ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

মুক্তিযুদ্ধকে পাক-ভারত যুদ্ধ হিসেবে উপস্থাপন লন্ডনের যুদ্ধ জাদুঘরে

সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০১১
মুক্তিযুদ্ধকে পাক-ভারত যুদ্ধ হিসেবে উপস্থাপন লন্ডনের যুদ্ধ জাদুঘরে

লন্ডন: লন্ডনের বিশ্বখ্যাত ওয়ার মিউজিয়াম (যুদ্ধ জাদুঘর) ‘ইম্পেরিয়াল’-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কোনো দলিলপত্র নেই। মিউজিয়ামটিতে ১৯১৪ সাল থেকে শুরু করে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধসহ বিভিন্ন যুদ্ধের নানা দালিলিক নিদর্শন সংরক্ষিত থাকলেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কোনও নিদর্শন নেই।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে পাক-ভারত যুদ্ধ হিসেবেই উপস্থাপন করা হচ্ছে ইম্পেরিয়ালে।

বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বাংলাদেশিরা পড়ছেন ভীষণ বিভ্রান্তিতে। বিশেষ করে এখানকার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নতুন প্রজন্মই বিভ্রান্ত হচ্ছে বেশি। লন্ডনের বাংলা কমিউনিটিতেও বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে বেশ। লন্ডনের একমাত্র বাংলা রেডিও স্টেশন ‘বেতারবাংলা’য় প্রচারিত ‘গৌরবের চল্লিশ বছর’ শীর্ষক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বছরব্যাপী লাইভ অনুষ্ঠানে আসা টেলিফোন কলেও এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়ার প্রমাণ মিলেছে।

প্রবাসী বাঙালিরা মনে করছেন, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি প্রথম থেকেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে পাক-ভারত যুদ্ধ হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে। তাই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নিদর্শন উপস্থাপনে ইম্পেরিয়েল ওয়ার মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতায় মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তিই রাজনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে।

এদিকে স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এখানকার বাংলা কমিউনিটিতে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নতুন প্রজন্মের ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হলেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে পাক-ভারত যুদ্ধ হিসেবে উপস্থাপন করায় যারপরনাই হতাশ তারা।

কিন্তু বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বাংলাদেশ হাইকমিশন বা বাংলাদেশ সরকারের কোনও তৎপরতা চোখে না পড়ায় অনেকেই হতাশ হচ্ছেন। ব্রিটেনে আওয়ামী লীগের একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক থাকলেও তাদের কোন ভূমিকাও চোখে পড়ছে না।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪০ বছরপূর্তি উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধের কোনও নিদর্শন ইম্পেরিয়েলে উপস্থাপন করা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে মিউজিয়ামের হেড অব রিসার্চ সুজান ব্যাজেট বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ বছর মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ ১ম বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে খুবই ব্যস্ত। ’  

তবে ভবিষ্যতে এ বিষয়ে কিছু করার ইচ্ছে আছে জানিয়ে সুজান বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার আমাদের প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত দিলে কাজটি আমাদের জন্য সহজ হবে। ’

কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার কয়েকটি ছবি উপস্থাপন করে কেন সেগুলোকে পাক-ভারত যুদ্ধের ছবি বলা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মিউজিয়ামের একটি গ্যালারিতে পাক-ভারত যুদ্ধ বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে। শুধু ’৭১ নয়, ’৬৫ এর পাক-ভারত যুদ্ধের নিদর্শনও এটিতে আছে। মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ ১৯৭১ সালের শেষের দিকে পাক-ভারত যুদ্ধ বিষয়ক ডকুমেন্ট সংগ্রহ করতে পেরেছে বলেই হয়তো এভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারসহ কমিউনিটির পক্ষ থেকে যদি প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট দেওয়া হয়, তাহলে বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে আমাদের সুবিধা হয়। ’

লন্ডন ভিত্তিক ‘স্বাধীনতা ট্রাস্ট’ নামক একটি সংগঠনের কর্ণধার আনসার আহমেদ উল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষের সাথে ই-মেইল বার্তা বিনিময় করেছি। আমরা বলেছি-বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চল্লিশ বছরপূর্তি উপলক্ষে মিউজিয়াম কর্র্তৃপক্ষ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের নিদর্শন দর্শকদের জন্য উপস্থাপন করুক। কিন্তু মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ বলেছে- এবার ১ম বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে তারা কিছুটা ব্যস্ত আছেন, আগামীতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভাববেন। ’
 
এ বিষয়ে রোববার লন্ডন সফররত বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি নাগরিকদের অবদান স্বীকার করে বাংলাদেশ সরকার তাদের সম্মানিত করছে। তাই ইম্পেরিয়েল ওয়ার মিউজিয়ামে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করা উচিত। ’

দেশে ফিরে বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে তিনি নিজে কথা বলবেন জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ বিশ্ব ইতিহাসের অংশ। কেউ ইচ্ছে করলেই এটি বিকৃত করতে পারে না। ইম্পেরিয়েলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোন ভুল তথ্য থাকলে মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে তা ঠিক করার উদ্যোগ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নেবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।