ঢাকা: দেশের ৪টি বড় সেতুর টোল আদায়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অনিয়মের ফলে সরকার রাজস্ব হারাবে প্রায় ৫০ কোটি টাকা।
এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের কথা তুলে ধরে সোমবার দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব সেতু, নারায়ণগঞ্জের কাঞ্চন সেতু, নরসিংদীর ঘোড়াশাল সেতু ও চট্টগ্রামের তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর টোল আদায়কারী প্রতিষ্ঠান নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সেতু চারটির কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে টোল আদায় ও অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স (ওএন্ডএম) কাজের দরপত্র দেয়ার ক্ষেত্রে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (পিপিআর) ও সরকারের নিয়ম-নীতি মানা হয়নি। এতে সরকারের প্রায় ৫০ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হবে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, সড়ক ও জনপদ (সওজ) অধিদপ্তরের অসাধু কর্মকর্তারা বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে অবৈধভাবে টোল আদায়কারী প্রতিষ্ঠান নিয়োগের প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শেষ করছেন। এ ব্যাপারে যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের অনুমোদন পেলেই চূড়ান্ত কার্যাদেশ দেয়া হবে।
অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, ভৈরব, ঘোড়াশাল ও কাঞ্চন সেতুর টোল আদায়ের জন্য চলতি বছরের ১৪ আগস্ট গোপনে দরপত্র আহ্বান করা হয়।
সাধারণ ঠিকাদাররা যাতে ৭০ কোটি টাকার এ কাজের টেন্ডারের তথ্য জানতে না পারেন সেজন্য অখ্যাত পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে।
এ কাজের টেন্ডার দাখিলের শেষ সময় ছিল ২৫ আগস্ট। সরকারি ছুটি বাদ দিলে মাত্র ৮ কার্যদিবস দরপত্র কেনা ও জমা দেওয়ার সময় দেয়া হয়।
অভিযোগে আরো দেখানো হয় প্রাক টেন্ডার মিটিং-এর ঘরেও কোনো তারিখ ও সময় ছিল না। শুধু তাই নয় টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবার পর তা সিপিটিইউ ও ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এর ফলে অধিকাংশ পেশাদার ঠিকাদার বিষয়টি জানতে পারেননি। এছাড়া এসব কাজের ব্যয় অনেক বাড়িয়ে দেয়া হয়।
রেজা কনস্ট্রাকশনকে গত অর্থ বছরে ভৈরব সেতুর টোল আদায়ের কাজ ৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা দেয়া হলেও এবার একই কাজ দেওয়া হচ্ছে ৩৬ কোটি টাকায়।
একইভাবে এম, এম, বিল্ডার্সকে ঘোড়াশালকে সেতুর কাজ ৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকায় দেওয়া হলেও এবার এই কাজ দেওয়া হচ্ছে ১৮ কোটি টাকায়। একই সাথে কাঞ্চন ব্রীজের ক্ষেত্রে শতকরা তিনশ ভাগ বেশি দরে কাজ দেয়া হচ্ছে।
নরসিংদী-৫ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ার আশরাফ খান এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের কথা জানতে পারেন। পরে তিনি, তার নির্বাচনী এলাকায় অবস্থিত ঘোড়াশাল সেতুর টোল আদায়ের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের কাছে নিজের প্যাডে একটি ডিও লেটার দেন। তিনি সরকারি নিয়ম অনুযায়ী স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ঠিকাদার নিয়োগের অনুরোধ জানান।
একইভাবে ৩য় কর্ণফুলী সেতুর টেন্ডার দেয়া হয়েছে। সেতুর প্রকল্প পরিচালক গত ১০ জুলাই টোল আদায়ের দরপত্র আহ্বারন করেন। উক্ত কাজের দরপত্র কেনা ও জমা দেয়ার শেষ দিন ছিল গত ২১ জুলাই। এত বড় কাজের জন্য দরপত্র দাখিলের সময় দেয়া হয় মাত্র ১৯ কার্যদিবস, যা সম্পূর্ণ পিপিআর বহির্ভূত। এছাড়া দরপত্রে বিদেশি প্রতিষ্ঠানদের সঙ্গে রাখার সুযোগ দেয়া হয়নি।
এরই ধারাবাহিকতা বর্তমানে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করা হচ্ছে। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কিছু মাফিয়া ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের যোগসাজোগে অবৈধ প্রক্রিয়া এসব সেতুর টেন্ডার করায় সরকার অন্তত ৫০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, সেতু চারটি টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি জানতে পেরে সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী ও বর্তমান যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ওই সব কাজের অনুমোদন দেননি।
তিনি সওজ’র প্রধান প্রকৌশলী আবদুল কুদ্দুসকে সরকারি নিয়ম মেনে আবারও দরপত্র আহ্বানের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে তৃতীয় কর্নফুলী সেতুর অনিয়ম তদন্তের নির্দেশও দেন।
এর প্রেক্ষিতে কুমিল্লা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সওজ) রাজ খানকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটি তৃতীয় কর্নফুলী সেতুর টেন্ডার প্রক্রিয়ার অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত করছে। তবে ভৈরব, ঘোড়াশাল ও কাঞ্চন সেতুর অনিয়মের বিষয়ে কোনো তদন্ত ছাড়াই কার্যাদেশ দেয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হচ্ছে।
এ অবস্থায় বর্তমান যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের অনুমোদন নিয়ে শিগগিরই কার্যাদেশ দেয়া হচ্ছে। অভিযোগে সড়ক বিভাগের এসব দুর্নীতি অনুসন্ধানের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে কুমিল্লা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সওজ) রাজ খান ও সওজ’র প্রধান প্রকৌশলী আবদুল কুদ্দুসের মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তারা ফোন রিসিভ করেন নি।
বাংলাদেশ সময়: ২৩২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১২