ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

আজাদুর রহমানের কবিতা

শিল্প-সাহিত্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২১
আজাদুর রহমানের কবিতা

গন্ধম

আঙুলের ডগায় চেপে ধরেছো তাঁর নাম,
সে মিথ্যেবাদী,
সে কথা দিয়ে কথা রাখবে না,
ভুল বুঝবে, তারপর কিছু না বলে
একদিন 
অন্যকোথাও চলে যাবে,
তুমি জানো
এন্ড্রয়েডের মতো সেও চুষে খাচ্ছে 
তোমার চোখ।  
পুরুষ- শুধু এই সত্য জেনে,
তুমি চেপে ধরে আছো তার নাম।

 

পড়তে পারছি না

তোর নাম ভুলে যাচ্ছি,
তোকে পড়তে পারছি না
পড়তে গেলেই যতি চিহ্ন খুলে খুলে পড়ছে,
বাক্যের ভিতর অক্ষরগুলো ঠিকই আছে,
শুধু মাঝখান থেকে আ-কার, উ-কার,
ঋ-কার, র ফলা, য ফলা, দাড়ি, কমা-সব
ঝর ঝর করে ঝরে যাচ্ছে।
তোর ঠিকানা 
তোর মুখ মনে আছে,
তোর কপালের কাটা দাগ
তোতলানো স্বভাব,
কথায় কথায় রেগে ওঠা,
বাম হাতের কনিষ্ঠ আংগুল,
বাঁকানো চুলের সিঁথি,
মন খারাপের ঠোঁট,
-সব মনে পড়ছে।  
তোর নাম ভুলে যাচ্ছি,
তোকে পড়তে পারছি না।


বাংলাদেশে

কী আশ্চর্য! 
আমি কাঁদা ভালবেসে ফেলেছি!
আমি কি রাজহাঁস! বাংলাদেশের
বৃষ্টি এত ভাললাগে কেন!
যেন বৃক্ষবীজ 
জন্মের আশায় পুঁতে রয়েছি মাটিতে!
গরীব মানুষের মনের মত
মন ভাল লাগছে
যেন লিখে দিচ্ছি নাম
পিতার ব্যাকুলতার ভিতর।
কী আশ্চর্য!
ভাটবনের ভ্যাপসা গরম ভাপে
ভরে আছে মাতৃজঠরের ঘ্রাণ,
যেন নদী পেলেই মাছের সাথে মাছ হয়ে
ভেসে যাচ্ছি নুহু নবীর গজলে,
যেন কোথাও কোন ইউরোপে
ড্যাফোডিলে, বিস্তর অট্রালিকায় 
গ্লাস ভরা লাল মোহে 
-মন থাকছে না।
কী আশ্চর্য!
এখানে বাংলাদেশে,
কাঁদছে আকু্‌ল, 
যেন পিতৃহারা বকুল ফু্‌ল,
মন পড়ে যাচ্ছে এখানে, 
বাংলাদেশে।


উনিশের আশায়

যে কিশোরী গলার কাছে বিঁধে ছিল,
তার মুখ মনে নেই।
এখন পিছন ফিরে তাকালে
বিষন্ন ভাটফুল ঢলে পড়ে বুকে।
স্নানের গুঞ্জন, কাল্পনিক পদচিহ্ন
সব
শুন্য মনে হয়।
মনে হয়- 
তোকে বলা দরকার,
কেন আঠারোটা শুন্যের পরও
উনিশের আশায় বসে থাকতে হয়।

 

 

একদিন আচমকা

আপনি হয়ত স্বপ্নের ভিতরে
জেগে আছেন, আর চারপাশে
যা কিছু ঘটছে তা সব আসলে
বানানো গল্প, 
আপনি বুঝতে পারছেন না,
কখনওবা ক্ষীণ সন্দেহে
স্বপ্নের ভিতরেই 
আপনি গায়ে চিমটি কাটছেন,
ব্যাথাও পাচ্ছেন, নিশ্চিত হয়ে
ফের স্বপ্নের ভিতরেই দিব্যি
একটা জীবন পার করে দিচ্ছেন...।
...তারপর 
একদিন আচমকা ঘুম ভেংগে গেলে
দেখবেন
আপনি কবরে শুয়ে আছেন!

 

ভেবে নাও

মনে করো সেই বাল্যকাল, 
হামাগুড়ি দিয়ে নামছে দুপুর,
নিচে ধাবমান ভাঁটবন, 
টিয়ার কপালে লাল টিপ।
ভেবে নাও, একটু পরেই বিকেল,
ঝাঁকে ঝাঁকে নামছে অন্ধকার, 
জোনাকি মৌ মৌ চারপাশ।
মনে করো হঠাৎ মৃত্যু সংবাদ, 
ঘুমের মধ্যে ভেসে উঠছে লাশ, 
আর তুমি স্বর্গ থেকে নরক,
নরক থেকে স্বর্গ-এই করতে করতে
শেষমেশ নরকে চলে যাচ্ছো।
মনে করো কিছুই হয় নি,
তোমার হয়ে অন্য কেউ
বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে
উড়ে যাচ্ছে আকাশে।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।