ঢাকা : টিপাই মুখ বাঁধ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পানি সম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন। তিনি বলেন, ভারত টিপাই মুখে বাঁধ নির্মাণ করবে না বলে আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছে।
আগামী মে মাসে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে তিস্তা নদীর পানি বন্টন চুক্তি সাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে বলে রমেশ চন্দ্র সেন জানান।
পানি সম্পদমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন।
রমেশ চন্দ্র সেন বলেন, টিপাই মুখ বাঁধ নির্মাণে ভারত প্রথমে যে প্রকল্প নিয়েছিলো আসাম রাজ্য সরকার এবং সেখানকার বিচ্ছিন্নতাবাদি গোষ্ঠি উল্ফার বিরোধিতার কারণে তা বাতিল করেছে। টিপাই মুখ বাঁধ হলে আসাম রাজ্য মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তাছাড়া উল্ফা এ বাঁধের বিরোধীতা করে হুমকি দিয়েছে। বিরোধীতা এবং হুমকীর মুখে তারা বাঁধ করবে না। তবে ভারত সরকার আমাদের কথা দিয়েছে সেখানে যদি কোনো কিছু তারা করতে চায় তা আমাদের জানিয়েই করবে।
পানি সম্পদমন্ত্রী বলেন, অভিন্ন নদীর পানি বন্টনে যৌথ নদী কমিশন আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে তিস্তা নদীর পানি বন্টনে উভয় পক্ষ একটা গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে। আগামী মে মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশে সফরে আসার কথা রয়েছে। তখন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী চিস্তার পানি বন্টন চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন।
অভিন্ন নদীর পানি সমস্যা সমাধানে দুই দেশের মধ্যে একটা সন্তোষজনক চুক্তি হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, গত বছর আমরা যখন জেআরসির বৈঠকে গিয়েছিলাম তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, পানি সম্পদমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন।
সাক্ষাতকারে রমেশ চন্দ্র সেন বলেন, হিমালয় থেকে পানি আসছে এবং বঙ্গপোসাগরে চলে যাচ্ছে। সেটা ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। একদিকে বালি পড়ে নদীর নাব্যতা কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে গভীর নলকুপের মাধ্যমে পানি তোলার ফলে পানির স্তর নীচে নেমে যাচ্ছে। এই পানি ধরে রাখতে হবে এবং নদীর নাব্যতা রক্ষা করতে হবে। এ জন্য আমরা ব্যারেজ নির্মাণ এবং নদী খননের উপর গুরুত্ব দিয়েছি।
মন্ত্রী আরও বলেন, আমরা গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণ প্রকল্প তৈরির কাজ শুরু করেছি। গঙ্গা চুক্তি অনুযায়ি শুকনো মৌসুমে প্রাপ্ত পানির যথাযথ ব্যবহারের জন্য অগ্রাধীকার ভিত্তিতে গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও নকশা প্রণয়নের কার্যক্রম চলছে। প্রকল্প প্রণয়নে তৃতীয় পর্যায়ের কাজ চলছে। আশা করছি ডিসেম্বরে গঙ্গা ব্যারেজের ভিত্তিপস্তর স্থাপন করা যাবে। গঙ্গা ব্যারেজ হলে উত্তরবঙ্গের ১৬টি জেলা উপকৃত হবে এবং সুন্দরবন রক্ষা পাবে।
তিনি বলেন, নদী রক্ষার জন্য আমরা ড্রেজিং কার্যক্রম জোরদার করেছি। বুড়িগঙ্গার ২৩ কিলোমিটার ড্রেজিং করা হবে। ৪ মিলোমিটার ড্রেজিংয়ের কাজ চলছে। গড়াই নদী ৩০ কিলোমিটার ড্রেজিংয়ের জন্য চীনা কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়া হয়েছে। যমুনা নদীর বঙ্গবন্ধু সেতুর উত্তরে ২ কিলোমিটার, যমুনা থেকে ধরলা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার ্এবং ধলেশ্বরী থেকে বুড়িগঙ্গা ১৬৫ কিলোমিটার ডেজিংয়ের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। একনেকে পাশ হলে কাজ শুরু হবে।
পানি সম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন বলেন, দেশ বাঁচাতে হলে, ‘কৃষিকে বাঁচাতে হলে নদী বাঁচাতে হবে। এ ক্ষেত্রে পানি সম্পদমন্ত্রণালয়ের ভ’মিকাই মুখ্য। সে লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পানি সম্পদ মন্ত্রণায়ল কাজ করে যাচ্ছে। ’
তিনি বর্তমান সরকারের নানমুখি উন্নয়ন কর্মকান্ডের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আমি আশাবাদী আমাদের সরকার নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে। আমাদের ছোট একটি ব-দ্বীপে ১৬ কোটি মানুষের বাস। এই মুহুর্তে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণটা জরুরি। এছাড়া দ্রব্যমুল্য নিয়ন্ত্রণ এবং প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে পারলে মানুষ সন্তুষ্ট থাকবে।
বাংলাদেশ সময় ১৯২০ ঘন্টা, মার্চ ৩, ২০১১