ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

শহরের মঞ্চে ঐতিহ্যের পালাগান

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২০
শহরের মঞ্চে ঐতিহ্যের পালাগান

সিরাজগঞ্জ: গ্রামেও এখন সচরাচর পালাগানের আসর বসে না। অনেকটা হারিয়ে যাওয়া দেশীয় সংস্কৃতির এই অনন্য সম্পদের কথা আবার নতুন করে সবাইকে মনে করিয়ে দিতেই যেন বসলো পালাগানের আসর। সে গানের সুর-ছন্দ আর যুক্তি-তর্কে প্রাণ জুড়ালো শহরের দর্শক-শ্রোতাদের।

সোমবার (১৩ জানুয়ারি) রাতে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী অডিটোরিয়ামে সিরাজগঞ্জ বাউল শিল্পীগোষ্ঠীর ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ পালাগান অনুষ্ঠিত হয়। ‘গুরু-শিষ্য’ শীর্ষক পালাগানের লড়াইয়ে অংশ নেন সিরাজগঞ্জের খন্দকার আয়নাল বয়াতী ও নওগাঁর নিলুফা ইয়াসমিন।

বিলুপ্তপ্রায় পালাগানের ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখার প্রত্যয়ে শুরু হওয়া পরিবেশনা এগিয়ে যায় সহজিয়া সুরের পধ ধরে। সহজিয়া সেই সুর আর বাণীতে উঠে আসে জীবনের দর্শন থেকে শুরু করে আধ্যাত্মিকতা, প্রেম আর মাটির ঘ্রাণ। বহু দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতিতে এদিন অনুষ্ঠান শুরুর বেশ আগেই সরব হয়ে ওঠে উৎসব আঙিনা।

 

গ্রাম বাংলার সংস্কৃতির প্রাণ পালাগান বাউল শিল্পীদের পরিবেশনায় শহরের মঞ্চে মোহিত হয়ে উপভোগ করেন অসংখ্য দর্শক-শ্রোতা। তাইতো গভীর রাত পর্যন্ত অডিটোরিয়াম মঞ্চে ছিল উৎসুক জনতার উপচে পড়া ভিড়। বিশেষ করে দীর্ঘদিন পর শহরের বুকে এমন পালাগান দর্শকদের মাঝে যে দারুণ সাড়া ফেলেছে, তা উপস্থিতি দেখেই বোঝা যায়।

এ বিষয়ে কথা হলে চা দোকানি মানিক হোসেন বলেন, পালাগান আমার সবসময়ই অত্যন্ত পছন্দের একটি বিষয়। আগে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে পালাগান শুনতাম। এখন তো আর আগের মতো আয়োজন হয় না। তাই আজ শহরে পালাগানের খবর পেয়ে দোকান বন্ধ করেই চলে এসেছি পালা দেখতে।

কলেজ পড়ুয়া নবাব, সাকিব ও রাজুসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, বাংলা সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী একটি সম্পদ পালাগান। সেটি বই পড়ে জানলেও কখনো নিজ চোখে তা দেখা হয়নি। আজ এটি দেখে মনে হচ্ছে সত্যিই উপভোগ করার মতো একটি আয়োজন।

সিভিল সার্জন অফিসের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং এসবি রেলওয়ে কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম তালুকদার বলেন, কম করে হলেও অন্তত ১০ বছর পরে পালাগান শুনছি! বর্তমানে এ ধরনের অনুষ্ঠান শহর তো দূরের কথা, গ্রামেও হয় না। তবে মাঝে মাঝে এমন বাউল গান বা পালাগানের আসর করলে মন্দ হয় না।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম-পরিচালক ও সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল হামিদ সরকার বলেন, বাউল গান, পালাগান বাঙালি সংস্কৃতির প্রাণ। এ গান আমাদের টানে। আমি মাঝে মাঝেই নিজের বাসায় বাউলদের ডেকে পালাগান শুনি। তবে মঞ্চে এ ধরনের পালাগান অত্যন্ত শ্রুতিমধুর। তবে বাউল শিল্পীরা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের দিকে সবারই একটু নজর দেওয়া প্রয়োজন।

এখন সচরাচর পালাগানের আসর বসে না বললেই চলে।  ছবি: বাংলানিউজ

আয়োজন নিয়ে সিরাজগঞ্জ বাউল শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি সঞ্জীব সরকার বাংলানিউজকে বলেন, ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রথম দিন রোববার (১২ জানুয়ারি) বাউল গান ও আজ দ্বিতীয় দিন পালাগানের আয়োজন করা হয়েছে। গ্রাম বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্যের এ গানকে মানুষ যে এখনো ভালবাসে, তা বিপুল সংখ্যক দর্শকের উপস্থিতি দেখলেই বোঝা যায়।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বিশ্বাস বলেন, আমাদের সংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক পালাগান। এক সময় গ্রামের কৃষক-মজুর পালগান শোনার জন্য দূর-দূরান্তে হেঁটে যেতেন। এখন এমন আয়োজন খুব একটা হয় না। শহরের মঞ্চেও প্রচুর দর্শক উপস্থিতি প্রমাণ করে এখনো বাংলায় ঐতিহ্যবাহী বাউলগান ও পালাগানের ভক্ত রয়েছে।

এ সময় জেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান মল্লিক, কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী জান্নাত আরা হেনরী, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট শহীদুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস রবিন, সিরাজগঞ্জ জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ গৌরসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিপুল সংখ্যক মানুষ এ পালাগান উপভোগ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২০
এইচএমএস/এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।