ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

বগুড়ার নায়েব আলীর মুখে হাসি এনে দিয়েছে তার হাঁসের খামার

টি এম মামুন, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১১
বগুড়ার নায়েব আলীর মুখে হাসি এনে দিয়েছে তার হাঁসের খামার

বগুড়া: ভাগ্য বিপর্যয়ে চরম হতাশা আর দুর্ভোগের পরেও শ্রম, মেধা আর যৎসামান্য পুঁজির সফল সম্মিলন ঘটিয়ে দেশেই ভাগ্যোন্নয়ন সম্ভব- এটা প্রমাণ করেছেন বগুড়ার যুবক নায়েব আলী। জমিজমা বেচে আর ঋণ করে ভাগ্য ফেরাতে বিদেশে গিয়ে আদম ব্যাপারির প্রতারণায় সর্বস্বান্ত হয়েছিলেন তিনি।



বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার হরিহারা গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে নায়েব আলী (২৭) গ্রামের সমিতি থেকে লক্ষাধিক টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশ গিয়েছিলেন। আদম ব্যাপারীর খপ্পরে পড়ে সবকিছু হারিয়ে যখন নিঃস্ব তখনই আবার নতুন করে বেঁচে থাকার সপ্ন হাতছানি দেয় তাকে।

সর্বস্ব হারানো সামান্য লেখাপড়া জানা নায়েব আলী ধৈর্য ধরে নিজ বুদ্ধিকে পুঁজি করে দেশেই কিছু একটা করার সিদ্ধান্ত নেন। তার এ সিদ্ধান্তে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন পরিবারের সদস্যরা আর তার বন্ধু মিজানুর রহমান মন্টু।

হরিহারা গ্রামের বেশির ভাগ জুড়ে রয়েছে পুকুর ও খালবিল। এলাকার পরিবেশগত এ দিকটির কথা মাথায় রেখে নায়েব আলী পরিকল্পনা নেন হাঁস পালনের। পাশের গ্রাম থেকে কিনে আনেন ৩০টি হাঁসের বাচ্চা। সে সময় মাত্র এক হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ২০০৯ সালে তিনি নিজ গ্রামে গড়ে তোলেন হাঁসের খামার।

পরিবারের টাকা খুইয়ে বিদেশ ফেরত নায়েব আলীর এ কাজ দেখে গ্রামের অনেকেই হাসি-তামাশা করলেও দৃঢ় মনোবল নিয়ে ৬ মাসের মধ্যেই তিনি একজন আদর্শ হাঁস খামারী হিসেবে পরিচিত পেয়ে যান এলাকায়। প্রতিটি মুহূর্ত খামারের কাজে লাগিয়ে অভাবকে জয় করেন তিনি। শুধু তাই নয়, হাঁস পালন করেও যে স্বাবলম্বী হওয়া যায় অল্পদিনেই তা বুঝিয়ে দেন সবাইকে।

এভাবে স্বাবলম্বী হওয়া নায়েব আলী কেবল এলাকার হতাশাগ্রস্ত বেকার যুবকদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্তই নন, এখন সাক্ষাৎ আশার আলো।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের পরামর্শ এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামের একজন হাঁস খামারীর উৎসাহে এক সময় হাঁস পালনে অনভিজ্ঞ বেকার নায়েব আলী এখন এক হাজার হাঁসের একটি আদর্শ খামারের মালিক। তার দেখাদেখি অনেকগুলো হাঁসের খামার গড়ে উঠেছে এ অঞ্চলে।

নায়েব আলী বাংলানিউজকে জানান, বিদেশে যাওয়ার জন্য যে টাকা নষ্ট করেছেন সে টাকা দিয়ে যদি ওই সময় হাঁস পালন শুরু করতেন তাহলে আরও অনেক আগেই স্বাবলম্বী হতে পারতেন তিনি।

হাঁস পালনই তাকে সুদিন এনে দিয়েছে দাবি করে তিনি জানান, এখানে পরিবেশ অনুকূলে থাকায় এবং প্রাকৃতিক খাবার সহজলভ্য হওয়ায় তার হাঁসগুলো অন্য এলাকার হাঁসের চেয়ে বেশি ডিম দেয়। আর হাঁসের খামার গড়ে ওঠার কারণে খাদ্য, শামুক ও হাঁসের ডিম বিক্রির ব্যবসা করে উপার্জনের পথ হয়েছে এখানকার আরও বেশকিছু কর্মহীন মানুষের।

নায়েব আলীর দেওয়া তথ্যমতে, এক হাজার হাঁস থেকে প্রতিদিন গড়ে ৮শ ডিম পাওয়া যায়। ৩০ টাকা দরে হাঁসের বাচ্চা কিনে এর পিছনে ওষুধ ও অন্যান্য খরচবাবদ ৭০ টাকাসহ প্রতিটি হাঁসের পেছনে মোট একশ টাকা ব্যয় হয়। একটি পূর্ণবয়স্ক হাঁস বিক্রি হয় আড়াই থেকে তিনশ টাকায়। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩ হাজার টাকা আয় হয়।

তিনি আরও জানান, দু’বছর আগে বিদেশ যাওয়ার জন্য যে অর্থ ঋণ করেছিলেন খামার থেকে আয় করা টাকায় তা পরিশোধ করে ইতোমধ্যে কিছু জায়গা-জমিও কিনেছেন তিনি।

এদিকে, খামারের পরিধি বেড়ে যাওয়ায় নায়েব আলী আরও দুজন কর্মচারী রেখেছেন খামার দেখাশোনার জন্য। এ দুজন ছাড়াও হাঁস ও ডিম বিক্রির মাধ্যমে আরও প্রায় ১০ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তার খামারে।

নায়েব আলীর ইচ্ছা, আগামীতে হরিহারা গ্রামের প্রতিটি বেকার যুবককে হাঁস পালন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে ওই এলাকাকে একটি আদর্শ গ্রাম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।

নন্দীগ্রাম উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোশারফ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ‘শুধু নায়েব আলী নন, এলাকার যেসব বেকার যুবক আত্মনির্ভর হওয়ার লক্ষ্যে এ ধরনের পেশায় আত্মনিয়োগ করতে চায়, আমরা তাদের সহযোগিতা করে থাকি’।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।