ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

লুনার পেরিজিতে প্লাবিত ভূবন

আনোয়ারুল করিম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১১
লুনার পেরিজিতে প্লাবিত ভূবন

‘যেদিন পূরণিমা রাত আসে
চাঁদ আকাশ জুড়িয়া হাসে..’

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই কবিতা হয়তো লিখেছিলেন স্বাভাবিক সময়ের কোনও পূর্ণিমা দেখে। তবে শনিবার রাতটি (১৯ মার্চ দিবাগত রাত) ছিল অন্যধরনের একটি রাত।

এ রাতে এমন আলোর যে বন্যা বয়ে গেল পৃথিবীর এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে, তা নিকট ভবিষ্যতে তো ভোলার নয়!

এ রাতে চাঁদের আলো যেন বাঁধ ভেঙে পড়েছিল জমিনের বুকে। নয়নভুলানো সেই আলো। আহা! এমন আলোর প্লাবন যেন অনেকদিন দেখেনি কেউ। সত্যিই তো তাই। ১৯৯২ সালের পর চাঁদ পৃথিবীর এতো কাছে নাকি আর আসেনি; এতো আলোও ছড়ায়নি! জোর্তিবিজ্ঞানীরা তো তাই বলছেন।

শনিবার সন্ধ্যার পর থেকেই যেন ‘আলোয় ভুবন ভরা’ গানের কলিটি বার বার গুনগুন করে গাইতে ইচ্ছে হচ্ছিল। মাঝরাতে চাঁদের ভরা রূপ দেখে রবীন্দ্রনাথের মতোই আবারো বলতে ইচ্ছে করে, ‘কৃষ্ণপক্ষের কৃশ চাঁদ যেন রোগশয্যা ছেড়ে/ ক্লান্ত হাসি নিয়ে অঙ্গনে বাহির হয়ে এল। ’ ‘পৃথিবীর সমুদ্রহৃদয়/ চন্দ্রে হেরি উঠে উথলিয়া। / পৃথিবীর মুখপানে চেয়ে/ চন্দ্র হাসে আনন্দে গলিয়া। ’  

জোর্তিবিজ্ঞানীরা চাঁদের এই ভরা যৌবনকে ‘লুনার পেরিজি’ বলে অভিহিত করেন। ১৯ বছর পর পর চাঁদ পৃথিবীর এতো কাছে আসেন। অন্য সময়ের চেয়ে এ সময় চাঁদ ১৪ শতাংশ বড় দেখায়; আর আলোও দেয় অন্তত ৩০ শতাংশ বেশি।

শনিবার রাতের এই ‘সুপার মুন’ আমাদের সবুজ পৃথিবী থেকে ২ লাখ ২১ হাজার ৫৬৭ মাইল দূরত্বে অবস্থান করে। এটিই চাঁদের সবচেয়ে কাছে আসা!

এতোবড় চাঁদ অন্য সময় দেখা যায় না, তাই বলে কী কবিতা লেখা বন্ধ থাকবে। তা তো হয়না। তাই চাঁদ নিয়ে কবিদের নানা মত রয়েছে। কবি অশোক বিজয় রাহা লিখেছেন, ‘আকাশ পানে তাকিয়ে দেখি, আরে,/আধফালি চাঁদ লটকে আছে/ টেলিগ্রাফের তারে। ’ চাঁদের একেক সময়ের ভিন্ন ভিন্ন রূপ নিয়ে তাই কবিরা নানা বিশেষণে সাজিয়ে তোলে সাহিত্যের ভাণ্ডার। আমাদের প্রিয় বিপ্লবী কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য আবার চাঁদকে নিয়ে ভিন্ন আঙ্গিকে লিখে গেছেন -- ‘কবিতা তোমায় দিলাম আজিকে ছুটি/ ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়/ পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি। ’

চাঁদকে নিয়ে কাব্য রচনা করা গেলেও চাঁদের আলো পৃথিবীর বুকে তার প্রভাব বেশ ভালোভাবেই রেখে যায়। এমনিতেই স্বাভাবিক পূর্ণিমায় যেখানে জোয়ার হয়, সেখানে এতো আলোয় এর আগে পৃথিবীতে বড় ঢেউয়ের জলোচ্ছাসের জন্ম দিয়েছিল বলেও সাম্প্রতিক ইতিহাসে পাওয়া যায়।

সে যাই হোক, রাতটি পেরিয়ে যাওয়ার পর ‘সুপার মুন’ দেখার জন্য আবারও ১৯ বছর অপেক্ষার প্রহর গোনা শুরু হলো। তবে মনের ভেতরের আলোটিকে তো আর নেভানো যাবে না। সেটি দিয়েই হয়তো পাড়ি দেওয়া যাবে অনন্তকাল!

বাংলাদেশ সময়: ০৫৩০ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।