ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

সোয়া ৩০ কোটি টাকা মুক্তিপণ দিয়েই ছাড়া পেল জাহান মণি

আনোয়ারুল করিম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১১
সোয়া ৩০ কোটি টাকা মুক্তিপণ দিয়েই ছাড়া পেল জাহান মণি

ঢাকা: সোমালীয় জলদস্যুদের হাত থেকে বাংলাদেশি জাহাজ ‘জাহান মনি’ মুক্তিপণ ছাড়া মুক্তি পেয়েছে বলে সরকার ও মালিকরা দাবি করলেও এর জন্য মুক্তিপণ দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর।

জাহাজটি ছাড়িয়ে নিতে অন্তত সোয়া ৩০ কোটি টাকা সমমূল্যের ৪২ হাজার ইউএস ডলার দস্যুদের হাতে তুলে দিতে হয়েছে-- এমনটিই দাবি সংশ্লিষ্টদের।

আর সরকারও বিষয়টি অবগত।

জলদস্যুদের কাছে রোববারই টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়। এডেন সাগরের একটি বন্দর থেকে হেলিকপ্টারে গিয়ে জলদস্যুদের নির্ধারিত এলাকায় একটি স্পিডবোটে টাকা তুলে দেওয়ার পর মুক্তি মেলে নাবিকসহ জাহাজটির।

টাকা হস্তান্তরের আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি লেনদেনের ব্যাপারে তাদের সঙ্গে চূড়ান্ত যোগাযোগ করা হয়। আরব সাগর ও এডেন সাগর এলাকায় দস্যুদের এজেন্টদের মাধ্যমে ওই যোগাযোগ হয়।

সূত্র জানায়, জাহাজটি উদ্ধার বা এর নাবিকদের জীবিত মুক্ত করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যথেষ্ট চেষ্টা করলেও ওই জলদস্যুদের কাছে অর্থ ছাড়া অন্য সবকিছু অর্থহীন।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ২৪টি জাহাজ এখনও আন্তর্জাতিক ওই জলসীমায় জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হয়ে আছে।  

জাহান মণির ব্যাপারে অর্থ লেনদের কথা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জাহাজটির মালিক পক্ষ কেউই প্রকাশ্য স্বীকার করছেন না।

জাহাজটির স্বত্ত্বাধিকারী চট্টগ্রামস্থ ব্রেভ রয়েল শিপিং সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিপণের ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য না দিয়ে বলেছেন, ‘সরকারের কূটনৈতিক সাফল্যে জাহাজটি মুক্ত হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে কোনো মুক্তিপণ দেওয়া হয়নি এবং আমরা এ ব্যাপারে কিছু জানিও না। ’

এর আগে গত শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পররাষ্ট্রসচিব মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সরকার তো মুক্তিপণ দিতে পারে না। আমরা মুক্তিপণের কথা জানিও না। ’

গত ৫ ডিসেম্বর বিকেলে কোচিন বন্দর থেকে ৪০০ নটিক্যাল মাইল ও লাক্ষা দ্বীপ থেকে ১৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে জাহাজটি অপহৃত হওয়ার পর ১২ ডিসেম্বর থেকেই বিভিন্ন অংকের মুক্তিপণের কথা শোনা যাচ্ছিল।

তবে গত শনিবার জাহাজটি উদ্ধারের ঘোষণার পর থেকেই কেউই আর মুক্তিপণের কথা প্রকাশ্য উচ্চারণ করেননি।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নাম না প্রকাশের শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, ‘মুক্তিপণ দিতে জাহাজ মালিকদের সরকারের পক্ষ থেকে শুরু থেকেই চাপ দেওয়া হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত মুক্তিপণের মাধ্যমেই জাহাজটি মুক্ত হয়। ’

‘সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার অজুহাতে পণের কথা স্বীকার করা হচ্ছে না’ বলেও সূত্রের দাবি।

গত বছর বিভিন্ন দেশের ৫৩টি জাহাজ ছিনতাই করে সোমালি জলদস্যুরা; অর্থ না পাওয়ায় একই বছর অন্তত ৮ জনকে জলদস্যুরা হত্যা করেছে বলেও বিভিন্ন মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ০১:০২ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।