ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

শহীদ মিনার থেকে সোজা বই মেলায়

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৫
শহীদ মিনার থেকে  সোজা বই মেলায় ছবি: জাহিদ সায়মন/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বইমেলা থেকে: এক হাতে কাঠিতে লটকানো জাতীয় পতাকার অনুকৃতি, অন্য হাত বাবার করতলে বন্দি। ডান গালে শহীদ মিনারের উল্কি, বাম গালে জাতীয় পতাকা।

মাথায় ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ লেখা হেডার, গায়ে সবুজ রঙের পাঞ্জাবি, পরনে সাদা পা’জামা।
 
ঘুম ঢুলঢুল চোখে বাবা অমরেশ শাহ’র সঙ্গে সকাল সাড়ে ৯টায় মেলায় ঢুকেছে সাড়ে ৭ বছর বয়সী সিজান শাহ। এর আগে ভোর ৬টায় ঘুম থেকে উঠে সূত্রাপুরের ফরিদাবাদ থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় সে।
 
ভাষা শহীদ রফিক, শফিক, সালাম, বরকত, জব্বারদের উত্তরসূরি সিজান শাহ প্রভাত ফেরির মিছিলে সবার আগে থাকতে চায়। কিন্তু সিজানের হয়তো জানা ছিলো না, ওর মতো হাজার হাজার সিজান বাবার হাত ধরে আগে ভাগেই প্রভাত ফেরির মিছিলে এসে হাজির। তাই দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে সকাল ৯টায় শহীদ মিনারের বেদিতে ফুল দেওয়ার সুযোগ মেলে সিজানের।
 
শহীদ মিনার দেখা হলো, ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পালাও শেষ। এবার ভাষার মাসের সবচেয়ে বড় আয়োজন অমর একুশে গ্রন্থমেলা দেখার পালা। তাই শহীদ মিনার থেকে বাবার হাত ধরে সোজা বই মেলায় চলে এসেছে সিজান।
 
বইমেলায় বাংলানিউজের স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে কথা হয় সিজানের বাবা অমরেশ শাহ’র সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ওদেরকে যদি নিয়ে না আসি, ওরা জানবে কী করে। শিখবেই বা কীভাবে। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সম্পর্কে ছোটবেলা থেকেই শিশুদের ধারণা দেওয়া উচিত। তাই একটু কষ্ট হলেও খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠিয়ে প্রভাত ফেরির মিছিলে নিয়ে এসেছি। আর একুশে ফেব্রুয়ারির সঙ্গে অমর একুশে গ্রন্থমেলার যোগসূত্র রয়েছে। তাই ওকে বইমেলাতেও ঘুরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। তবে খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠায় ওর চোখ এখন ঘুমে জড়িয়ে আসছে।
 
শুধু বাবার হাত ধরে নয়, শিক্ষকদের সঙ্গেও প্রভাত ফেরির মিছিলে অংশ নিয়ে এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর সোজা বই মেলায় এসেছে অনেকে।
 
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে কথা হয় বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ কলেজের ছাত্রী লামিয়া তাজরী ও রাদসী তাহসীনের সঙ্গে।
 
দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী লামিয়া-রোদসী বাংলানিউজকে বলেন, স্যারদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিতে এসেছি। সেখান থেকে বন্ধুদের সঙ্গে সোজা মেলায়।
 
বই কিনবেন?
 
এবার কিছুটা ইতস্তবোধ করলেন লামিয়া-রোদসী; বললেন, বই কিনবো কিনা বলতে পারছি না। আজ শুধু ঘুরবো, আর বই দেখবো।
 
শুধু কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নয়, নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনারে শিক্ষকদের সঙ্গে ফুল দিয়ে অনেকেই সোজা মেলায় চলে এসেছেন। বিষয়টিকে তারা ‘একই সঙ্গে দুই কাজ হিসেবে নিয়েছেন। ’
 
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলায় দাঁড়িয়ে কথা হয়, দুর্জয় দাস ও জাভেদ হাসান নিলয়ের সঙ্গে। উইলস লিটল্ ফ্লাওয়ার স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র দুর্জয়-জাভেদ নিজেদের স্কুলে নির্মিত শহীদ মিনারে ফুল ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর সোজা মেলায় চলে এসেছেন।
 
এ প্রতিবেদককে তারা বলেন, স্কুলের শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার কর্মসূচি ছিলো। স্যারদের সঙ্গে সেখানে ফুল দিয়ে সোজা মেলায় চলে এসেছি। মেলা থেকে হুমায়ূন আহমেদের বই কিনবো।
 
ছাত্র শিক্ষক ছাড়াও শনিবার সকালে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া শেষে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোক বই মেলায় এসেছেন। তবে সকাল ১১টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মেলায় খুব একটা ভিড় ছিলো না। প্রকাশক, বই বিক্রেতা ও মেলার আয়োজকরা বলছেন, দুপুর ২টা নাগাদ মেলায় পাঠক দর্শনার্থীদের ঢল নামবে।
 
এদিকে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে শনিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টায় মেলার দরজা খোলা হয়। সকাল ৯টার মধ্যে সব স্টলের ঝাঁপ তুলে ফেলেন স্টলকর্মী ও বিক্রয় প্রতিনিধিরা।
 
এদিকে সকাল সাড়ে ৭টায় মেলার মূল মঞ্চে শুরু হয় স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। এতে সভাপতিত্ব করেন কবি অসীম সাহা।
 
বিকাল ৪টায় মেলার মূল মঞ্চে শুরু হবে ‘ভদ্রলোক-রাজনীতি ও শ্রেণিচেতনার আলোকে ভাষা আন্দোলন’-শীর্ষক আলোচনা সভা। এতে প্রধান বক্তা থাকবেন আহমেদ রফিক। স্বাগত ভাষণ দেবেন শামসুজ্জামান খান। সভাপতিত্ব করবেন এমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জমান।
 
কোনো প্রকার বিরতি ছাড়াই মেলা চলবে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। প্রতি দিনের মতো শনিবারও মেলায় বেশ কয়েকটি নতুন বই এসেছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।