ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দুই সমন্বয়কারীর একজন হলেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। মনমোহন সিংয়ের সফরে ট্রানজিট ও তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে গত কয়েকমাস ধরেই সরব ছিলেন তিনি।
উইকিলিকসের ফাঁস হওয়া বাংলাদেশ সম্পর্কিত তারবার্তায় একক ব্যক্তি হিসেবে গওহরের নামই এখন পর্যন্ত বেশি এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক এই উপদেষ্টা অবশ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দূরদৃষ্টির অভাব আছে বলেও মার্কিন দূতের কাছে মন্তব্য করেন। গওহরের কর্মকাণ্ডের কারণে পররাষ্ট্রসচিবকেও শুনতে হয়, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কে চালায়?’ ধরনের প্রশ্ন।
ট্রানজিটের জন্য একেবারে মুখিয়ে থাকা এই ব্যক্তিটিকে এখন তিস্তা চুক্তি না হওয়ার জন্য কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন অনেকেই। তিনি বলেছিলেন, ‘৪০ বছর অপেক্ষা করেছি, আর নয়, ট্রানজিট হবেই। ’ মন্ত্রিসভার সদস্যদের কয়েকজনও তার অতিউৎসাহী ভূমিকার সমালোচনা করছেন।
মমতার ঢাকা সফর বর্জনের কথা মমতা নিজেই ঘোষণা দিয়ে জানিয়ে দেন। তবে তবুও তা যেন মানতে চাননা গওহর। মনমোহনের সফরের কয়েক ঘণ্টা আগেও তিনি দাবি করেন মমতা আসছেন।
গত সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত একটি সেমিনারে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি নাটকীয় ভঙ্গিতে বলেন, ‘আমার কাছে এইমাত্র একটি ফোন এসেছে। আমি এখনই খবর পেয়েছি এবং আশা করছি অন্য মূখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে মমতাও ঢাকা আসছেন। ’
গওহর বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যয় মনমোহনের সফরসঙ্গী হয়ে ঢাকা আসবেন না এমন অফিসিয়াল তথ্য সরকারের কাছে নেই। ’
ট্রানজিট, তিস্তাসহ ভারতের সঙ্গে যেসব চুক্তি সম্পাদিত হচ্ছে তা জনসম্মুখে প্রকাশ করা এবং সবচুক্তি মন্ত্রীপরিষদ সভায় অনুমোদন হবে বলে তিনি নিশ্চিত করে বললেও কার্যত একটিও হয়নি।
তিস্তা চুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ চুক্তির বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার যা সিন্ধান্ত নিয়েছে তার সবই মমতার সঙ্গে আলোচনা করেই নিয়েছেন। তাই তিস্তা চুক্তিতে মমতার দেয়া সাম্প্রতিক বক্তব্যে কোন প্রভাব পড়বেনা। ’
মনমোহনের সফরের আগে গওহর অন্য সমন্বয়কারী প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানসহ কলকাতায় গিয়ে মমতার সঙ্গে দেখাও করেন।
মনমোহন আসার আগে সংবাদ মাধ্যমের তার পছন্দের সাংবাদিকদের তিনি ফোন করে জানান, ‘ড. মনমোহন সিংয়ের সফরে তিস্তাসহ যেসব চুক্তি ও সমঝোতা হবে তা মন্ত্রিপরিষদ সভায় অনুমোদন দেওয়া হবে। কিন্তু কার্যত তা হয়নি। জানা গেছে, বৈঠকে ভারত প্রসঙ্গে কোনও আলোচনাই হয়নি। ’
তিস্তা চুক্তির ধারা নিয়ে ভারতে মমতা-মনমোহন টানাপোড়েন তৈরির পর ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশংকর মেনন ঢাকায় আসেন। এ প্রসঙ্গে জানতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এটি গুজব, মেনন আসেননি। ’
ট্রানজিটের বিনিময়ে সার্ভিস চার্জ নেওয়া প্রসঙ্গে গওহর কিছুদিন আগে বলেন, ‘ট্রানজিটের বিনিময়ে চার্জ চাওয়া অভদ্রতা। ’
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, মনমোহনের সফর ও চুক্তির বিষয়গুলো নিয়ে গওহর রিজভী একজন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে এতোটাই আশ্বস্ত করেছিলেন যে, মনমোহনের সফরের কয়েক ঘণ্টা আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনিও জোর গলায় বলে ফেলেন ‘মনমোহনের সফরে তিস্তা চুক্তি হবে। ’
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এখন কোনদিকে যাবে এবং তিস্তা-ফেনীর পানি বণ্টন চুক্তির ভবিষ্যতই বা কী হবে তা জানতে এখনও কী গওহরের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হবে।
২০০৯ সালের ৯ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ম উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পান গওহর। তিনি মন্ত্রীর পদমর্যাদা পেয়েছেন।
গত প্রায় ২৫ বছর বাংলাদেশের সঙ্গে তার তেমন যোগাযোগ ছিল না। আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছেও তার নাম ছিল অপরিচিত।
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ড. গওহর রিজভী ২০০৯ সালের ১৮ জুলাই বাংলাদেশে এসে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তার ইতালিয়ান স্ত্রীর নাম এঞ্জেস বারলো। যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র জয়কে তিনি কিছুদিন বিভিন্ন বিষয়ে পড়িয়েছেন বলে জানা যায়।
ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী সময়ে গওহর রিজভীকে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা কেন্দ্রীক কর্মচঞ্চল হতে দেখা যায়।
কর্মজীবনে গওহর ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ফোর্ড ফাউন্ডেশনের হয়ে নয়াদিল্লিতে চাকরি করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১১