ঢাকা: রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) উচ্ছেদ অভিযানের নামে চালিয়ে যাচ্ছে রমরমা ঘুষ বাণিজ্য। নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানের এক শ্রেণীর অসৎ কর্মকর্তারা হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
নামকাওয়াস্তে উচ্ছেদ অভিযানের নামে ওই কর্মকর্তারা আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে গেলেও প্রকৃত অপরাধীরা থাকছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
অভিযোগ আছে, রাজউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মুহাম্মদ নুরুল হুদার নেতৃত্বেই ঘটছে এসব অনৈতিক কাজ। একদিকে রাজউকের তত্ত্বাবধানে নকশার অনুমোদন নিয়ে ভবন তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে সেই অনুমোদনকারী সংস্থাই ভবন মালিকদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে নকশা জালিয়াতিতে সহায়তা করছে।
নিয়ম বহির্ভূতভাবে ভবন তৈরিতে নকশার অনুমোদন দিয়ে আবার সেই ভবন মালিককেই জিম্মি করছে। নকশা অনুমোদনের পর নির্মাণ কাজ তদারকি করার দায়িত্বও রাজউকের। তাই রাজউক কর্মকর্তাদের ঘুষ না দিলে উচ্ছেদ অভিযানের হুমকি দিয়ে নির্মাণকৃত ভবন ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেন তারা।
কিছুদিন পরপরই ইচ্ছেমতো তালিকা তৈরি করে ভবন মালিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায় রাজউক। এ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে রাজউকের অথরাইজড কর্মকর্তাদের। রাজউক চেয়ারম্যানের তত্ত্বাবধানে এ কাজে মূল ভূমিকা পালন করছেন পরিচালক (পরিকল্পনা) শেখ আবদুল মান্নান এবং ভারপ্রাপ্ত পরিচালক উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ জহুরুল ইসলাম। রাজউকের একাধিক কর্মকর্তা এবং কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা বাংলানিউজের কাছে এ অভিযোগ করেন।
রাজউকের এই দুষ্টু চক্রের তত্ত্বাবধানে চলে উচ্ছেদ অভিযান। বিশাল উচ্ছেদ বহর নিয়ে প্রচারপ্রিয় ও অতিউৎসাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও রাজউক কর্তারা খবর দেন সংবাদপত্র ও টেলিভিশনের সংবাদকর্মীদের।
টেলিভিশনের মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে ভবন মালিকরা রাজউক কর্মকর্তাদের কাছে দৌড়ঝাঁপ শুরু করলে তাদের অফিসে গিয়ে দেখা করার কথা বলেন কর্মকর্তারা। তারপর তাদের ঘুষ দিলেই ওই অবৈধ ভবনে আর উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয় না।
এমনও নজির আছে রাজউকের ভেঙে দেওয়া ভবন কয়েকদিন পরই পুনরায় মেরামত করে ফেলেছে ভবন মালিকরা। কিন্তু এ বিষয়ে রাজউক কোনো ব্যবস্থাই নেয় না।
এরই অংশ হিসেবে কিছুদিন আগে কথিত অবৈধ ভবন ও ভবনের বর্ধিতাংশ উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে রাজউক।
২০১০ সালের জুনে ৫ হাজার অবৈধ ভবন উচ্ছেদের ঘোষণা দেওয়ার পর কিছু ভবনে উচ্ছেদ অভিযান চালায় রাজউক। তবে ওই অভিযান ক’দিন পরই বন্ধ হয়ে যায়।
রাজউকের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নূরুল হুদা বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিপুল সংখ্যক ভবন উচ্ছেদ করলে ঢাকা একটি ধ্বংসের নগরীতে পরিণত হবে। তাই রাজউক আর অবৈধ ভবনগুলো ভাঙবে না। ’
অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোকে উচ্ছেদ করে বাকিগুলো বড় আকারের জরিমানা আদায়ের মাধ্যমে একটি নিয়মের মধ্যে আনার চেষ্টা চলছে বলে জানান রাজউক চেয়ারম্যান।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজউকের কয়েকজন উর্ধŸতন কর্মকর্তা এ সিদ্ধান্তকে অন্তর্ঘাতমূলক বলে মন্তব্য করেছেন। তারা বলেছেন, ‘মূলত উচ্ছেদের নামে চেয়ারম্যান ভবন মালিকদের কাছ থেকে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করে ছিলেন। এখন সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষেই কথিত উচ্ছেদ বন্ধ করেছেন। ’
সূত্র জানায়, তিন হাজার অনুমোদনহীন, নকশা বহির্ভূত ও আইন না মেনে তৈরি করা ভবনের প্রথম পর্বের তালিকা তৈরি করে ২০০৯ সালের ১১ অক্টোবর উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে রাজউক।
ওই তালিকায় কোনো ডেভেলপার কোম্পানির স্থাপনা ছিলো না। পরে ২০১০ সালের জুনে বেসরকারি ডেভেলপার কোম্পানির ভবন তালিকাভুক্ত করে দুই হাজার বাড়ির তালিকা তৈরি করে রাজউক। মোট তালিকাভুক্ত অবৈধ বাড়ির সংখ্যা দাঁড়ায় পাঁচ হাজার। এর সঙ্গে যোগ হয় পুলিশের দেওয়া ১৯৮ ভবনের তালিকা।
ভবনগুলো নিয়ে রাজউক এখন ঘুষ বাণিজ্যের ফাঁদ ফেতেছে। এদিকে রাজউকের পরিচালক শেখ আবদুল মান্নান এবং জহুরুল ইসলাম উচ্ছেদের নামে ঘুষ গ্রহণের কথা অস্বীকার করেছেন। তারা বলেছেন, পরিকল্পিত নগরী গড়ে তুলতেই রাজউক উচ্ছেদ অভিযান চালায়।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০১১