ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

সৈয়দ তারিকের কবিতা পাঠ ও আলোচনা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২০
সৈয়দ তারিকের কবিতা পাঠ ও আলোচনা

ঢাকা: কবিতার স্বতন্ত্র এক স্বরের অধিকারী কবি সৈয়দ তারিক। তিনি পাঠ করলেন নিজের কবিতা। আলাপনে বললেন নিজের গল্প। মগ্ন হয়ে শুনলেন তাকে নিয়ে সুহৃদদের আলাপন।

রোববার (২৬ জানুয়ারি) দীপনপুরে গালুমগিরি সংঘের আয়োজনে ‘কবির কবিতা পাঠ’ তৃতীয় পর্যায়ে ছিল সৈয়দ তারিকের কবিতা পাঠ ও তাকে নিয়ে আলোচনা।  

সৈয়দ তারিককে নিয়ে আলোচনা করেন কবি ফরিদ কবির ও কবি হিজল জোবায়ের।

আরও আলোচনা করেন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের সম্পাদক কবি জুয়েল মাজহার।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন গালুমগিরি সংঘের প্রধান সমন্বয়ক শিমুল সালাহউদ্দিন।

প্রচার সহযোগিতার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আয়োজনটি সরাসরি প্রচার করে অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। এ আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে সিটি ব্যাংক।
আলাপনের শুরুতেই সৈয়দ তারিক বলেন, আমি নিজেকে অতটা জনপ্রিয়, পাঠকপ্রিয়, বন্ধুপ্রিয় মনে করি না। আমি আয়োজন করার মতো কবি নই। এ আয়োজনের জন্য আমি প্রীত ও আনন্দিত।

কবি সৈয়দ তারিককে নিয়ে কথা বলেন বাংলানিউজ সম্পাদক কবি জুয়েল মাজহার।  ছবি: রাজীন চৌধুরীআলোচনায় তিনি জানান, তার কবি হয়ে উঠার গল্প। বলেন, শৈশবে যখন বানান করে পড়তে শিখি, তখন শব্দের প্রয়োগে চমককৃত হয়েছিলাম। কবিতার ভাব ও এর আবেগ বুঝতে শিখি যখন চতুর্থ বা পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি তখন। সেই ছেলেবেলায় কবি হওয়ার বাসনা জেগেছিল মনে।  

‘ওই সময় মায়ের কাছে কবির সংজ্ঞা জানি। এরপরেই কবিতায় আকৃষ্ট হই। আমার নানাও কবি ছিলেন। তার দ্বারাও আমি প্রভাবিত হয়েছিলাম। এসব আর্কষণ থেকেই ষষ্ঠ শ্রেণিতে প্রথম কবিতা লেখি। ’

সৈয়দ তারিক বলেন, ‘অষ্টম শ্রেণিতে পাঠের সময়ে আমি পাশের বাড়ির কিশোরীর প্রেমে পড়ি। এ সময় প্রতিদিন দশটি করে কবিতা লিখি। যদিও একবছরের মধ্যে এ সম্পর্কটির ইতি ঘটে। এ আঘাত পেয়ে আমি মর্মাহত হই। এরপর দশম শ্রেণিকে আমি নাস্তিকতাবাদে ঝুঁকে যাই। এসব মিলিয়ে কবি হয়ে উঠতে শুরু করি। ’

একটু থেমে কবি বলেন, একটা পর্যায়ে কবিতা লিখবো না বলে সিদ্ধান্ত নিই। তবে ১৯৮০ সালে ঢাকা কলেজে ভর্তি হওয়ার পর আধুনিক কবিতার প্রতি আকৃষ্ট হই। একটা সময় আত্মহননের চেষ্টাও করি বেশ কয়েকবার। কিন্তু জীবনশক্তি প্রবল হওয়ার কারণে সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ১৯৯৫-১৯৯৬ সালের দিকে সবকিছু ছেড়ে গৃহবন্দী হই এবং জড় পদার্থে পরিণত হই। সে সময়ে নানা বিষয়ে পড়াশোনা করি। বিশেষ করে দর্শন ও ধর্ম নিয়ে। এ সময় আমি নাস্তিকতাবাদ থেকে বেরিয়ে আসি।

কবি সৈয়দ তারিক।  ছবি: রাজীন চৌধুরী মুক্ত আলোচনা পর্বে কবি কাজল শাহনেওয়াজের এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ তারিক বলেন, কবিতা এবং আমি আলাদা নই। আমার যাপন, প্রকাশ ও অস্তিত্বে কবিতা মিশে আছে। কবিতার সঙ্গে আমার সুফি ভাবধারা মিশে আছে। সুফিচর্চা ব্যক্তিগত চর্চা। এর সঙ্গে আমার কবিতাচর্চাও যুক্ত।

এক শ্রোতার কাছ থেকে তরুণদের প্রতি তার পরামর্শের বিষয়ে প্রশ্ন আসে, যার জবাবে তিনি বলেন, কোনো পরামর্শ শোনা যাবে না। নিজেকে চিনতে, বুঝতে ও জানতে হবে। নিজের ভেতরে তাকাতে হবে। আমরা বিশ্বের সবকিছুর বিষয়ে জানি। কিন্তু সবচেয়ে কম জানি নিজেকে।

আলাপনের ফাঁকে ফাঁকে সৈয়দ তারিক তার কাব্যগ্রন্থগুলো থেকে নির্বাচিত কবিতা পাঠ করেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে কবি জুয়েল মাজহার বলেন, যে জীবন যাপন করতে আমরা সাহস করিনি, সৈয়দ তারিক সেই জীবন যাপন করছেন। দেশের সর্বত্র ঘুরে বেড়াচ্ছেন, বিশ্বভ্রমণের মতো করে। তার বন্ধু ও বান্ধবীভাগ্য ঈর্ষণীয়। সৌম্যদর্শন এ মানুষটি ঈর্ষণীয় কবি ও গদ্যলেখক।

তিনি বলেন, গালুমগিরি সংঘের এ আয়োজনের সঙ্গে বাংলানিউজ সম্পৃক্ত রয়েছে। ভবিষ্যতে তারা যেসব আয়োজন করবে, তাতেও বাংলানিউজ তাদের পাশে থাকবে।

কবি ফরিদ কবির বলেন, সৈয়দ তারিকের কবিতা তার নিজের মতো। আমাদের সময়ে বা তারপরে কেউ তার মতো লেখেননি। এটাই তার বৈশিষ্ট্য। এটাই একজন কবির কাছে আরাধ্য যে, নিজের কবিতা লিখেছেন। আমি গর্বিত। কারণ, আমি সৈয়দ তারিকের সময়ে জন্মেছি।

তিনি বলেন, তিনি যে জীবন যাপন করছেন, তা আমার স্বপ্নের জীবন। আমি পারিনি, তিনি সেটা পেরেছেন। এ কারণে তাকে আমি ঈর্ষা করি।

কবি-লেখক মিলনমেলায় পরিণত হয় দীপনপুর।  ছবি: রাজীন চৌধুরীকবি হিজল জোবায়ের বলেন, সৈয়দ তারিক তার সময়ের, আমাদের সময়ের প্রতিনিধি। তিনি আশির দশকের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিত্বশীল কবি। তার সময়ের কবিদের মধ্যে একটা ইতিবাচক বাঁকবাদল ঘটেছিল। সৈয়দ তারিকের ক্ষেত্রেও হয়েছে।

‘‘১৯৯৬ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ছুরি হাতে অশ্ব ছুটে যায়’র ১৩ বছর পর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ মগ্ন তখন মোরাকাবায় প্রকাশ পায়। এ দুই কাব্যগ্রন্থের কবিতার মাঝে ব্যাপক বাঁকবাদল ঘটেছে। যা ইতিবাচক। তিনি প্রথম কাব্যগ্রন্থে মারফিন, আত্মহননের কথা বলেছেন। দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থে সুফিবাদের ছোঁয়া রয়েছে। সেখানে তিনি সে ধরনের শব্দ পরিহার করেছেন। ’’
মুক্ত আলোচনায় কাজল শাহনেওয়াজ বলেন, সৈয়দ তারিকের সফরটা কবিতার নয়, মরমীর। তার অনেকগুলো পাখা রয়েছে, কবিতা তার মধ্যে একটি।

শামসেত তাবরেজী বলেন, সৈয়দ তারিকের কবিতা আনন্দ দেয়। সেই আনন্দে তাত্ত্বিকতাবাদ রয়েছে। তার কবিতার অনুসন্ধান তাত্ত্বিক হওয়া উচিৎ।

এর আগে আলোচনার সূচনা বক্তব্যে শিমুল সালাহউদ্দিন বলেন, ২০০৫ সালে প্রথম গালুমগিরি সংঘের আয়োজনে ‘কবির কবিতা পাঠ’ আয়োজন করা হয়। প্রথম পর্যায়ে তিনজন কবি এতে অংশ নেন। এরপর ২০১২ সালে দ্বিতীয় পর্যায়ের আয়োজনে অংশ নেন দশজন কবি। তৃতীয় পর্যায়েও আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে দশজন কবির অংশগ্রহণে মাসিক আড্ডা আয়োজন করার।

উপস্থিত দর্শক-শ্রোতারা।  ছবি: রাজীন চৌধুরীঅনুষ্ঠানে দর্শকসারিতে উপস্থিত ছিলেন- কবি সাখাওয়াত টিপু, মাহফুজা শীলু, প্রবাসী কবি ফেরদৌস নাহার, শহিদুল ইসলাম রিপন, অমিতাভ পাল, সঞ্জীব পুরোহিত, চলচ্চিত্রকার রেজা ঘটক, গীতিকবি সোমেশ্বর অলি, গোলাম কিবরিয়া পিনু, আব্দুর রাজ্জাক, মতিউর রহমান, নাজিব তারেক, সামসুল আরেফিন প্রমুখ।

এর আগে কবির কবিতা পাঠের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে কবিতা পড়েছেন যথাক্রমে কবি শুভাশিস সিনহা, রায়হান রাইন, মাসুদ খান, জুয়েল মাজহার, আলফ্রেড খোকন, চঞ্চল আশরাফ, কাজল শাহনেওয়াজ, সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, শামীম আজাদ, শামসেত তাবরেজী, ফরিদ কবির।

কবিদের কবিতা নিয়ে সারগর্ভ আলোচনা করেছেন নওশাদ জামিল, পিয়াস মজিদ, সুমন সাজ্জাদ, শোয়াইব জিবরান, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, সাখাওয়াত টিপু, আজফার হোসেন, সোহেল হাসান গালিব, আব্দুন নূর তুষার, বিবি রাসেল, সলিমুল্লাহ খান, খালেদ হামিদী, খান রুহুল রুবেলসহ অনেকে।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২০
ডিএন/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।