ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

বিমানবাহিনীর দখলে যাচ্ছে বেবিচক

ইশতিয়াক হুসাইন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১১
বিমানবাহিনীর দখলে যাচ্ছে বেবিচক

ঢাকা: একটি বা দুটি নয়, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সব পরিচালক পদে বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।

অথচ ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন(আইসিএও) এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রিশন (এফএএ) বেবিচকে সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তাদের নিয়োগ না দেওয়ার জন্য বলেছে।

 

বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের বেবিচকের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নিয়োগ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রেখেই প্রণীত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের নতুন অর্গানোগ্রাম। প্রস্তাবিত এ অর্গানোগ্রাম চূড়ান্ত হলে বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, মেম্বার (প্রশাসন), মেম্বার (অপারেশন এন্ড প্ল্যানিং), পরিচালক (প্রশাসন), পরিচালক (ফ্লাইট সেফটি এন্ড রেগুলেশনস), পরিচালক (এয়ার ট্রাফিক সার্ভিসেস-এটিএস), পরিচালক (প্ল্যানিং এন্ড ট্রেনিং), পরিচালক (সিইএমএসইউ), পরিচালক (সিভিল এভিয়েশন ট্রেনিং সেন্টার-সিএটিসি) ও পরিচালক (শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর) পদে বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে হবে। এর মধ্যে মেম্বার (ফিন্যান্স) ও পরিচালক (ফিন্যান্স) পদটি বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি।  

এতদিন পর্যন্ত বেবিচকের মেম্বার (অপারেশন এন্ড প্ল্যানিং) ও পরিচালক (ফ্লাইট সেফটি এন্ড রেগুলেশনস) পদে বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের নিয়োগ দানের বাধ্যবাধ্যকতা ছিল। এতদিন বেচিকের চেয়ারম্যানসহ অন্যসব গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়ার বিধান ছিল না। এরপরও সংস্থাটির চেয়ারম্যান পদে ১৯৮২ সাল থেকেই বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিয়ে আসছে সরকার।  

স্বাধীনতার পর বিশ্বের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন(আইসিএও) বাংলাদেশের ডিপার্টমেন্ট অব সিভিল এভিয়েশন (ডিসিএ) ও এয়ারপোর্টস ডেভলপমেন্ট এজেন্সী (এডিএ)কে একীভূত করার সুপারিশ করে। এরই প্রেক্ষাপটে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অর্ডিন্যান্স ১৯৮২ -এ পরিবর্তন এনে ১৯৯৮৫ সাল থেকে বেবিচকের যাত্রা শুরু হয়।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে বেবিচকের মেম্বার (অপারেশন এন্ড প্ল্যানিং) ও পরিচালক (ফ্লাইট সেফটি এন্ড রেগুলেশনস) পদে বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের নিয়োগ দানের বিধান করা হয়েছিল। এরপর বিএনপি ও আওয়ামী লীগে তিনবারে ১৫ বছর এবং সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছর দেশ শাসন করেছে। কিন্তু কেউ মেম্বার অপারেশন এন্ড প্ল্যানিং বাদে কোনো পদে নতুন করে বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের ডেপুটেশনে বেবিচকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য আইন প্রণয়ন করেনি।

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার বেসামরিক এই সংস্থাটিতে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগ দানের বাধ্যবাধকতা রেখে সামরিকীকরণ করার উদ্যোগ নিয়েছে।  

ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন(আইসিএও) এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রিশন (এফএএ) বেবিচককে তাদের সংস্থায় দক্ষ, প্রশিক্ষিত ও পেশাদার লোকদের নিয়োগ দেওয়ার আহবান জানিয়েছে। প্রকারান্তরে তারা সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের এ সংস্থাটিতে নিয়োগ দেওয়াকে নিরুৎসাহিত করেছে। তারা এও বলেছে, সশস্ত্র বাহিনী থেকে যদি কাউকে নিয়োগ দেওয়া হবে তবে তা যেন দীর্ঘ সময়ের জন্য হয়। আর যদি এ ধরনের কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয় তবে ঘনঘন যেন তাদের বদলি না করা হয়।

একইভাবে ইউরোপ মহাদেশের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউরোপীয়ান এভিয়েশন সেফটি এজেন্সী(ইএএসএ) প্রশিক্ষিত ও পেশাদার লোকদের দিয়ে বেবিচক পরিচালনা করার নির্দেশনা দিয়েছে।
 
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বেবিচকের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হলেও তা খুব অল্প সময়ের জন্য হয়েছে। আবার কেউবা বিমান চলাচল বিষয়ে অভিজ্ঞতা কিছুটা অর্জন করেছে এর পরপরই তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
 
বেবিচকের এক কর্মর্কতা নাম প্রকাশ না করে বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্বের সব দেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক সব সংস্থাসমূহ সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে বেবিচকে নিয়োগ দেওয়ার আহবান জানিয়েছে। অথচ বাংলাদেশ এখন উল্টো পথে হাঁটছে। এভাবে আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের নির্দেশনা অমান্য করা হলে এর পরিণতি বাংলাদেশের জন্য কখনোই ভালো হবে না।

বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞ ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য কাজী ওয়াহিদুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের নির্দেশণা অনুসারে সংস্থাটির ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।  

এ ব্যাপারে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার কমোডর মাহমুদ হোসেন ও মেম্বার (অপারেশন এন্ড প্ল্যানিং) গ্রুপ ক্যাপ্টেন সায়েদুল হাসানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও কেউই ফোন ধরেননি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৮ ঘন্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১১ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।