ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

অরওয়েলের ‘১৯৮৪’ নিয়ে মেননের সঙ্গে আলাপ

অনুবাদ করেও পেয়েছি সৃষ্টির আনন্দ!

জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর বাংলানিউজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৬
অনুবাদ করেও পেয়েছি সৃষ্টির আনন্দ!

জর্জ অরওয়েল। শতাব্দীসেরা লেখকদের একজন।

তাঁর অমর কীর্তি, মাস্টারপিস উপন্যাস ‘নাইনটিন এইটি-ফোর’। অনেকক্ষেত্রেই লেখা হয় ‘১৯৮৪’। একে বলা হয় ভবিষ্যকালের উপন্যাস। এমনি-এমনি বলা হয় না। ১৯৪৯ সালে প্রকাশিত হবার পর এই উপন্যাস বিশ্বজুড়ে যে আলোচনার জন্ম দিয়েছিল তাতে আজও ভাটা পড়েনি। মাত্র চার বছরের মধ্যেই এটি অনূদিত হয়েছিল ৬৫টি ভাষায়। চিন্তা ও কল্পনাপ্রতিভায় সমসাময়িক কালের চেয়ে ঢের এগিয়ে থাকা অরওয়েলের এই উপন্যাসের জনপ্রিয়তা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। সাধারণ পাঠক থেকে সাহিত্যের বোদ্ধাপাঠক সবার কাছেই এটি সমান প্রিয়তা পেয়েছে।

বাংলাদেশের অভিজাত প্রকাশনাসংস্থা ‘ঐতিহ্য’ এটির বাংলা ভাষান্তর প্রকাশ করেছে। ৩০০ পৃষ্ঠারও বেশি কলেবরের বইটির অনুবাদ করেছেন মাহমুদ মেনন। নিজেও আগে থেকেই নানাভাবে লেখালেখির সঙ্গে জড়িত ছিলেন মেনন। সেসবের মধ্যে ছড়া, শিশুতোষ রচনা, গল্প যেমন আছে, তেমনি আছে বিভিন্ন বিষয়ে টুকটাক অনুবাদও। তবে এটিই বই আকারে প্রকাশিত তার প্রথম পূর্ণাঙ্গ অনুবাদকর্ম।

মাহমুদ মেনন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম’এ কাজ করেন হেড অব নিউজ হিসেবে। আমিও এতে কর্মরত কনসালট্যান্ট এডিটর হিসেবে। দু’জনের টেবিল পাশাপাশি। সে সূত্রে দিনের পুরোটা সময় কাজের পাশাপাশি নানান বিষয়ে কথা, আলাপ ভাববিনিময় হয়। জর্জ অরওয়েলের ‘নাইন্টিন এইটি-ফোর’ অনুবাদে তিনি হাত দেবার পর পারস্পরিক আলাপের অভিমুখটাও গেল বদলে। আলাপ মানেই, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অরওয়েল নিয়ে। অনুবাদের নানা সমস্যা নিয়ে। বাংলায় যুৎসই ভোকাব্যুলারি নিয়ে। কখনও বা কোনো একটা বিশেষ টার্ম, শব্দ বা বাক্যবন্ধের আভিধানিক অর্থ ও প্রায়োগিক অর্থ কী হতে পারে তা নিয়েও। এভাবে পুরো একটা বছর মাথার উপর দিয়ে পার হয়ে গেল দু’জনের---আমার এবং অরওয়েলের কিস্তিতে উঠে বাংলাভাষার দিকে একে চালিয়ে নেয়ার কঠিনব্রতী মাহমুদ মেননের।

বলতেকি, এই পুরোটা প্রক্রিয়া আমার নিজের চোখের সামনে ঘটেছে। সে কারণে বইটির প্রকাশিত রূপ দেখবার আগ্রহ ও প্রতীক্ষা আমারও কম ছিল না। অবশেষে ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে বইটি বাংলা একাডেমি ফেব্রুয়ারি বইমেলায় এসেছে। মেলার ২৫৮-২৫৯-২৬০ নং স্টল জুড়ে তৈরি ঐতিহ্য’র গ্যালারিতে পাওয়া যাচ্ছে বইটি।

ভাবলাম গল্পচ্ছলে মেননের প্রকাশ-পরবর্তী অনভূতিটা জেনে নিই। আর তা তার সম্ভাব্য পাঠকদেরও জানিয়ে দিই।

অবশ্য ‘আপনার অনুভূতি কেমন’ জাতীয় গতানুগতিক প্রশ্নের দিকে না গিয়ে প্রথমেই জানতে চাইলাম বই অনুবাদ করার প্রথম চেষ্টাটিতেই অরওয়েলের ‘নাইন্টিন এইটি ফোর’ কেন? সহজ কোনো কিছুতে না গিয়ে কেনই বা এমন একটি দুরূহ কাজে হাত দেয়া?

‘স্রেফ অরওয়েল-প্রেম!’—একগাল হেসে লাজুক উত্তর মেননের। পরক্ষণেই নড়েচড়ে বসে বলা শুরু করলেন:
মজেছিলাম ওর ‘অ্যানিমেল ফার্ম’ পড়ে। সেই থেকে মুগ্ধতা। ক্রমে ক্রমে চুম্বকের মতো এক আকর্ষকের নাম হয়ে উঠলেন অরওয়েল আমার কাছে। তার ও তার আরো নানা কাজ সম্বন্ধে জানার চেষ্টা চলতেই থাকলো। পরে যখন একটা আস্ত সাহিত্যকর্ম অনুবাদ করার কথা ভাবলাম, তখনও সবাইকে হটিয়ে অরওয়েলই প্রথম পছন্দ। তাছাড়া অরওয়েলের বহুমাত্রিকতা, তাঁর বইয়ের উপযোগিতা ও বিপুল জনপ্রিয়তা---এসবই পছন্দটা ঠিক করে দিল।

এরপর এই বইটার আরেকটা চৌম্বক গুণ নিয়ে বলি। এটি জটিল হলেও কাহিনি বলার মুন্সিয়ানা এতোই যে, একবার শুরু করে দিলে এ থেকে ফিরে আসার পথ আর থাকে না। কাহিনিই টেনে নিয়ে যেতে থাকে। ’

এরপর নিজের অনুভূতির কথা জানালেন মেনন। বেশ বিনয়ের অবতারই মনে হলো তাকে:
বইটার দুটি ইনার ফ্ল্যাপের একটিতে অরওয়েলের, অন্যটিতে আমার ছবি! ভাবাই যায় না। এতোটা প্রাপ্য হয়তো ছিল না আমার। আর দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, কাজটি শেষ করতে পেরেছি। এবার নিন্দা ও প্রশংসা দুটোই মাথা পেতে নিতে প্রস্তুত। তবে এটুকু বলতে পারি, নতুন সৃষ্টির আনন্দ জাগছে মনে।

এরপর মেনন জানালেন, কাজটা ছিল বড় এক চ্যালেঞ্জ।

তাকে প্রশ্ন করেছিলাম এর বাক্য বিন্যাসের জটিলতা নিয়ে। বা দীর্ঘ বাক্যবিন্যাস নিয়ে। যা বাংলা বাক্য নির্মাণ পদ্ধতির বিপরীত। সেটা করতে তো অনেক শ্রম দিতে হয়েছে তাকে।

- ‘হ্যাঁ  সেটাই। এটি একটি জটিল উপন্যাস; সেই সঙ্গে এর বাক্যগঠন পদ্ধতি যে কোনো অনুবাদকের জন্য বড় পরীক্ষা। অন্যসব উপন্যাসের মতো পরিপার্শ্বের আবহ-বর্ণনার চেয়ে  তিনি হেঁটেছেন থিওরাইজেশনের পথে। কতো যে রেফারেন্স, কতো না বিষয়-- ইতিহাস, ভূগোল, নৃতত্ত্ব, পুরাণ, বিজ্ঞান, সমাজতত্ত্ব আর ভবিষ্য-পৃথিবীর আদল দেখাতে গিয়ে নানা গোলকধাঁধার ভেতর পথরচনা। এসবকে বুঝে, শুনে তবেই একে বাংলায় গ্রেপ্তার করতে হয়েছে। আপনি নিজেও এই প্রক্রিয়ার এক পরোক্ষ অংশীদার। সবকিছুই আপনার চোখের সামনেই ঘটেছে। এ নিয়ে নিরন্তর মতবিনিময় হয়েছে আমাদের দু’জনের মধ্যে।

মেননের মতে, আধুনিককালের পাঠকের উচিত জীবনে অন্তত অরওয়েল পড়া। বিশেষত অগ্রসর পাঠকদের।
আর নিজের কাজের মান নিয়ে তিনি তৃপ্ত। এব্যাপারে মেনন বললেন:

আমি একটা বছর লেগে থেকে একে বাংলায় রূপ দিয়েছি। অপ্রয়োজনীয় কোনো স্বাধীনতা নিইনি। আপন মনের মাধুরি মেশাইনি। খোদার ওপর খোদকারিও করতে চাইনি। অরওয়েলের গল্প বলার ধাঁচটি বজায় রেখেছি আর প্রতিটি শব্দ-বাক্যে দিয়েছি মনোযোগ। আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টাটা দিতে পেরেছি। বাকিটা পাঠকই বলবেন।

আর হ্যাঁ, তার এই অনুবাদকর্মটির পেছনে যারা প্রতিনিয়ত প্রেরণা দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ তিনি। বিশেষ করে নিজের স্ত্রী-সন্তান, অফিসের সহকর্মী-সতীর্থদের। বিশেষ করে বাংলানিউজের এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেনের প্রতি তার কণ্ঠে ঝরেছে প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা। পুরো কাজটির পেছনে তার উৎসাহ ছিল বড় এক প্রেরণা।

বাংলাদেশ সময় ১৮৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৫
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।