ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

ভালোবাসায় পূর্ণ হলো গ্রন্থমেলা

মেহেদী হাসান পিয়াস, আবু তালহা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৪
ভালোবাসায় পূর্ণ হলো গ্রন্থমেলা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বইমেলা প্রাঙ্গণ থেকে: আদিমতাকে অগ্রাহ্য করে মানুষ বরাবরই এগিয়ে নিয়েছে তার সভ্যতাকে। নিজেদের প্রয়োজনেই নিরন্তর এই এগিয়ে চলা।

বিবর্তন-পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে মানুষ গড়ে তুলেছে মানবিক সমাজ ব্যবস্থা।
 
আর মানবিক মানেইতো সৃষ্টিশীলতা, মননের বিকাশ। এই বিকাশ যত বিস্তৃত হবে পঙ্কিলতা ততই সংকুচিত হয়ে আধুনিক থেকে উত্তর আধুনিক হয়ে উঠবে সমাজ। সে প্রচেষ্টার কমতি নেই আমাদের ব্যক্তি জীবন এমনকি জাতীয় জীবনেও।
 
নানা আয়োজনে সারা বছরই মেতে থাকে এদেশের মানুষ। তাই বলে উত্তরাধিকারের দায় থেকে ছিন্ন হয়ে নয়। নয়, শেকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে। বরং পরম্পরায় চলে আসা বাঙালির কৃষ্টি-সংস্কৃতিকে সময়ের সাথে মিলিয়ে সময়পোযোগী করে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। সামাজিক-ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানগুলোও সম্প্রদায়, রক্ষণশীলতার গণ্ডি থেকে বেড়িয়ে অনেক বেশি সার্বজনীন হয়ে উঠেছে।
 
ভালোবাসা দিবসের প্রচলন নিয়ে নানা বিতর্ক আছে। বিজাতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন বলে সমালোচনা করতেও পিছপা হননি কেউ কেউ। তারপরও নব্বইয়ের দশক থেকে হঠাৎ শুরু হওয়া দিবসটি ক্রমেই সার্বজনীন হয়ে উঠছে। নগর জীবনে দিবসটি পালনে উৎসাহ-উদ্দীপনা বেশি হলেও মফস্বল কিংবা গ্রাম্য জীবনে দিবসটি এখনো উৎসব হয়ে উঠতে পারেনি।   
 
ভবিষ্যতে দিবসটি জাতীয় উৎসবের রূপ নেবে কি নেবে না তা সময়ই বলে দেবে। তাই বলে কি ঘরে বসে থাকা যায়? যায় না বলেই পারিবারিক, সামাজিক শাসন-বারণ কিছুটা পাশ কাটিয়ে ভালোবাসা দিবসে রাস্তাঘাটে, উদ্যান-পার্কে ভালোবাসার রুচিশীল প্রকাশ।
 
আগেরদিন বসন্ত বরণে যে রং লেগেছিল শুক্রবার ভালোবাসা দিবসে তা ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং তার আশেপাশের এলাকায়। পরিচ্ছন্ন-পরিপাটি পোশাকে সকাল থেকেই শাহবাগ, টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে যুগল প্রেমীদের নিঃসঙ্কোচ পদচারণা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কপোত-কপোতী আর সাধারণের ভিড় জমে ওঠে এ এলাকায়।
 
দুপুর গড়াতেই সে ভিড় এসে আছড়ে পড়ে অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তাটি জনারণ্যে পরিণত হয়। ব্যক্তিগত আবেগ-ভালোবাসার প্রেমিক-প্রেমিকারা হয়ে ওঠে বইপ্রেমী। স্রোতের মতো এসব বইপ্রেমীরা আসতে থাকে মেলা প্রাঙ্গণে।
 
আর এতে কিছুটা বাদ সাধে মেলায় প্রবেশের সংকীর্ণ প্রবেশ দ্বার। ফলে সবাইকে দাঁড়িয়ে  যেতে হয় লাইনে। বিকেল নামতেই সেই লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে তা টিএসসি, দোয়েল চত্বর পার হয়ে যায়। এদিকে প্রবল ভিড় সামলাতে ব্যতিব্যস্ত থাকতে হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।
 
সন্ধ্যার পর বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ম্যাচের উদ্দীপনা যোগ হয় মেলায়। শত শত ক্রিকেটপ্রেমী হই-হুল্লড়ে মাতিয়ে তোলে মেলা প্রাঙ্গণ। চলে খেলার শেষ অব্দি।
 
তবে মেলায় কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে শিশুদের। অগুনতি মানুষের ভিড়ে ধুলাময় হয়ে ওঠে উভয় অংশের মেলা প্রাঙ্গণ। ফলে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের নিয়ে বের হয়ে যেতে বাধ্য হয়। তারপরও প্রাণের উৎসব বইমেলা এদিন ছিল অনেক বেশি প্রাণবন্ত।
 
শুক্রবারে ১৯৬ বই
ভালোবাসা দিবসে মেলায় নতুন বই এসেছে বিগত দিনের চেয়ে বেশি। এদিন মেলার চৌদ্দতম দিনে মেলায় আসে মোট ১৯৬টি নতুন বই।
 
প্রকাশিত এসব বইয়ের মধ্যে রয়েছে, গল্প-৩৪টি, উপন্যাস-৪৫টি, প্রবন্ধ-১২টি, কবিতা-৪৫টি, গবেষণা-৩টি, ছড়া-৬টি, শিশুতোষ-২টি, জীবনী-৭টি, রচনাবলী-১টি, মুক্তিযুদ্ধ-১টি, নাটক-৪টি, বিজ্ঞান-৩টি, ভ্রমণ-৩টি, ইতিহাস-২টি, রাজনীতি-২টি,  রম্য/ধাঁধা-৬টি, ধর্মীয়-১টি, অভিধান-১টি, সায়েন্স ফিকশন-১টি এবং অন্যান্য-১৭টি।
 
মূল মঞ্চের আয়োজন
শুক্রবার বাংলা একাডেমিতে অমর একুশে উদ্যাপন উপলক্ষে শিশু-কিশোরদের সংগীত প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় হাজি মহম্মদ মহসিন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে দু’টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। ‘মেকলে, মহসিন ও তাঁর এনাডাওমেন্ট ফাণ্ড’ এবং ‘হাজি মহম্মদ মহসিন : একটি অন্বেষণ’ শীর্ষক পৃথক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যথাক্রমে আমজাদ হোসেন ও পার্থ সেন গুপ্ত।
 
আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অধ্যাপক ওয়াকিল আহমদ, শান্তনু কায়সার এবং আবদুল বাছির। সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
 
আলোচকরা বলেন, হাজি মহম্মদ মহসিন ভারতবর্ষের ইতিহাসে লোকহিতবাদিতার এক অনন্য দৃষ্টান্তের নাম। প্রবল জ্ঞানানুরাগ তাকে শিক্ষাবিস্তারে আগ্রহী করে তোলে। তার দানকৃত সম্পত্তি শিক্ষা, সমাজকল্যাণ ও দুঃস্থ মানবতার সেবায় আজও বিশাল ভূমিকা রেখে চলেছে। দানকে তিনি প্রদর্শনপ্রিয়তার বিষয়ে পরিণত না করে সম্প্রদায়-ধর্ম নির্বিশেষে বৃহত্তর মানুষের হিতৈষণায় নিয়োজিত করেছেন।
 
তারা বলেন, মহসিন-মানসের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় উদঘাটিত হলে শুধু ব্যক্তি মহসিন নয় বরং আমাদের সামাজিক ইতিহাসেরও এক গরীয়ান অংশের উন্মোচন ঘটবে।   অনাড়ম্বর জীবনযাপনের অধিকারী হাজি মহম্মদ মহসিন শিয়া-সুন্নি, হিন্দু-মুসলমান, সকলকে সমান চোখে দেখতেন। তার দানশীলতা মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।      
 
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সালাউদ্দিন বাদলের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ আওয়ামী শিল্পীগোষ্ঠী। সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী খুরশিদ আলম, মহিউজ্জামান চৌধুরী, খায়রুল আনাম শাকিল, নাসিমা শাহীন ফেন্সী, নবীন কিশোর, রোকসানা হোসেন, জয় শাহরিয়ার এবং তানজিনা করিম স্বরলিপি। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন গৌতম মজুমদার (তবলা), আলমাস আলী (বেহালা), হাসান আলী (বাঁশি), রবিন চৌধুরী (কি-বোর্ড), প্রদীপ কুমার কর্মকার (প্যাড)।      
 
শনিবারের অনুষ্ঠান
শনিবার শিশুদের এবং অভিভাবকসহ স্বাচ্ছন্দ্যে বই কেনার সুবিধার্থে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলবে শিশুপ্রহর। মেলা চলবে যথারীতি রাত সাড়ে  ৮টা পর্যন্ত। এছাড়া সকাল ১০টায় বাংলা একাডেমিতে অমর একুশে উদযাপন উপলক্ষে শিশু-কিশোরদের সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত নির্বাচন।

বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে লালন শাহ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন যথাক্রমে গোলাম ফারুক এবং শক্তিনাথ ঝা।
 
আলোচনায় অংশগ্রহণ করার কথা রয়েছে, শফি আহমেদ, আবদুল ওয়াহাব, অসীমানন্দ গঙ্গোপাধ্যায় এবং রেজাউদ্দিন স্টালিন। এ আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক পবিত্র সরকার। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।