ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ব্যাংকিং

প্রবাসী ভাইদের দাবি পূরণে সক্ষম হয়েছি: আফজাল করিম

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০২৩
প্রবাসী ভাইদের দাবি পূরণে সক্ষম হয়েছি: আফজাল করিম

ঢাকা: বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে সোনালী ব্যাংকের একটি বিশেষ সক্ষমতার কথা জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আফজাল করিম। বিদেশে বসে সোনালী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট পরিচালনা ও লেনদেন করার দাবি ছিল প্রবাসীদের।

সেটি ব্যাংক করতে সক্ষম হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

আফজাল বলেন, প্রবাসী ভাইদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল বিদেশে বসে সোনালী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট পরিচালনা ও লেনদেন করার। রেমিট্যান্স পাঠাতে তাদের অবদানের কথা বিবেচনা করে আমরা করতে সমর্থ হয়েছি। তারা এখন বিদেশে বসেই দেশের ব্যাংকের সাথে লেনদেন করছেন।

তিনি বলেন, সোনালী ব্যাংকে সব সময় আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি ছিল। প্রথমবারের মতো আমরা নেট ইন্টারেস্ট মার্জিন পজিটিভ করতে সক্ষম হয়েছি। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে নিট ইন্টারেস্ট মার্জিন নেগেটিভ ছিল ৯৭৯ কোটি টাকা। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে এটা ওভারকাম করে নিট ইন্টারেস্ট মার্জিন পজিটিভ হয়েছে ৩৩৩ কোটি টাকা। ব্যাংক খাতের বড় চ্যালেঞ্জ খেলাপি ঋণ। এক বছরে এটা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নিয়ে আসতে পেরেছি। এটাই আমাদের বড় সাফল্য। একই সঙ্গে খেলাপি ঋণ যাতে না বাড়ে সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।

সোনালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে এ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ছিল প্রায় ৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে তা কমে ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। এক বছরে মূলধন ঘাটতি ২ হাজার কোটি টাকা কমাতে সক্ষম হয়েছি। এটা অর্জন হয়েছে খেলাপি ঋণ কমাতে পেরেছি বলেই।

ব্যাকের সিইও আরও বলেন, সরকারের লক্ষ্য ডিজিটাল বাংলাদেশ। আমরা এ লক্ষ্য ইতোমধ্যে অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের ব্যাংককেও ডিজিটাল করতে পেরেছি। আগামী দিনের স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট ব্যাংক ব্যবস্থার জন্য সোনালী ব্যাংক অটোমেশনের কাজ চলমান। ইতোমধ্যে আমরা কিউআর কোডের মাধ্যমে গ্রাহককে টাকা তোলার সুযোগ করে দিয়েছি। চেকের বিকল্প কিউআর কোড স্ক্যান করে সোনালী ব্যাংকের যেকোনো শাখা থেকে তাৎক্ষণিক টাকা উত্তোলন করতে পারছেন গ্রাহক।

বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্সের জন্য আবেদন আহ্বান করেছে। আমরা আবেদন করব। এ ছাড়াও আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলা কিউআর কোডের কমন গেটওয়েতেও যুক্ত হয়েছি। কিউআর কোড স্ক্যান করে যেকোনো আউটলেট থেকে কেনাকাটার পেমেন্ট করা যাচ্ছে। টাকা ট্রান্সফার, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ ও মোবাইল ব্যাংকে টাকা ট্রান্সফার করতে পারছেন গ্রাহকরা।

আফজাল করিম বলেন, আমরা গ্রাহকবান্ধব সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি আমরা কল সেন্টার চালু করেছি। যা সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রথম। দেশ-বিদেশ থেকে ১৬৬৩৯ নম্বরে কল করে যেকোনো সময় গ্রাহক সেবা পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের লক্ষ্য জনবান্ধব ব্যাংক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন। আগামী দিনের স্মার্ট ব্যাংক করার জন্য যা যা দরকার সবই করছি আমরা। সোনালী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা এ বছর সর্বোচ্চ হয়েছে। চলতি বছরের শেষে পরিচালন মুনাফা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৮ শতাংশ বেশি।

তিনি আরও বলেন, সামগ্রিকভাবে আমাদের ব্যাংকের যে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে, আগামী দিনেও তা অব্যাহত রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় অনেক কর্মসূচি আছে। এর ৩৭টি সেবা সোনালী ব্যাংক বিনামূল্যে দিচ্ছে। এর সুবিধা পাচ্ছে দেশের প্রান্তিক জনগণ।

সোনালী ব্যাংকের এমডি আফজাল করিম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কৃষি ঋণ বিতরণের জন্য আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়, শতভাগ বিতরণ করি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সোনালী ব্যাংকের যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল। আমরা তার চেয়ে বেশি, ১০২ শতাংশ অর্জন করেছি। ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে আমরা চলতি বছর সারা দেশে ১০০টি উপশাখা চালু করবো। কম সংখ্যক জনবল দিয়ে সবধরনের ব্যাংকিং সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে ব্যাংকের পরিচালন ব্যয়ও অনেক কম হবে। এটা অনেক বেশি কার্যকরী হবে।

৫৮টি শাখার মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। এটা পর্যায়ক্রমে অন্য শাখাগুলোতেও চালু করা হবে। তিনি বলেন, সরকারের সর্বজনীন পেনশন কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সোনালী ব্যাংক। এর চারটি স্কিমে যারা যুক্ত হতে চান, তারা ইউপেনশন ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করার পর ইউনিক আইডি পাবেন। সেই ইউনিক আইডি দিয়ে তার টাকা জমা দিতে পারবেন। সোনালী ব্যাংকের গ্রাহকরা অনলাইনে সোনালী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা ট্রান্সফার করে জমা দিতে পারবেন। অন্য ব্যাংকের গ্রাহকরা ডেবিট কার্ড ও মোবাইল ব্যাংকের মাধ্যমে মাসিক কিস্তির টাকা জমা দিতে পারবেন।

কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি। কর্মসংস্থানের বড় খাত কৃষি। খাদ্য নিরাপত্তা দিচ্ছে কৃষি। কৃষিতে ব্যাংকিং খাত ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ করছে। সোনালী ব্যাংকের মোট ঋণের ২ শতাংশের বেশি কৃষিতে বিতরণ করছে। দেশব্যাপী নিদর্শন নেটওয়ার্ক থাকায় নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। যা কৃষি খাতে উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন সোনালী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০২৩
জেডএ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।