী বই কিনি। সন্তানের জন্যও শিশুদের বই কিনি। এবার এসে দেখি যে বাজেট নিয়ে আমি পছন্দের বই কিনতে এসেছি সেগুলোর দাম অনেক চড়া।

তিনি বলেন, দাম বেশি হওয়ায় শুধু বাচ্চার জন্য বই কিনেছি।
এবারের মেলায় বিভিন্ন স্টলে ঘুরে দেখা গেছে, দাম দেখে কেউ কেউ মলাট বন্ধ করে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। তবে দাম বেশি হওয়ায় যে বই বিক্রিবাট্টা চলছে না তাও নয়। বেশি দাম দিয়ে যারা বই কিনছেন তারা প্রকাশকদের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

দাম বৃদ্ধিতে পাঠকের এমন অসন্তুষ্টি নিয়ে কথা হয় ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের স্বত্ত্বাধিকারী জহিরুল আবেদীন জুয়েলের সঙ্গে। বইয়ের দাম বাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, গতবারের চেয়ে বইয়ের দামের যে খুব পার্থক্য তা কিন্তু নয়। ফর্মা (১৬ পৃষ্ঠা) অনুযায়ী আমরা বইয়ের দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা রাখি।
তার দাবি বইয়ের দাম এখনও অস্বাভাবিক হয়নি।

প্রকাশকদের এমন বক্তব্য থাকলেও পাঠকদের প্রত্যাশা, বইয়ের দাম মধ্যবিত্ত পাঠকের ক্রয়ক্ষমতার ভেতরে থাকা উচিত। কারণ বইয়ের দামের ওপর বিক্রিও নির্ভর করে।

বইমেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের স্টলগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে গতবারের চেয়ে এবার বইয়ের দাম বেড়েছে।

জনপ্রিয় কবি লেখকদের পাশাপাশি নবীন লেখকের গল্প, উপন্যাস, ছড়া, কবিতা, ভ্রমণ ও শিশুসাহিত্য সব ধরনের বইয়ের দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শিশুকর্নারে যতগুলো শিশুদের বইয়ের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্টল রয়েছে তাদের বেশির ভাগ বইয়ের দাম এবার কয়েকগুন বেড়েছে।

৩ ফর্মার বইয়ের মূল্য দেড়শ থেকে ২শ টাকা। রঙিন ছবিসহ ৫৬ পৃষ্ঠার একটি বইয়ের মূল্য দুইশ পঞ্চাশ টাকা। গতবছর ছিল ১৭০ টাকা।
মেলার ২৮তম দিনে এক দম্পতিকে দেখা যায়, পছন্দ অনুযায়ী কিনেছেন মুহম্মদ জাফর ইকবালের দু’টি বই। বই দু’টি পৃষ্ঠা সংখ্যায় চিকন হলেও দাম ২৫০ টাকা করে।

একুশের বইমেলায় অভিভাবকদের বেশিরভাগই আসেন শিশুদের জন্য বই কিনতে। শিশুদের অভিভাবকরা জানান, শিশুদের বইয়ের দাম তুলনামূলক অনেক বেশি।

এ প্রসঙ্গে চন্দ্রাবতী একাডেমির প্রকাশক কামরুজ্জামান কাজল বলেন, আমরা যে মানের কাগজ, ছাপা ও বাঁধাই দিয়ে ছোটদের বই করি তাতে খরচ বেশি পড়ে যায়। মানসম্পন্ন বই চাইলে খরচ একটু বেশি পড়বেই।
 
তিনি বলেন, শিশুদের বইয়ে সবাই আকর্ষণীয় অলংকরণ চায়। ১৬ পৃষ্ঠার এক ফর্মা এক রঙের উন্নত কাগজ, ছাপা ও বাঁধাইতে এখন খরচ পড়ে ৪০ টাকা, আর রঙিন হলে ৫০ টাকা। বই আকর্ষণীয় করার জন্য রঙিন ছাপার কারণে খরচ বেশি পড়ে যাচ্ছে।

শিশুসাহিত্যের পাশাপাশি গল্প, উপন্যাস ও কবিতার বইয়ের দামও এবার বেশ চড়া। জনপ্রিয় একজন লেখকের ২৫০ পৃষ্ঠার একটি বইয়ের দাম ৪০০ টাকা। ২৫ শতাংশ কমিশন বাদে বিক্রি হচ্ছে তিনশ টাকায়। গতবার এই পৃষ্ঠা সংখ্যার বইয়ের দাম ছিল ২শ টাকা।

একজন জনপ্রিয় লেখকের ৬৮ পৃষ্ঠার একটি বইয়ের মূল্য ১৭০ টাকা। ২৫ শতাংশ কমিশন বাদে সেই বই ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গতবার এই পৃষ্ঠা সংখ্যার বইয়ের দাম ছিল ১২০ টাকা। ভিন্ন চিত্রও আছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে ১শ পৃষ্ঠার বইয়ের দাম ১২৫ টাকা। ২৫ শতাংশ কমিশন বাদে সেই বই বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৬
এডিএ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।