ঢাকা: নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার চড়ছেই। চলতি সপ্তাহে দাম বেড়েছে প্রায় সব পণ্যের।
তবে দোষ যারই হোক, অস্বস্তি বাড়ছে নানা অযুহাতে দফায় দফায় মূল্যবৃদ্ধির গ্যাঁড়াকলে পড়া ভোক্তাদের। দোকানিদের গছিয়ে দেওয়া পচা জিনিস নিয়ে বাসায় ফেরার হ্যাপাও সামলাতে হচ্ছে তাদের।
শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, দু’একটি পণ্যের দাম কিছুটা কমলেও বেড়েছে অধিকাংশ শাক-সবজি, চাল, ডাল, তেল, আটা, চিনির দাম। চড়েছে মাছ, মুরগি, গরু আর খাসি মানে আমিষের বাজারও।
তবে আগামী মাসে নতুন চাল বাজারে উঠলে দাম কিছুটা কমবে বলে আশাবাদী খুচরা ব্যবসায়ীরা।
নগরীর কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর বাজার, হাতিরপুল বাজার ঘুরে দেখা গেছে- চালের সর্বনিম্ন দাম প্রতি কেজি ৩৮ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩৬ টাকা। ডাল প্রতি কেজি ৯০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮৫ টাকা। চিনি প্রতি কেজি ৫৬ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫২ টাকা। পেঁয়াজ প্রতি কেজি ২৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ২২ টাকা। রসুন প্রতি কেজি ১৩০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১২৫ টাকা। আদা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫৫ টাকা।
অব্যাহত রয়েছে সবজির দর বৃদ্ধিও। গত সপ্তাহের তুলনায় ৪-৬ টাকা বেড়েছে সবজির দাম।
প্রতি কেজি আলু ১২ টাকায়, বরবটি ৩৫-৪০ টাকায়, গোল বেগুন ৩৫-৪০ টাকায়, ঢেঁড়শ ৩০-৩৫ টাকায়, করল্লা ৫৫-৬০ টাকায়, টমেটো ৪০-৪৫ টাকায়, গাজর ৩৫-৪০ টাকায়, পটল ২৮-৩৪ টাকায়, কাঁচা মরিচ ৪০-৫০ টাকায় আর লাউ প্রতিটি ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতি কেজি মুরগির দাম বেড়েছে ২০-৩০ টাকা।
প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ১৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫৫-১৬০ টাকা। আর দেশি মুরগি ৩০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৩২৫-৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বৃদ্ধি পেয়েছে মাছ, গরু ও খাসির মাংসের দাম।
মোহাম্মদপুরের খুচরা ব্যবসায়ী লস্কর ট্রেডার্সের মালিক আবদুল কুদ্দুস বাংলানিউজকে বলেন, ‘দ্রব্যের দাম যে হারে বেড়েছে, সে অনুপাতে মানুষের আয় বাড়েনি। তাই বেচাকেনা আগের চেয়ে কমে গেছে। ’
হাতিরপুলের সবজি ব্যবসায়ী হাবিব বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি পাইকারি আলু কিনি প্রতি কেজি ১০ টাকায়। এর সঙ্গে গাড়িভাড়া ও আনুসঙ্গিক খরচ যোগ হয় ১ টাকা ৫০ পয়সা। বিক্রি করি ১২ টাকায়। মাত্র ৫০ পয়সার ব্যবসা করি। ’
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে অধিকাংশ খুচরা বিক্রেতাই বলেন, ‘অসাধু পাইকারদের কারণেই পণ্যের দাম স্থির থাকে না। তারা সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়িয়েই চলেছে। ’
তবে আগামী মাসে নতুন চাল বাজারে উঠলে চালের দাম কমবে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।
খুচরা বিক্রেতাদের কথার পরিপ্রেক্ষিতে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে জানতে চাইলে তাদের বেশিরভাগই দাম বৃদ্ধির জন্য সরকারকেই দায়ী করছেন।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী ইদ্রিস বাংলানিউজকে বলেন, ‘সরকার নিজে যোগান দিতে পারবে না, আবার আমরা দিলে তা চোরাই পথে আমদানি বা মজুতদারির অভিযোগ তুলবে। ’
অন্যদিকে ক্রেতাদের কাছে দ্রব্যমূল্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলে, ‘আগে ২০০ টাকায় যে পরিমাণ বাজার পাওয়া যেত এখন সে পরিমাণ বাজার করতে ৩০০-৩৫০ টাকা লাগে। বাড়িভাড়া বৃদ্ধি, গাড়িভাড়া বৃদ্ধি, বাজারে দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি সব মিলিয়ে আমাদের জীবন অতিষ্ট করে তুলেছে। ’
বাজার করতে আসা শামসুল হকক বাংলানিউজকে বলেন, ‘এক দিকে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, অন্যদিকে বিক্রেতারা ওজনে কম দিচ্ছে, গছিয়ে দিচ্ছে পচা জিনিস। এসব খেয়ে আমাদের আয়ু কমে যাচ্ছে। ’
কাছে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি সম্পর্কে আজিজ নামে এক শ্রমিক বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার পরিবারে সদস্য সংখ্যা ৫ জন। কাজ করে মজুরি পায় ২৫০ টাকা। বাজারে জিনিসের যে দাম তাতে এক বেলা খেলে আর এক বেলা না খেয়ে থাকতে হয়। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১১