ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

‘শওকত আলী না থাকলেও বাঙালি তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণে রাখবে’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২০
‘শওকত আলী না থাকলেও বাঙালি তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণে রাখবে’

ঢাকা: দেশভাগের পর বাংলা সাহিত্যে নতুন ধারা সৃষ্টিতে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন কথাশিল্পী শওকত আলী তাদের মধ্যে অন্যতম। বাংলা সাহিত্যে তার স্থান চিরস্থায়ী। আমাদের মধ্যে তিনি না থাকলেও বাঙালি তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণে রাখবে।

দেশের বরেণ্য কথাসাহিত্যিক শওকত আলীর স্মরণসভায় এমন কথা বললেন বক্তারা।

বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর বাংলামটরে অবস্থিত বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ইসফেন্দিয়ার জাহিদ হাসান মিলনায়তনে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘গণপ্রকাশন’ শিল্পীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করে।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। সভাপতিত্ব করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন। শওকত আলীর ওপরে আলোচনা করেন কবি ও কথাসাহিত্যিক মুজতবা আহমেদ মুরশেদ। বক্তব্য রাখেন শওকত অলীর সন্তান আসিফ শওকত কল্লোল, নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজের প্রিন্সিপাল রবিউল হোসেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন গণপ্রকাশনের পরিচালক মাহমুদুল হাসান মানিক।

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান তার বক্তব্যে বলেন, বাংলা কথাসাহিত্যে শওকত আলীর স্থান চিরস্থায়ী। তার প্রদোষে প্রাকৃতজন একটি অসাধারণ উপন্যাস। তিনি এই উপন্যাসে নতুন ভাষা নির্মাণ করেছেন পুরাকালের ভাষার আশ্রয়ে। এমনইভাবে তার অন্য উপন্যাসে সেই সময়ের রাজনীতি, সমাজনীতি এবং মানুষের জীবনে সেসবের কেমন প্রভাব পড়েছিল তা অনুপুঙ্খভাবে উঠে এসেছে।

‘শওকত আলীর উপন্যাস আমাদের মধ্যে বিশিষ্ট, এটি সবাই স্বীকার করে নিয়েছেন। আজকে যখন তিনি নেই তখনো তার রচনা সমাদর লাভ করছে। তিনি সাহিত্যের ইতিহাসে যে ভূমিকা পালন করেছেন তা বাংলাদেশের মানুষ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। ’

সেলিনা হোসেন বলেন, ৪৭ পরবর্তী দেশভাগের সময় নতুন সাহিত্যধারার সূচনা যার করেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন কথাসাহিত্যিক শওকত আলী। সেই সময় আমাদের লেখকরা ৫০ এর দশকের পরে নতুন ধারায় প্রবাহিত করেছেন বাংলাদেশের সাহিত্যধারাকে। ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় নতুন সাহিত্য ধারা সৃষ্টি হয়েছে। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত যারা কথাসাহিত্যে নেতৃত্ব দিয়েছেন কথাশিল্পী শওকত আলী তাদের মধ্যে অনন্য। তার রচনা দৃষ্টির আড়ালে লুকিয়ে থাকা মানুষের জীবনকে অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে এসেছে। শওকত আলীর রচনা তরুণ লেখকদের কাছে পথপ্রদর্শকের মতো- এটাই শওকত আলীর সার্থকতা। যাকে অবলম্বন করে তরুণ লেখকরা রচনার শক্তি খুঁজে নিচ্ছেন।

রাশেদ খান মেনন বলেন, শওকত আলী নিভৃতচারী ব্যক্তিত্ব ছিলেন কিন্তু তার রচনা বাংলা সাহিত্যে প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে। সেগুলো সাহিত্যে নির্দিষ্ট ছাপ রেখে গেছে। তার রচনায় বাংলার একটি সময়কাল ইতিহাসের মতো উঠে এসেছে। বাংলার অতীত, ঐতিহ্য, সংগ্রাম তার রচনায় উঠে এসেছে নানা মাত্রায়। তার অনুপম ভাষা, লেখনী শৈলী মানুষকে আকৃষ্ট করে দারুনভাবে।

রবিউল হোসেন বলেন, কথাশিল্পী হিসেবে শওকত আলীর রচনায় বাংলার মাটি ও মানুষের যন্ত্রণা প্রাধান্য পেয়ছে।

মুজতবা আহমেদ মুরশেদ বলেন, শওকত আলী একদিকে সাহিত্যে তুলে ধরেছেন সামাজিক অবক্ষয়, অন্যদিকে মেলে ধরেছেন সমাজে চলমান অন্যায় ও মানুষের ওপর চলা উৎপীড়নের কথা।

আসিফ শওকত কল্লোল বলেন, বাবা নেই কিন্তু তাকে নিয়ে তার লেখা নিয়ে দেশে-বিদেশে গবেষণা হচ্ছে। তার মৃত্যুর পর এখন খুঁজে পাচ্ছি শওকত আলীর রচিত কবিতা, বিষয়ভিত্তিক নানা গবেষণা ও লেখা। এখন দেখছি, তিনি ছিলেন বহুমাত্রিক।

ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সমাজ তত্ত্বের আলোকে গল্পভাষা বুনন কৌশলে বাংলা সাহিত্যে এক বিরল প্রতিভা ছিলেন কথা সাহিত্যিক শওকত আলী। একদিকে যেমন তিনি নাগরিক মধ্যবিত্তের ভাষ্যকার ছিলেন অন্যদিকে ছিলেন এই অঞ্চলের প্রান্তিক গণমানুষের অনন্য কথাকার। পাঠকনন্দিত, নিভৃতচারী ও প্রান্তিক মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে থাকা এই মানুষটি ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি ঢাকায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২০
এইচএমএস/এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।