ঢাকা: আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ লক্ষ্যে ১৯৯১ সালের ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন’ সংশোধন করা হচ্ছে।
এ কাজের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলমকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। চলতি মাসেই কমিটি ব্যাংক কোম্পানি আইন-২০১১ খসড়া তৈরি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে সুপারিশের জন্য পাঠাবে।
জানা গেছে, ব্যাংকিং খাতে বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবেলা, ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা, মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা , ব্যাংকিং খাতে আরও গতি আনার লক্ষ্যেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এসব ক্ষেত্রে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৩৫ ধারা, ১০৩ ধারা এবং দেনা ও জামিনদারের সংজ্ঞার বিষয়েও পরিবর্তন আনা হবে। এছাড়া ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনার উন্নয়নেও আইনের মধ্যে কিছু পরিবর্তন আনা হবে। এসব বিষয় খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কাজ করে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯১ সালের ব্যাংক কোম্পানি আইনের একাধিক বিষয় পরিবর্তন ও সংশোধন করা হচ্ছে। এছাড়া কিছু বিষয় সংযোজনও করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২০০৭ সালের অর্ডিন্যান্স ব্যাংক কোম্পানি আইনের অন্তর্ভূক্ত করা হতে পারে।
সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংক কোম্পানি আইন পরিবর্তন করা নিয়ে গঠিত কমিটির কাজ সম্পন্ন হলেই তা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। অর্থমন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঠানো সুপারিশগুলো যাচাই-বাছাই করে আইন সভায় পাঠাবে। এরপর সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো আইন সভায় পাস হবে।
সূত্রে আরও জানা গেছে, একাধিক বাণিজ্যিক ব্যাংক রয়েছে যেগুলোর ব্যবস্থাপনায় যোগ্য ও দক্ষ লোকের অভাব রয়েছে। পাশাপাশি সমস্যা রয়েছে ব্যাংক, বীমা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রেও। এসব বিষয় আরও উন্নত, আধুনিক ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই মূলত ব্যাংক কোম্পানি আইন পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জানা গেছে, ১৯৯১ সালে ১৪ নম্বর আইনের মাধ্যমে দেশের ব্যাংকিং খাত পরিচালনা করার জন্য ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১’ প্রণয়ন করা হয়। সে হিসেবে প্রায় ২০ বছরের পুরনো আইন দিয়েই বর্তমানে ব্যাংকিং, নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বীমা খাত পরিচালিত হচ্ছে।
তবে বর্তমানের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যমান ব্যাংক কোম্পানি আইন কিছুটা হলেও দুর্বল। ফলে দেশের আর্থিক খাত পরিচালনা করতে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। আইনের ফাঁক ফোকড় দিয়ে অনেক প্রতারক এবং সুবিধাভোগীই নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করলেও ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বীমা কোম্পানিগুলোর উন্নয়নের পথে বাধার সৃষ্টি করছে। পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডার বা ডিপোজিটরদেরও অনেক সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কে এম আবদুল ওয়াদুদ বাংলানিউজকে বলেন, ব্যাংক কোম্পানি আইনে কিছু সংশোধনী আসছে। এজন্য একটি কমিটি কাজও শুরু করেছে। কমিটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের কার্যপ্রণালী যাচাই করেই সুপারিশ করবে। এ সুপারিশগুলো ব্যাংক কোম্পানি আইনে যুক্ত হতে পারে।
আবদুল ওয়াদুদ বলেন, দীর্ঘদিনের পুরনো আইন দিয়ে বর্তমান ব্যাংকিং খাত পরিচালনা ও এর সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। এতে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ এবং ম্যানেজমেন্টের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। এসব বিষয় গুরুত্ব দিয়েই হয়ত ব্যাংক কোম্পানি আইনে সংশোধন আনা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১১