ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

সময়টা শুধু শিশুদের

সৈয়দ ইফতেখার আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৬
সময়টা শুধু শিশুদের ছবি: দীপু/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: ‘ভুতের বই, মজার মজার গল্পের বই, আরও কত্তো বই কিনেছি আমি। বই পড়তে আমার ভীষণ ভালো লাগে।

আর বইয়ের মধ্যে যে ছবিগুলো আছে না- সেগুলো দেখতেও আমি অনেক পছন্দ করি। ’

রাজধানীর অদূরে সাভার থেকে আসা শিশু দাইয়ান অমর একুশে গ্রন্থমেলার প্রথম শুক্রবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) শিশুপ্রহরে এভাবেই নিজের মনের কথাগুলো বাংলানিউজকে বলছিল। বাবার হাত ধরে মেলায় এসেছে চতুর্থ শ্রেণির এ শিক্ষার্থী।

তার বাবা এমদাদুল হক সুমন বাংলানিউজকে বলেন, ছেলেটা যে বই-ই কিনতে চায় দেবো। বই পড়ার অভ্যাস শুধু পাঠ্য হিসেবেই নয়, এটি শিশুদের শেখায় মানুষে মানুষে মূল্যবোধ।

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ছোটদের জন্য টানা দু’দিন শিশুপ্রহর ঘোষণা করা হয়েছে। শুক্র ও শনিবার (৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত শিশুপ্রহরের আয়োজন বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে। বেলা ১টার পর যথারীতি মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত হবে। এই ঘণ্টা দুয়েক সময়টা শুধুই শিশুদের।

বাবা-মার হাত ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে একে একে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশ প্রবেশ করে শিশুরা। সেখানে শিশুদের জন্য আলাদা চত্বর সাজানো। এই কয়দিন যেন সেই চত্বর শিশুদের কোলাহলে মুখরিত হওয়ারই প্রহর গুনছিল!

দাদা-দাদি ও মায়ের হাতে ধরে ধানমন্ডি থেকে এসেছে তেহরিন ওমাইজা। সে মূলত ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থী। দাদা-দাদির উৎসাহে শিশুপ্রহরে মেলায় আসা। মূলত বাংলা ভাষার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির জন্যই নাতনিকে মেলায় এনেছেন বলে মত দিলেন আশরাফুজ্জামান। তিনি বলেন, বাংলা না শিখলে ভবিষ্যতে কিছুই করার নেই। শুধু ইংরেজিতে পড়লেই জ্ঞান চর্চা হলো না। তাই নাতনিকে বাংলা গল্পের বই কিনে উপহার দেবো। এছাড়ার ওর যে রংবেরঙেয়ের বই ভালো লাগে তা তো কিনবেই।

ব্যাংকার সাইফুল ইসলাম দুই ছেলেকে নিয়ে সকাল সকাল মেলায় উপস্থিত। উদ্দেশ্য সন্তানদের বই কেনার বায়না পূরণ। কথা হয় তার ছেলে নার্সারির শিক্ষার্থী নাবিল ফাহমিদের সঙ্গে। সে বাংলানিউজকে বলে, মেলায় অনেক বন্ধু পেলাম। নতুন নতুন বন্ধু। এছাড়া ভাইয়াও সাথে আছে, এখন দেখে দেখে যে বইগুলো ভালো লাগে সব কিনে দেবো।

তার বড় বড় ভাই আরহাম জাহিন পড়ছে কেজি-ওয়ানে। সে বলে, আজ বাবা কোনো কথায় না করবেন না, এটা বলেই বাসা থেকে নিয়ে এসেছেন। যত পারি দু'ভাই মিলে কিনবো বই।  

রাইসা খান স্টলে দাঁড়িয়েই শুরু করে দিয়েছে বইপড়া। দূর থেকে তাকে দেখে ছুটে আসা। এরপর জানতে চাওয়া- কী বই সংগ্রহ করবে তুমি? ক্লাস থ্রিতে পড়ুয়া রাইসা বাংলানিউজকে বলে, ভূতের বই একটা পড়া শুরু করে দিয়েছি। দিনের আলোতে পড়লে তো ভয় কম লাগবে- তাই পড়ছি!

পাশে থাকা তার মা রোমানার সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের। তিনি বলেন, বনানী থেকে মেলায় এসেছি কেবল শিশুপ্রহর বলে। কারণ এ সময়টি শুধুই ওদের (শিশুদের)। বড় মেয়ে রাইসা ও ছোট মেয়ে মুনতাজির বিন কালাম, তারা দু’জনই বই পড়তে ভালোবাসে। মা হিসেবে চাই- ওরা যেন বই পড়ে ভাষা ও দেশের ইতিহাস জানতে পারে। দেশপ্রেম, ভাষাপ্রেম তো আর বলে বলে হয় না- বই পড়ে হবে।

গ্রন্থমেলায় শিশুদের নিয়ে আসা কয়েকজন অভিভাবক জানান, শিশুপ্রহর প্রতিবারই হয়। তবে এবার বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। যা বাংলা একাডেমির বেশ ভালো উদ্যোগ। এই প্রহরটা শুধুই শিশুদের। তারাই ঘোরে, নতুন নতুন বই দেখে, আর পছন্দ মতো কেনে। শিশুর সৃজনশীলতা বৃদ্ধিতে এই উদ্যোগ বেশ কার্যকর বলেও জানান তারা।

অনেকে বলছেন, একুশের চেতনা ও ইতিহাস নতুনপ্রজন্মের এই শিশুদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে তাদের গ্রন্থমেলায় এনে। ঘুরে ঘুরে, বই দেখে, সুন্দর পরিবেশ থেকে শিখছে তারা। জানছে ভাষার কী মূল্য, তারা শিখছে কী করে বুকের তাজা রক্ত দিয়েছিলেন '৫২'র শহীদরা। এ মহান ইতিহাস তাদের মনে গেঁথে গেলেই তো কেবল বাংলা ভাষার মর্যাদা আরও বাড়ানো সম্ভব। সঙ্গে শুদ্ধ ভাষাকে আরও তৃণমূল পর্যন্ত নেওয়া সম্ভব। কারণ এই শিশুরাই তো আগামী দিনের কাণ্ডারি।

বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৬
আইএ/এএ

** বইমেলায় রং-তুলি, শিশুদের লুটোপুটি
** বাংলা একাডেমিতে চলছে শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা
** বাংলা একাডেমির শিশু প্রতিযোগিতার ফরম বিতরণ শেষ বুধবার

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।