ঢাকা: জর্দানের একটি পোশাক কারখানায় বাংলাদেশের এক নারী কর্মীকে ধর্ষণের ঘটনার জেরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জর্দানের তৈরি পোশাক রপ্তানি বন্ধের উপক্রম হয়েছে। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান ‘ক্লাসিক ফ্যাশন অ্যাপারেলস’ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান গত মাস থেকে পণ্য কেনা বন্ধ রেখেছে।
ভারতীয় ও শ্রীলঙ্কান যৌথ বিনিয়োগের ক্লাসিক ফ্যাশন অ্যাপারেল জর্দানের সবচেয়ে বড় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠান। জর্দানের রপ্তানি করা তৈরি পোশাকের ১৩ শতাংশই এ প্রতিষ্ঠানের। ২০১০ সালে তারা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ১২৫ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। ওয়ালমার্ট, হ্যানস, ম্যাসি, কোহ্ল, ল্যান্ডস এন্ডের মতো প্রসিদ্ধ ব্রান্ডগুলো এ প্রতিষ্ঠানের ক্রেতা।
ধর্ষণের ওই ঘটনা জর্দানের প্রচার মাধ্যমসহ পোশাক আমদানি-রপ্তানি সম্পর্কিত সংবাদ মাধ্যমগুলোতে কিছুদিন ধরেই ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে।
জর্দানে বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, বিষয়টি সম্পর্কে তারাও অবগত বলে বাংলানিউজকে জানানো হয়।
দূতাবাসের ওই কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘ওই পোশাক কারখানার ব্যবস্থাপক অনীল সানতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশি ওই নারী কর্মীকে কয়েকদফা ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়। ওই ব্যবস্থাপক শ্রীলঙ্কার নাগরিক। ’
‘বিষয়টি নিয়ে গত কয়েক মাসে কয়েক দফা বিভিন্নভাবে তদন্ত করা হয়েছে। অভিযোগের ভিডিও ফুটেজ ও বিবরণীও প্রকাশ পেয়েছে’, জানান ওই দূতাবাস কর্মকর্তা।
ওই কারখানার ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা না নেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের স্বনামধন্য ক্রেতারা এরই মধ্যে বিষয়টির ব্যাপক সমালোচনা করেছেন বলেও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বার্তা সংস্থা এপির শুক্রবার প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা কোহল, ম্যাসি ও ল্যান্ডস’এন্ড এরই মধ্যে ক্লাসিক ফ্যাশন অ্যাপারেলস থেকে পণ্য কেনা বন্ধ করে দিয়েছে।
যদিও এ ব্যাপারে ক্লাসিক ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সানাল কুমার বলেন, ‘ওই কোম্পানিগুলো পণ্য কেনা বন্ধ করেনি। বড় রপ্তানি চালানের পর কিছুদিন রপ্তানি বন্ধ আছে। ’
তার প্রতিষ্ঠানসহ জর্দানের তৈরি পোশাক রপ্তানির বিরুদ্ধে ইসরায়েল ষড়যন্ত্র করছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, ‘ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল লেবার অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস নামের একটি এনজিওকে দিয়ে অশান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে। ’
বাংলাদেশ দূতাবাসের ওই কর্মকর্তা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে বাংলানিউজকে জানান, ২৭ বছর বয়সী একজন বাংলাদেশি কর্মী ধর্ষণের অভিযোগ করেন। বিষয়টি সম্পর্কে তদন্ত দলের কাছে তিনি বলেছেন, ওই ব্যবস্থাপক কারখানার ভেতরেই একটি কক্ষে তাকে কয়েক দফা ধর্ষণ করেছেন।
তদন্ত দল আরও জানতে পারে, ওই ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে এর আগেও এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়। নারীকর্মীরা অভিযোগ দিলে ব্যবস্থাপক তাদের চাকরি থেকে বরখাস্তসহ বেতন কাটা, অতিরিক্ত কাজ করানোসহ শারীরিক নির্যাতনের মতো কাজও করতেন।
কর্মীদের অভিযোগ, এতো কিছুর পরও ৪৬ বছর বয়সী শ্রীলঙ্কার নাগরিক অনীল সানতার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয় না গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল লেবার অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস জানায়, গত ২০০৭ সাল থেকে ক্লাসিকের কারখানায় প্রায় ৩০০ নারী কর্মী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। যা কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হলেও প্রতিকার হয়নি।
জর্দানের শ্রমিক সংগঠনের নেতা শামির মাকদাহ সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘শ্রীলঙ্কার ওই নাগরিকের অপকর্মের দায়ে জর্দানের রপ্তানি কেন প্রভাবিত হবে? তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। ’
বাংলাদেশি ওই নারীকর্মীর অভিযোগের বিবরণী পড়তে ক্লিক করুন:
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১১