চট্টগ্রাম: গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং। ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ না থাকায় অসহনীয় হয়ে উঠেছে জনজীবন।
ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে একদিকে শিল্প কারখানায় যেমন উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে- অন্যদিকে অফিস আদালত ও বাসা-বাড়িতে মানুষের স্বাভবিক কাজ-কর্মও ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকায় ওয়াসার পানি উত্তোলন ও সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে।
আগের তুলনায় লোডশেডিং বৃদ্ধি পাওয়ার কথা স্বীকার করে পিডিবি চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, ঈদের পর বিদ্যুৎ পরিস্থিতি অনেকটা ভালো ছিল। গত কয়েকদিনে লোডশেডিং কিছুটা বেড়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রামে গড়ে ২০০ থেকে ২১০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে।
মঙ্গলবার রাতে ২০৬ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয় বলে তিনি জানান। পিডিবির এই কর্মকর্তা আরো জানান, চট্টগ্রামে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র গুলোর মধ্যে রাউজান ১ নম্বর ইউনিট ছাড়া সবগুলো বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ থাকায় এবং জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ কমে যাওয়ায় লোডশেডিং বেড়েছে।
এদিকে দিনের বেলায় লোডশেডিং কিছুটা কম থাকলেও সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় লোডশেডিং যন্ত্রণা। এ প্রসঙ্গে নগরীর আশকারদীঘি পাড়ের গৃহবধু মৌমিতা সেনগুপ্ত বাংলানিউজকে বলেন, দিনে-রাতে কয়েকবার লোডশেডিং হয়।
একবার বিদ্যুৎ চলে গেলে কখনো দুই ঘন্টায়ও আসেনা। এমনকি রাত ২টার সময়ও বিদ্যুৎ চলে যায়। ফলে গরমে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়।
হালিশহর আই ব্লকের বাসিন্দা ইকবাল বাংলানিউজকে বলেন, সন্ধ্যা নামলে বিদ্যুতের আসা-যাওয়া চলতে থাকে। একবার আসে তো ২০ মিনিট পর আবার চলে যায়। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর বিকেল ৪টায় আসে।
লোডশেডিং যন্ত্রনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পের প্রিন্টেড এক্সেসরিজ আইটেমের প্রোপাইটর চেরাগী মোড়ের কালার স্প্রিনের মালিক রঞ্জন সাহা বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্যুৎ তো এখন যায়না- আসে।
অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, ৩ ঘন্টা পর বিদ্যুৎ আসলেও একঘন্টা থাকেনা। ফলে শিপমেন্ট ঠিক রাখার জন্য জেনারেটর দিয়ে উৎপাদন সচল রাখতে হয়। এজন্য জেনারেটর দিয়ে দৈনিক তেল খরচ ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা ব্যয় হয়।
দীর্ঘক্ষণ পর বিদ্যুৎ এসে পুনরায় চলে যাওয়া প্রসঙ্গে পিডিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, এটা অনেক সময় টেকনিক্যাল ফল্টের কারণে হয় বা জাতীয় গ্রিড ফল করলে হয়।
পিডিবি জানিয়েছেন, বুধবার দিনে কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চারটি ইউনিট থেকে ১৬৮ মেগাওয়াট, রাউজান তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১ নম্বর ইউনিট থেকে ১৩০ মেগাওয়াট এবং বেসরকারী ভাড়া ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র শিকলবাহা রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে ১৬ মেগাওয়াট, বাড়বকুন্ডের রিজেন্ট পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে ১৯ মেগাওয়াট ও মালঞ্চ থেকে ৩ মেগাওয়াটসহ স্থানীয়ভাবে মোট ৩৩৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। এছাড়া জাতীয় গ্রীড থেকে পাওয়া গেছে ১৪৪ মেগওয়াট।
উল্লেখ্য, চট্টগামে পিডিবির বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে রাউজানের ১ নম্বর ইউনিট চালু থাকলেও যান্ত্রিক ক্রুটির কারণে দীর্ঘ ছয় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে রাউজানের ২ নম্বর ইউনিট। মেরামত শেষে গত আগস্ট মাসে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি উৎপাদনে আসার কথা থাকলেও এখনো মেরামত শেষ হয়নি বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে গ্যাসের অভাবে বন্ধ রয়েছে শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াটের পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট ও শিকলবাহা ৬০ মেগাওয়াট।
এদিকে চলতি মাসেই দুটি সরকারী ও একটি বেসরকারীসহ ৩০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন মোট তিনটি পাওয়ার প্ল্যান্টের উৎপাদনে আসার কথা ছিল। কিন্তু সেটাও অনিশ্চিত বলে জানা গেছে ।
ফলে নভেম্বরের আগে চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি উন্নতির সম্ভাবনা কম বলে জানিয়েছেন পিডিবি কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১১