ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিএনপি

বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন তকমা দিলো কানাডার আদালত

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৭
বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন তকমা দিলো কানাডার আদালত বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন তকমা দিলো কানাডার আদালত

ঢাকা: দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে অভিহিত করেছে কানাডার ফেডারেল কোর্ট।

একটি জুডিশিয়াল রিভিউর আবেদন নিষ্পত্তিকালে আদালতের বিচারক এ অভিধা দেন। বিএনপির এক কর্মীর রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা নাকচ করে দেওয়ার বিরুদ্ধে ওই জুডিশিয়াল রিভিউটি দায়ের করা হয়।

রিভিউর শুনানিতে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার পক্ষে অর্থাৎ ওই বিএনপি কর্মীর বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়।

বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) এই খবর দিয়েছে কানাডাভিত্তিক বাংলা সংবাদমাধ্যম ‘নতুনদেশ’। ফেডারেল কোর্টের বিচারক হেনরি এস  ব্রাউন গত ২৫ জানুয়ারি এই রায় দেন।

মোহাম্মাদ জুয়েল হোসেন গাজী নামে ঢাকার মিরপুরের স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন কর্মী তার রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন নাকচ হওয়ার পর ফেডারেল কোর্টে এই রিভিউর আবেদন করেন।

কানাডা সরকার বিএনপিকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত না করা প্রসঙ্গে আদালত বলেন, তালিকাভুক্তিকরণ পুরোপুরি আলাদা বিষয়। এটি কানাডার গভর্নর কাউন্সল ঠিক করে। এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইস্যু জড়িত থাকে। সরকার তালিকাভুক্ত করেনি বলে ইমিগ্রেশন কর্তকর্তা বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করতে পারবেন না- এমন কোনো যুক্তিও এই মামলায় আসেনি।

রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি করতে গিয়ে বিচারক বাংলাদেশের রাজনীতি, বিএনপির লাগাতার হরতাল এবং হরতালকে কেন্দ্র করে পরিচালিত সন্ত্রাসী তৎপরতা সম্পর্কে নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। সম্প্রতি এই রায়ের লিখিত কপি প্রকাশ পেয়েছে।  
খবরদাতা সংবাদমাধ্যমটির হাতে রায়ের একটি কপিও রয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।

আবেদনকারী জুয়েলের রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন গ্রহণ করে ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল তাকে স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে প্রথম পর্যায়ের অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু পরের বছরের ১৬ মে কানাডায় প্রবেশের অযোগ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয় ‍তাকে।  

বিএনপির সদস্য হওয়ায় তাকে কানাডায় প্রবেশের অনোপযুক্ত হিসেবে ঘোষণা করে ইমিগ্রেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিএনপি সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত ছিলো, লিপ্ত আছে বা লিপ্ত হবে, এটি বিশ্বাস করার যৌক্তিক কারণ আছে।  

এই সিদ্ধান্তের পক্ষে  যুক্তি দিতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা কানাডার ক্রিমিনাল কোডের ধারা তুলে ধরে  বলেন, ‘বিএনপির ডাকা হরতাল বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। বিএনপি কর্মীদের হাতে মালামালের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও হতাহতের ঘটনা ঘটে। অতীতে কোনো কোনো ঘটনায় বিএনপির নেতৃত্ব নিজেদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছে এবং সন্ত্রাসী তৎপরতার নিন্দা করেছে। কিন্তু বিএনপির দাবি দাওয়া সরকারকে মানতে বাধ্য করতে লাগাতার হরতালের কারণে সৃষ্ট সহিংসতা প্রমাণ করে, এটি নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের বাইরে চলে গিয়েছে। ’

‘আমি মনে করি বিএনপির একজন কর্মী হিসেবে আবেদনকারী কানাডায় প্রবেশাধিকার পাওয়ার অনোপযুক্ত। কেননা এই দলটি সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত ছিলো, আছে বা ভবিষ্যতে লিপ্ত হবে- এমনটি ভাবার যৌক্তিক কারণ আছে। ’

বিচারক হেনরি এস  ব্রাউন বলেন, বিএনপি সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত ছিলো, আছে বা ভবিষ্যতে লিপ্ত হবে- ইমিগ্রেশন অফিসারের এই ভাবনা যৌক্তিক কিনা তা পর্যালোচনা করতে এই জুডিশিয়াল রিভিউর আবেদন করা হয়েছে । বিএনপি সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত ছিলো, আছে বা হবে’ তা বিশ্বাস করার যৌক্তিক কারণ আছে- এই মর্মে ইমিগ্রেশন অফিসার যে  সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, তা যৌক্তিক বলে আমি মনে করি। কানাডার আইনে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের যে সংজ্ঞা দেওয়া আছে তার আলোকে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই তিনি এই উপসংহারে পৌঁছেছেন।  

ইমিগ্রেশন অফিসারের সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে বিচারক বলেন, এই মামলায় রাজনৈতিক প্রতিবাদ হিসেবে বিএনপির হরতাল ডাকাকে বিবেচনায় নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট অফিসার। তিনি  সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এই ধরনের হরতাল ডাকার পেছনে সুনির্দিষ্ট একটি উদ্দেশ্য ছিলো এবং তা হচ্ছে বিশেষ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত করে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। এই হরতালে বিএনপি কর্মীদের দ্বারা অব্যাহত সন্ত্রাস সৃষ্টির ঘটনাও ঘটেছে। বিচারক বলেন, যে তথ্যপ্রমাণের ওপর ভিত্তি করে সংশ্লিষ্ট অফিসার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেসব তথ্যপ্রমাণই এই বক্তব্যের যথার্থতা প্রমাণ করে।

বিচারক তার মন্তব্যে বলেন, বিএনপি নেতৃত্ব হরতালে সহিংসতাকে নিরুৎসাহিত করেছে তার সামান্যই প্রমাণ পাওয়া যায়। কখনো কখনো তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নিন্দা করেছে। বাস্তবতা হচ্ছে সন্ত্রাসী কাজের জন্য সরাসরি তাদের দায়ী করার পরই তারা কোনো কোনো ঘটনার নিন্দা করেছে। মনে রাখতে হবে বিএনপি এখনো একটি বৈধ রাজনৈতিক দল। তারা পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাসী কাজের নির্দেশনা দিচ্ছে, সন্ত্রাসী কাজ করছে বা পরিকল্পিতভাবে অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে- এমন একটি ভাবমূর্তি তাদের স্বার্থের অনুকূলে নয়। কিন্তু তাদের লাগাতার হরতাল এবং হরতালে অব্যাহত সহিংসতা আমাকে যৌক্তিকভাবেই বিশ্বাস করতে বাধ্য করছে যে, তারা তাদের কর্মীদের সহিংসতা থেকে নিবৃত্ত করার উদ্যোগ না নিয়ে কৌশল হিসেবে হরতালে সহিংসতার নিন্দা করেছে। হরতালে সহিংসতাই এর সত্যতার প্রমাণ দেয়।

বিচারক বলেন, আবেদনকারীর বক্তব্য আমলে নিয়ে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা বাংলাদেশের রাজনীতিকে একটি ‘সহিংস বিষয়’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। এই অভিমতের সঙ্গে আমি একমত পোষন করি। আমার তথ্য হচ্ছে বিএনপি এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ উভয়েই জনগণ এবং সরকারকে প্রভাবিত করার জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে সহিংস কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। কিন্তু দু’টি রাজনৈতিক দলের পারস্পরিক অসদাচরণ বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচেনা থেকে দায়মুক্তি দেয় বলে আমি মনে করি না।  

তিনি বলেন, এই মামলায়ও ‘বিএনপি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন কিনা’ সেই প্রশ্ন বিবেচনায় এসেছে। উপস্থাপিত তথ্য-প্রমাণাদি অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে পুঙ্খানুপুঙ্খ  বিশ্লেষণের পর ‘বিএনপি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন’ এটি বিশ্বাস করার যৌক্তিক ভিত্তি আছে বলে আমি মনে করি। পর্যাপ্ত তথ্য উপাত্ত এবং সাক্ষ্য প্রমাণ পর্যালোচনায় সিদ্ধান্তদাতা অফিসারের বিশ্বাস করার যৌক্তিক কারণ আছে যে, বিএনপি হরতালের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কার্য পরিচালনা করেছে।

‘বিএনপি সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেয় না, ব্যক্তিগত পর্যায়ে সন্ত্রাস বা সহিংসতাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিয়েছে’- আবেদনকারীর এই বক্তব্য আদালত  বিবেচনায় না নিয়ে বলেন,  সরকারপক্ষ সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য দিয়েছেন যে, বিএনপি নেতৃত্ব একবারই সন্ত্রাসের নিন্দা করেছেন যখন বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানোর দায়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিএনপি তার কর্মীদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের নিন্দা করেছে, তার কোনো প্রমাণ এই আদালতের সামনে নেই।

‘বাংলাদেশের সব সন্ত্রাসীই বড় দু’টি দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তারা হয় আওয়ামী লীগ না হয় বিএনপি’- আবেদনকারীর এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিচারক বলেন, বিএনপি সন্ত্রাসী সংগঠন কিনা এই প্রশ্নে অফিসার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী সংগঠন কিনা- সেই প্রশ্ন বিবেচনার জন্য আদালতের সামনে প্রাসঙ্গিকতা নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৭
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।