ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

বোয়িং ৭৭৭ দিয়ে বিমানকে লাভজনক করা কঠিন!

ইশতিয়াক হুসাইন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১১
বোয়িং ৭৭৭ দিয়ে বিমানকে লাভজনক করা কঠিন!

ঢাকা: সদ্য কেনা বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজ দিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে লাভজনক করা কঠিন হবে। উড়োজাহাজের নতুন আসন বিন্যাসের কারণেই বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞরা এই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।



বিমান চলাচলের ব্যবসায়িক হিসাবে, ফ্লাইটপ্রতি খরচের দুই-তৃতীয়াংশ অর্থ উঠে আসবে ফার্স্ট ক্লাস ও বিজনেস ক্লাসের আসন থেকে। কিন্তু বিমান বোয়িংয়ের যে আসন বিন্যাস করেছে তাতে বিজনেস ক্লাসের আসন রয়েছে মাত্র ৩৫টি। এই আসন বিন্যাস দিয়ে বিমানের পক্ষে খরচের টাকা তুলে লাভজনক করা কঠিনই হবে।  

অথচ বোয়িংয়ের একই ধরনের উড়োজাহাজে এমিরেটস ও সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের আসন বিন্যাস তুলনা করে দেখা গেছে, দুটি এয়ারলাইন্সের ফার্স্ট ক্লাস ও বিজনেস ক্লাসের আসন সংখ্যা কারোরই ৬০টি আসনের কম নয়। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ কমবেশি ৬৭টি আসন আর এমিরেটসের ৬০টি। সেখানে বিমানের আসন সংখ্যা মাত্র ৩৫টি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের সব নামিদামি এয়ারলাইন্স বিজনেস ক্লাস ও ফার্স্ট ক্লাসের আসন থেকেই উড়োজাহাজের পরিচালনা ব্যয় তুলে আনে।

তবে বিশেষজ্ঞরাও একই সঙ্গে এটাও বলছেন, যদি ইকোনমি ক্লাসের আসন পূর্ণ থাকে সেক্ষেত্রে বিজনেস ক্লাসের আসন সংখ্যা কম থাকলেও সমস্যা হবে না।

বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞ এয়ার কমোডর (অব.) ইকবাল হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন,`বাংলাদেশ বিমানের জন্য ফার্স্ট ক্লাস আসন না রাখাটা নেতিবাচক নয়। তবে বিজনেস ক্লাসের আসন সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারতো। `

তবে তিনি এও বলেন, ইকোনমি ক্লাসের আসনে যাত্রী পূর্ণ থাকলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সুযোগ কম। সেক্ষেত্রে লাভও করা সম্ভব।

বিমানের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে এ বাংলানিউজকে বলেন, ‘কোনোভাবেই এই আসন বিন্যাস দিয়ে লাভ তুলে আনা যাবে না। যদি একক ক্ষমতা পেতাম তাহলে এই আসন বিন্যাস আমি কখনোই অনুমোদন করতাম না। `

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ২০০৮ সালে বোয়িংয়ের সঙ্গে যখন চুক্তি হয় তখন বিমান প্রথমে ৪৬৩টি আসন রেখেই আসন বিন্যাস করেছিল। পরবর্তীতে এই আসন বিন্যাসে পরিবর্তন আনা হয়। বর্তমানে বোয়িংয়ের ৭৭৭-৩০০ ইআর এর মোট আসন রয়েছে ৪১৯টি। এর মধ্যে বিজনেস ক্লাসের আসন সংখ্যা ৩৫টি। বাকি ৩৮৪টি আসন ইকোনমি ক্লাসের।  

বোয়িংয়ের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, বোয়িং ৭৭৭-৩০০ এর একটি উড়োজাহাজের দাম পড়েছে প্রায় ১১‘শ কোটি টাকা। এ ধরনের আরো তিনটি উড়োজাহাজ বিমানের বহরে যুক্ত হবে। সবমিলিয়ে বিমান মোট ১০টি উড়োজাহাজের অর্ডার দিয়েছে। এজন্য প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। এই উড়োজাহাজের টাকা পরিশোধ করতে বিমান দেশীয় ১০টি ব্যাংক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকার সিন্ডিকেট ঋণ নিয়েছে। আর বাকি টাকা ঋণ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিম ব্যাংক ও জেপি মরগ্যান থেকে। ঋণ বাবদ বিমানকে প্রতি মাসে ২০ কোটি টাকা দিতে হবে।  

এমনিতেই বিমান গত অর্থ বছরে লোকসান দিয়েছে ১৯৫ কোটি টাকা। এর আগের বছর লোকসান দিয়েছিল ৮০ কোটি টাকা। তার ওপর বিমানের দেনা আছে ২০০ কোটি টাকা। এর ওপর যদি খরচের টাকা তুলে ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে হবে বিমানকে যথেষ্ঠ বেগ পেতে হবে।  

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাকিউল ইসলাম নিজেও কিছুটা সংশয় প্রকাশ করে বলেন, `ব্যবসার মাধ্যমে অর্থ আয় করতে হবে এবং ঋণ পরিশোধ করতে হবে। আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে এই অর্থ পরিশোধের চেষ্টা করা হবে। `          

বাংলাদেশ সময়: ২১০৬ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।