ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

মিডিয়া হিরো হতেই বেশি আগ্রহী রাজউক

মনোয়ারুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১১ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১১
মিডিয়া হিরো হতেই বেশি আগ্রহী রাজউক

ঢাকা: রাজধানী উন্নয়ন কতৃপক্ষ (রাজউক) এখন যতটা না কাজের কাজ কিছু করছে তারচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে তাদের কাজ মিডিয়ার সামনে কতটা তুলে ধরা যায় তা নিয়ে। আর এ আগ্রহে অতি উৎসাহের বশবর্তী হয়ে আদালত অবমাননা করতেও পিছ পা হচ্ছেন না সংস্থাটির কর্মকর্তারা।



খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজউকের ম্যাজিস্ট্রেটরা রাজধানীর উন্নয়নের নামে কোনো অভিযান চালানোর সময় এতটাই মিডিয়ার কাভারেজ তৃষ্ণায় ভুগছেন যে তার জন্য আয়োজনের কমতি রাখেন না।

সংবাদমাধ্যমগুলোকে ডেকে নিয়ে অভিযানে নামছেন আর লোক দেখানো অভিযান থেকে নাম কুড়ানোর বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছেন।

গত বুধবার রাজধানীর উপকণ্ঠে বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রকল্পের বিরুদ্ধে এমনই অভিযান চালিয়েছেন রাজউকের ম্যাজিস্ট্রেট শরিফুল ইসলাম ভূইয়া। টেলিভিশন চ্যানেল ডেকে এ অভিযান চালিয়ে তার হিরো হওয়ার চেষ্টার মাঝে তিনি বেমালুম ভুলেই যান যে প্রকল্পটির ব্যাপারে হাইকোর্টের আগের দেওয়া নির্দেশনা রয়েছে এবং রুলনিশি জারি করে প্রকল্পের কাজে কোনো ধরনের ব্যাঘাত সৃষ্টি না করতে বলেছেন  আদালত।

নিজের অভিযানটি যে আদালত অবমাননার সামিল তাও বুঝতে যথেষ্ঠই দেরি করেন এই ম্যাজিস্ট্রেট।

এর আগেও রাজউককে দেখা গেছে কোথাও কোনো অভিযানে গেলে মিডিয়া না আসলে ম্যাজিস্ট্রেটরা কাজ শুরু করছেন না। মিডিয়া থাকলে তাদের হম্বিতম্বিও একটু বেড়ে যায়। আবার মিডিয়ার উপস্থিতি না থাকলে রাজউকের কাজ চলে না। কোনো ভবন ভাঙ্গতে হলেও তার জন্য মূল কাজের চেয়ে মিডিয়া হাজির করার জন্যই তোরজোরটাই বেশি থাকে।

কাঁঠালবাগানের হেলে পড়া ভবন, বেগুনবাড়ির ধসে যাওয়া ভবন কিংবা সর্বসাম্প্রতিক তেজগাঁওয়ের বহুতল ভবনের পাইলিং ধসে পড়ার ঘটনায় এ চিত্রই দেখা গেছে। টেলিভিশন ক্যামেরা চলে গেলে রাজউকের ম্যাজিস্ট্রেটও চলে যান ঘটনাস্থল থেকে।

২০০৭ সালে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) নারায়ণগঞ্জ শহরে তাদের সম্পত্তি উদ্ধার করতে গিয়ে এক অসহায় মুক্তিযোদ্ধার শেষ সম্বল ২টি দোকান ও বসতঘর অবলীলায় ভেঙ্গে দিয়ে সেখানেও হিরোইজমের প্রকাশ ঘটায়।
 
সচেতন নাগরিকদেও দাবি রাজউকের আগ্রাসী নীতি বন্ধ হওয়া উচিত।

একজন চেয়ারম্যান এবং অনুর্দ্ধ পাঁচজনের সমন্বয়ে গঠিত বোর্ডের ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রাজউক পরিচালিত হয়।   উন্নয়ন ও প্রকৌশল, সম্পত্তি ও ভূমি, অর্থ, বাজেট ও হিসাব, পরিকল্পনা ও স্থাপত্যের মতো স্বতন্ত্র পাঁচটি বিভাগ গঠন করে পরিচালনা বোর্ডের সকল সদস্যকে সুনির্দিষ্ট দায়িত্বভার দেওয়া আছে। তবে রাজউকের অভিযানগুলো চলে এর ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে। এই ম্যাজিস্ট্রেটদের যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে বিভিন্ন পর্যায়ে।  

রাজউকের হটকারিতার সর্বশেষ উদাহরণ বুধবার আদালতের আদেশ অমান্য করে কেরানীগঞ্জে বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রকল্পে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে রাজউক। কিন্ত নেতৃত্বদানকারী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযানের সময় তাঁর পক্ষে কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। রিভারভিউ প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আদালতের স্থগিতাদেশের অনুলিপি দেখালেও ম্যাজিস্ট্রেট কোনো তোয়াক্কা করেননি।

প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত ও স্থানীয় লোকজন জানায়, গতকাল বুধবার রাজউকের ম্যাজিস্ট্রেট শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া অভিযান চালাতে যান। এ সময় প্রকল্পের লোকজন উচ্ছেদের কারণ জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর না দিয়েই অভিযান শুরু করেন।

প্রকল্পের কর্মকর্তারা ম্যাজিস্ট্রেটকে জানান, এই প্রকল্পের যেকোনো অবকাঠামোতে অভিযান চালানোর ব্যাপারে আদালতের স্থগিতাদেশ জারি আছে।

প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা বলেন, রিভারভিউ প্রকল্প কর্তৃপক্ষ ২০০৭ সালে আদালতে রিট আবেদন করলে আদালত তাঁর রায়ে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত প্রকল্পের কোনো কিছুতে অভিযান চালানো যাবে না বলে জানিয়ে দেন।

রাজউকের নীতিমালা অনুযায়ী, যেকোনো অবকাঠামোতে অভিযান চালাতে হলে মালিকপক্ষকে নোটিশের মাধ্যমে অবহিত করতে হয়। নোটিশে মালিকপক্ষকে নিজ উদ্যোগে অবকাঠামো উচ্ছেদের কথা বলা হয়। তিন দফা নোটিশ দেওয়ার পরও মালিকপক্ষ তা অপসারণ না করলে তখনই রাজউক সেখানে অভিযান চালাতে পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে রাজউকের তরফ থেকে কখনো অবহিতও করা হয়নি। কোনো নোটিশও দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি আদালত অনুমোদনহীন প্রকল্পগুলোর বিলবোর্ড-সাইনবোর্ড অপসারণের নির্দেশ দেন।

সেই নির্দেশ রাজউকে পৌঁছানোর আগেই রাজউক অভিযান শুরু করে, এমনকি অনুমোদিত বসুন্ধরা রিভারভিউ আবাসিক প্রকল্পে গিয়ে আকস্মিকভাবে এ অভিযান চালায়।

এ অভিযানেও রাজউকের ওই ম্যাজিস্ট্রেটের মিডিয়া হিরো হওয়ার দুর্বার আকাঙ্খাই কাজ করেছে বলে মনে করেন অনেকে।

বাংলাদেশ সময় ২০৩৪ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।