ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

দেশেও একই কাণ্ড!

মাগুরার আজাদই কানাডা কেলেংকারীর নায়ক মনজুর

রূপক আইচ, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১১
মাগুরার আজাদই কানাডা কেলেংকারীর নায়ক মনজুর

মাগুরা: মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপাজেলার তারাউজিয়াল গ্রামেও রহস্যপুরুষ কানাডায় অ্যাপার্টমেন্ট ব্যবসার আড়ালে প্রতারণার মাধ্যমে ২ কোটি ডলার হাতিয়ে নেওয়া আলোচিত বাংলাদেশি ব্যবসায়ী মনজুর মোরশেদ খান। তার বিরুদ্ধে এলাকায়ও রয়েছে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ।



অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনে তার রয়েছে ব্যাপক প্রভাব। যার ফলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়না পুলিশ।
     
গত কয়েকদিন ধরে বাংলানিউজসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে কানাডার ‘টরেন্টো স্টার’ পত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়ে মনজুর মোরশেদের ছবিসহ সংবাদ প্রকাশের পর তাকে নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ও গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়েছে।

রোববার সকালে তার তারাউজিয়াল গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে- নিজ গ্রামে তিনি দু’টি বিশাল অট্টালিকা ও কারুকার্যখচিত মসজিদ করেছেন। তার মধ্যে একটি বিলাসবহুল অট্টালিকার কাজ সম্পন্ন হলেও মসজিদ ও অন্য বাড়িটির কাজ এখনো চলছে।

তবে তাকে বাড়িতে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাওয়া যায়নি কোনও স্বজনের দেখাও। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, সপ্তাহ খানেক আগেও তাকে এলাকায় দেখা গেছে।

তার সম্পর্কে এলাকায় খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, তারাউজিয়াল গ্রামের সৈয়দ আসাদুল আজমের ছেলে সৈয়দ মনজুর মোরশেদ এলাকায় আজাদ নামে পরিচিত। তিনি স্থানীয় স্কুল থেকে এসএসসি ও শ্রীপুর কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। তবে পরবর্তীতে বিদেশ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছিলেন বলে তিনি এলাকাবাসীকে জানিয়েছেন।

তার বাড়িতে কাজ করা শ্রমিক সর্দার লুৎফর রহমান জানান- তিনি ৩০জন শ্রমিক নিয়ে গত প্রায় এক বছর ধরে মনজুরের তিনতলা বিশিষ্ট বিলাসবহুল রাজকীয় বাড়িটি নির্মাণের কাজ করছেন। এর আগেও আরও একটি বিলাসবহুল অট্টালিকা তৈরির কাজ শেষ করেছেন এই শ্রমিকরাই।

গ্রামের মাঝে বিশাল অট্টলিকা তৈরি, অস্বাভাবিক দান-অনুদান, কারুকার্যখচিত মসজিদ নির্মাণ সেই সঙ্গে কানাডায় ২ কোটি ডলার হাতিয়ে নেওয়ার খবরে এলাকায় মনজুর মোর্শেদ খানকে নিয়ে এখন এলাকার সর্বত্র চলছে মুখরোচক আলোচনা। একইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে পাওয়া যাচ্ছে নানা অভিযোগও।
  
‘৮৪ সালে ৮৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে দেশ ছাড়েন
প্রতিবেশী আকিদুল ইসলামসহ আরো অনেকে বাংলানিউজকে বলেন, ‘কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নিজ গ্রাম তারাউজিয়ালে বিশাল বিশাল অট্টালিকা তৈরি ও  লাখ লখ টাকা দান খয়রাত ও মসজিদ-মাদ্রাসায় অনুদান প্রদানের মাধ্যমে মনজুর মোরশেদ এলাকায় রহস্যপুরুষ হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। ’

তারাউজিয়াল গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম রাজা অভিযোগ করে বাংলানিউজকে বলেন, ‘৫৫০ জন বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগের জন্য ১৯৮৪ সালে মনজুর মোরশেদ খানের মালিকানাধীন অ্যারাবিয়ান বসুন্ধরা এক্সপ্রেস লিমিটেড কোম্পানির সঙ্গে আমার চুক্তি হয়। আমি ৫৫০ জন শ্রমিককে মনজুর মোরশেদের মাধ্যমে বিদেশে পাঠানোর চেষ্টা করি। কিন্তু মনজুর মোরশেদ তাদেরকে না পাঠিয়ে সেসময় ৪লাখ ১৫ হাজার সৌদি রিয়াল (ওই সময়ের বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮৩ লাখ টাকা) আত্মসাৎ করে পালিয়ে যান। ’

থানা পুলিশ মামলা না নিয়ে ফিরিয়ে দেয়
রাজা আরও বলেন, ‘পরবর্তীতে এ বিষয়ে জনশক্তি মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দায়ের করলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জায়গায় তার খোঁজ-খবর করা হয়। এরই একপর্যায়ে তিনি ভারতে গিয়ে আত্মগোপন করেন। এ খবর পেয়ে আমি পাওনা টাকা আদায়ের জন্যে ভারতে গেলে তিনি আমাকে হত্যার চেষ্টা চালান। পরবর্তীতে ভারতে অবস্থানকালেও তিনি অ্যাপার্টমেন্ট ব্যবসার নামে অসংখ্য মানুষের টাকা লুটে সৌদি ও দুবাইয়ে আশ্রয় নেন। সেখানেও নানা অপকর্ম করে শেষে কানাডায় পাড়ি জমান। তার কারণে আমি আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। এ বছর রোজার সময় মনজুর মোরশেদ দেশে ফিরে আসার পর আমি পাওনা ৮৩ লাখ টাকা আদায়ের জন্যে শ্রীপুর থানায় মামলা করতে গেলে থানা পুলিশ মামলা না নিয়ে আমাকে ফিরিয়ে দেয়। ’
 
এর বেশি তেমন কিছুই জানি না!
মনজুর মোরশেদ খান সম্পর্কে শ্রীপুর থানায় খোঁজ নিতে গেলে উ-পরিদর্মক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম জানান- ‘সম্প্রতি তিনি একটি পিস্তল (ব্রাজিলের তৈরি .৩২ বোরের) ও একটি শটগানের লাইসেন্স পেয়েছেন। ৫/৭ দিন আগে এ বিষয়টি এন্ট্রি করতে তিনি থানায় এসেছিলেন। এর বেশি আমরা তেমন কিছুই জানি না। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪১ ঘণ্টা,  সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।