ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

নিভৃতচারী লেখক শামীম আমিনুর রহমানকে সম্মাননা

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২০
নিভৃতচারী লেখক শামীম আমিনুর রহমানকে সম্মাননা সম্মাননা অনুষ্ঠানে নিজের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন শামীম আমিনুর রহমান। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: প্রথমে কৌতূহল-জাগানো ছোট একটি তথ্য পাওয়া, তারপর সেই তথ্যের শেকড় ধরে বিচিত্র সব উৎস থেকে আরও কিছু টুকরো টুকরো তথ্য জোগাড় করে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে কাহিনী। সেই কাহিনী উদ্ধার গোয়েন্দা-গল্পের রোমাঞ্চের তুলনায় কোনো অংশে কম নয়। আর এমন রোমাঞ্চকর এক লেখকের নাম শামীম আমিনুর রহমান। নিভৃতচারী এই সামাজিক ইতিহাসের গবেষককে এবার জানানো হলো সম্মাননা।

শনিবার (২৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে গুনী এ লেখককে নিয়ে সম্মাননা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে প্রকাশনা সংস্থা ‘ম্যাগনাম ওপাস’। এসময় তাকে ক্রেস্ট দিয়ে এবং উত্তরীয় পরিয়ে সম্মাননা জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। লেখককে নিয়ে আলোচনা করেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক লুভা নাহিদ চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক আলী ইমাম এবং স্থপতি নিখিল চন্দ্র গুহ। বাংলাদেশ স্থাপত্য ইন্সটিটিউটের সভাপতি জালাল আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ‘ম্যাগনাম ওপাস’র প্রকাশক আনোয়ার ফরিদী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, অতীতের গর্ভে বর্তমানের সৃষ্টি। তাই শেকড়ের দিকে না গেলে একটা তলাবিহীন ঝুঁড়ির মতো অবস্থা দাঁড়ায়। লেখক শামীম আমিনুর রহমান তেমনি ইতিহাস থেকে তথ্য নিয়ে শেকড় খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। সস্তা বাহবা এবং গতানুগতিক কাজের বাইরে এসে সৃজনশীল কাজ করেন। তার এমন কাজ আমাদের এবং ইতিহাসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ইতিহাস মানুষকে স্থায়িত্ব দেয়। ইতিহাস না জানলে মানুষ শেকড়হীন হয়ে যায়। একই সঙ্গে শিল্প-সাহিত্যের সঙ্গে সম্পৃক্ততা না থাকলে একজন মানুষ পরিপূর্ণ মানুষ হতে পারেন না। আমাদের প্রত্যেকের ভেতর মানবিকতার বোধ প্রয়োজন। শামীম আমিনুর রহমানের ভেতর সেই বোধটি কাজ করে। তার একটি অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টি আছে। একজন লেখকের জন্য এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।

এসময় তিনি ঢাকার ছোট কাটরা, বড় কাটরা এবং সংলগ্ন নদীর তীরসহ ঢাকা নগর জাদুঘর পুনরুদ্ধারের জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

শামিম আমিনুর রহমানের সঙ্গে ৪০ বছরের বন্ধুত্বের কথা উল্লেখ করে লুভা নাহিদ চৌধুরী বলেন, শামীমের মধ্যে অনুসন্ধান ও ইতিহাসপ্রীতি রয়েছে। তিনি এবং আমি একসঙ্গে অনেক কাজ করেছি। এর মধ্যে তার প্রথম বই 'ঢাকার প্রথম আকাশচারী: ভান্তাসেল' (২০০০) এর অনুবাদ এবং পূর্ব বাংলার শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পীদের নিয়ে করা কাজ উল্লেখযোগ্য।

সাহিত্যিক আলী ইমাম বলেন, শামীম আমিনুর রহমান নিভৃতচারী গোয়েন্দা লেখক। তিনি ইতিহাসের মতো কঠিন বিষয়কে পাঠকের কাছে সহজভাবে তুলে ধরেছেন। তার সাহিত্যে ইতিহাসের উপাদান নিয়ে কাজ করেছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ঢাকার প্রথম আকাশচারীর সূত্র দিয়েছেন মুনতাসীর মামুন আর সেই রহস্যের দ্বার উম্মোচন করেছেন শামীম আমিনুর রহমান।

আয়োজনে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে শামীম আমিনুর রহমান বলেন, আমি আসলে লেখক না, বাই চান্স লেখক। বায়োস্কোপ করার ইচ্ছে ছিল প্রচন্ড। ছোটবেলা থেকে যখনই বায়োস্কোপ বা চলচ্চিত্র বানাতে গিয়েছি, আমার বন্ধু এবং মুনতাসীর মামুন স্যার বলেছেন, আগে লিখ, প্রকাশ করো, তারপর চলচ্চিত্র। সেখান থেকেই লেখক হয়ে উঠেছি, অথচ এখন পর্যন্ত কোন চলচ্চিত্র বানাতে পারিনি। ইতিহাস আমার ভালো লাগতো, সেই ভালোবাসা থেকেই ইতিহাস নিয়ে লেখালেখি।

আলোচনা ও সম্মাননা আয়োজন শেষে অনুষ্ঠিত মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে সঙ্গীত পরিবেশন করেন ব্যান্ড দল 'জলের গান'।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২০
এইচএমএস/এবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।