ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

আন্তর্জাতিক পাঠকের হাতে মোস্তফা কামালের উপন্যাস

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৮
আন্তর্জাতিক পাঠকের হাতে মোস্তফা কামালের উপন্যাস মোস্তফা কামালের তিনটি উপন্যাস ‘থ্রি নভেল’ নামে এক মলাটে প্রকাশ করে নোশনপ্রেস

ঢাকা: মোস্তফা কামাল বাংলাদেশের জনপ্রিয় ঔপন্যাসিকদের অন্যতম। আড়াই দশকের বেশি সময় ধরে লেখালেখি করছেন। তার উপন্যাসের সংখ্যা প্রায় একশ’। সাংবাদিকতায় দীর্ঘ সময় পার করেছেন। এখনও সাংবাদিকতার পেশায়ই নিয়োজিত আছেন। পেশার সঙ্গে তাল মিলিয়ে লেখালেখিও চালিয়ে যাচ্ছেন। ‘সময়ের প্রতিধ্বনি’ এবং ‘রঙ্গ ব্যঙ্গ’ নামে দু’টো কলাম লিখে চলেছেন এখনও। সাংবাদিকতার পেশায় কাজ করতে গিয়ে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন। ভুটান, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, মালয়েশিয়া, জাপান, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। ‘জননী’, ‘পারমিতাকে শুধু বাঁচাতে চেয়েছি’, ‘জিনাত সুন্দরী ও মন্ত্রী কাহিনী’ ‘হ্যালো কর্নেল’, ‘অগ্নিকন্যা’, ‘অগ্নিপুরুষ’ তার জনপ্রিয় উপন্যাস।

মোস্তফা কামালের তিনটি উপন্যাস ‘থ্রি নভেল’ নামে এক মলাটে প্রকাশ করেছে নোশনপ্রেস। নোশনপ্রেস মূলত ভারত সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া ভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক প্রকাশনা।

এ প্রতিষ্ঠানটি আমাজনসহ আরো প্রায় দশটি বই-বিপণনী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মোস্তফা কামালের এই পুস্তকটি পাঠকদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে।

এই সময়ের মানুষদের কাছে পৃথিবী ছোট হয়ে আসছে। জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো প্রকাশনা জগতও পৃথিবীর নানা প্রান্তে খোঁজ খবর নেওয়ার চেষ্টা করছে। বিশ্বসাহিত্যের আনাচে আনাচে যে সব রত্ন অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে সেগুলো খুঁজে বের করে আলোর সামনে নিয়ে আসার ব্যাপারে প্রকাশনা সংস্থাগুলো আগের চেয়ে অনেক বেশি তৎপর হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতার একটি প্রমাণ মোস্তফা কামালের উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ।

তার উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমাদের সাহিত্যের পরিচিতি বিশ্বপাঠকের কাছে তুলে ধরতে অনুবাদের বিকল্প আর কিছু নেই। আজকের পাঠকের কাছে সারা বিশ্বের সাহিত্যের চাহিদা তৈরি হয়েছে। আমাদের সাহিত্য অন্যান্য এলাকার সাহিত্যের তুলনায় কোনো দিক থেকে নিম্নমানের নয়। বরং যে সব সাহিত্য বড় বড় পুরস্কার পাচ্ছে সেগুলোর সঙ্গে আমাদের সাহিত্য তুলননীয় হতেই পারে। বিশ্বপাঠকের চাহিদার প্রতি নজর দিয়ে প্রকাশকরাও ইদানিং সচেতন হয়ে উঠেছেন। সুতরাং সবার কাছে আমাদের সাহিত্যের পরিচিতি বাড়ানোর জন্য আমরাও তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করব। ’মোস্তফা কামালের ফাইল ফটোমোস্তফা কামালের তিনটি উপন্যাসের মধ্যে প্রথমটির নাম ‘তালিবান পাক কান্ল অ্যান্ড আ ইয়াং লেডি’। আফগানিস্তানে তালেবানদের উত্থান এবং তাদের উত্থানে পাকিস্তানসহ আশপাশের এলাকায় সাধারণ মানুষের জীবনে ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা স্থান পেয়েছে এ উপন্যাসটিতে। বাংলাদেশের ছেলে সাকিব পাকিস্তানে গিয়ে তালেবানদের হাতে আটক হয়ে যে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা অর্জন করে সেটাই মূলত তৈরি করেছে এ উপন্যাসের আখ্যান। উপন্যাসের শুরুতে বোঝা যায়, সাকিবের সঙ্গে পাকিস্তানী মেয়ে মাহাভেসের গভীর প্রেম আছে। সামাজিক এবং রাজনৈতিক কারণে বিয়ে হতে বিলম্ব হচ্ছে। শুরুতে নিছক প্রেমকাহিনী ভাবলে দোষের কিছু নেই। উপন্যাস কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার পরে দেখা যায় ভয়াবহ অবস্থার চিত্র। তালেবানদের হাতে ধরা পড়া সাকিবের সঙ্গে পাঠকেরও দমবন্ধ অবস্থা তৈরি হতে পারে। অবশ্য শেষ পর্যন্ত সাকিব মুক্ত হতে সক্ষম হয়। বাইরের জগতের আলো দেখতে পায় সে। প্রথম পুরুষে বর্ণিত উপন্যাসের শেষের দিকে মুক্তিলাভের পরে প্রেমিকাকে দেখে সাকিবের মনে হয়:

Coming out of the dark cave, I got dumbfounded seeing Mahaves; I had never thought of seeing her at Khyber Agency, not even in my dreams. I could not believe myself. I was thinking whether I was wrong, whether I was in a hallucination. Was there any reason to think that it was really true?

এ উপন্যাসটি থেকে মোস্তফা কামালের দূরদৃষ্টির পরিচয় পাওয়া যায়। সাংবাদিক হিসেবে আন্তর্জাতিক রাজনীতির চেহারা খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে তার। তার এ উপন্যাসটি প্রকাশের কয়েক বছরের মধ্যেই পাকিস্তানের মাটিতে যেসব ঘটনা ঘটে সেগুলোরই আগাম ইঙ্গিত পাওয়া যায় এই উপন্যাসে। ওসামা বিন লাদেনের পাকিস্তানে অবস্থান, ২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর তেহরিক-ই-তালেবান জঙ্গিগোষ্ঠীর ছয় বন্দুকধারী সশস্ত্র আক্রমণ করে পাকিস্তানের পেশোয়ারে একটি আর্মি পাবলিক স্কুলে। স্কুলে ঢুকে তারা শিশু এবং স্কুলের শিক্ষক কর্মকর্তাদের ওপরে নির্বিচারে গুলি চালায়। ১৩২ জন শিশুসহ মোট ১৪৯ জনকে হত্যা করে তারা।

এ উপন্যাসটি অনুবাদ করেছেন দুলাল আল মনসুর।

মোস্তফা কামাল নিজে অনুবাদ করেছেন দ্বিতীয় উপন্যাস ‘ফ্লেমিং ইভেনটাইড’। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পরপরই পরাজিতশক্তি আবার মাথা তুলে দাঁড়ায়। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি দুষিত হয়ে পড়ে। ধূর্ত শাসকের প্রশ্রয়ে স্বাধীনতাবিরোধীরা খুব দ্রুত ক্ষমতার স্বাদ নিতে শুরু করে। তাদের স্বাভাবিক চরিত্র অনুযায়ী ভালো মানুষদের ওপরে অত্যাচার শুরু করে তারা। সুযোগ পেলেই দেশপ্রেমিক মানুষদের বিপদে ফেলতে চেষ্টা করে। মন্দ মানুষদের কুচক্রে ভালো মানুষদের জীবনের ভয়াবহ অবস্থার চিত্রে তৈরি হয়েছে ‘ফ্লেমিং ইভেনটাইড’ উপন্যাস।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের এরকম মন্দ মানুষদের প্রতিনিধি হিসেবে আছে রাজাকার শরিফুল আজম এবং বিপন্ন দেশপ্রেমিক মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে দেখা যায় হুমায়ূন কবিরকে।

রাজাকার শরিফুল আজম ষঢ়যন্ত্র করে মামলা করে হুমায়ূন কবিরের ছেলে আকমল কবিরের নামে। পুলিশ হেফাজতে নিহত হয় আকমল কবির। রাস্তায় প্রতিবাদী সাধারণ মানুষের মিছিলের স্লোগানের কথা থেকে হুমায়ূন কবির বুঝতে পারে, তার ছেলের মৃত্যু হয়েছে পুলিশের হাতে। স্বভাবিকভাবেই তার প্রতিক্রিয়া শোচনীয়। তবে ট্র্যাজিক ঘটনার মধ্য দিয়ে উপন্যাস শেষ হলেও প্রতিবাদের চিত্রটিও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। রাস্তার মিছিলের মাধ্যমে ঔপন্যাসিক বুঝিয়ে দেন, অপশক্তি বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না। ন্যায়ের পক্ষের মানুষ এক সময় জেগে ওঠে। তারাও প্রতিবাদ করতে জানে।

উপন্যাসত্রয়ীর তৃতীয়টির নাম ‘দ্য ফ্ল্যাটারার’। আমাদের সমাজের নানা স্তরে ছড়িয়ে আছে দুর্নীতির মতো ব্যাধি। দুর্নীতির প্রসারে বিশেষ ভূমিকা রাখে তোষামোদ। তেলবাজ বা তোষামোদকারীরা নিজেদের স্বার্থের টানে অবিরত ওপরের মহলে তোষামোদ করে যায়। নিজ নিজ স্তর থেকে তারা ওপরের ব্যক্তিদের মনোরঞ্জনের চেষ্টা করে যায়। এরকম সামাজিক বাস্তবতা নিয়ে তৈরি হয়েছে মোস্তফা কামালের এ উপন্যাসটি। এখানে প্রধান তেলবাজ হিসেবে আছে তেলাওয়াত, হাবিবুর রহমান প্রমুখ চরিত্র। তারা নিজেদের স্বার্থ রক্ষার তাগিদে ওপরের স্তরের ব্যক্তিদের তোষামোদ করে বেড়ায়। ওপরের স্তরে যারা থাকে তাদের নাম প্রচারের জন্য নানাবিধ অপকৌশলের আশ্রয় নিতে দেখা যায়।

বড় বড় পদে বসে থাকা মানুষরা অহরহ অপরাধ করে যাচ্ছে নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষার্থে। তারা প্রকৃত শিক্ষিত নয়; তারা আপাত-শিক্ষিত। কিংবা বলা যায়, তারা সব সার্টিফিকেটধারী স্বার্থপর মানুষ। এ কাজ করার জন্য তারা নিজেদেরই আশপাশের মানুষদেরকে বঞ্চিত করতে কুণ্ঠিত হয় না। তবে নিজের অবস্থান অটুট রেখে ওপরের দিকে ওঠার এই তোষামোদী কৌশলটা অবিরাম সতর্কতার সঙ্গেই চালিয়ে যেতে হয়। সে কারণেই তোষামোদকারীরা জীবনে নিরিবিলি শান্তি পায় না। তাদের সতর্ক নজর রাখতে হয়, কোনো ফাঁক দিয়ে অন্য কেউ যেন ওপরে উঠতে না পারে। যেমন উপন্যাসের শেষও দেখা যায় দেলাওয়াতের দুশ্চিন্তার শেষ নেই:

Mr. Telawat talks to himself, ‘I am the greatest flatterer of the office to be sure. Still I am being defeated! It means there is a greater flatterer than me! Who is that flatterer? Who is that flatterer!’

‘দ্য ফ্ল্যাটারার’ উপন্যাসটির অনুবাদক মাছুম বিল্লাহ।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৮
টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।