ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

অস্তিত্বে প্রাণ জাগায় সন্ত্তরের অনুরণন

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৭
অস্তিত্বে প্রাণ জাগায় সন্ত্তরের অনুরণন ছবি-বাংলানিউজটোয়েটিফোর.কম

ঢাকা: পেছনে বিস্তীর্ণ জলরাশি। সমুদ্রের তীর থেকে সে জলে পাতা পড়ে। তাতে শব্দ হয়, সে শব্দ জল থেকে সেচে মানবের হৃদয়ে পৌঁছে দেয় শিবকুমার শর্মা। হৃদয়ে সে শব্দের জোয়ার আসে শিল্পীর সন্ত্তর বেয়ে। তা জাগায় অনুরণন, অস্তিত্বের গভীরে নাড়া দিয়ে জাগায় প্রাণ।

পাঁচ দিনব্যাপী বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সংগীত উৎসবের দ্বিতীয় দিনের আয়োজনে পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা তার সন্ত্তরের মৃদু ঝঙ্কারে শান্ত করেন হাজারো দর্শক-শ্রোতার মনকে। সে সুর-ঝঙ্কার কুয়াশার রাতে নিঃসীম প্রকৃতিতে লীন হতে প্রেরণা দেয়।

তিনি পরিবেশন করেন রাগ ঝিঁঝোটিতে আলাপ, জোড়, ঝালা, গৎ ও পাহাড়ি ধুন। এসময় তার সঙ্গে তবলায় ছিলেন যোগেশ শামসি ও তানপুরায় ছিলেন তাকাহিরো আরাই। সম্মিলিত আয়োজনের শুদ্ধতম সুরের সে অনুভবই যেন হাজার বছর ধরে লালিত সুরের মূল ধারা। যা দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে।

ছবি-বাংলানিউজটোয়েটিফোর.কমবুধবার (২৭ ডিসেম্বর) রাতে শিবকুমার শর্মার প্রায় দেড় ঘণ্টার সুরভ্রমণ পিনপতন নিস্তব্ধতায় উপভোগ করেন হাজারো শ্রোতা-দর্শক। রক্ষণশীলদের নানা বাধার মধ্যে তিনিই কাশ্মীরী লোক সংগীতে ব্যবহৃত সন্ত্তরকে ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের মঞ্চে নিয়ে এসেছেন। তার একনিষ্ঠ অধ্যবসায়, অনবরত নিরীক্ষা ও সন্তুরকে নতুন রূপ দেওয়ার চেষ্টা এক নতুন সঙ্গীত ধারার সূচনা করেছে।

পদ্মশ্রী ও পদ্মবিভূষণ সম্মাননায় ভূষিত এ শিল্পীর পরিবেশনা মন্ত্রমুগ্ধের মতো রাতে উপভোগ করে দর্শক শ্রোতারা। কথা হয় আয়োজনে আসা আরিফুল ইসলামের সাথে। এ সঙ্গীতপ্রেমী বাংলানিউজকে বলেন, পণ্ডিত শিবকুমার শর্মার সন্ত্তরের সুর মায়া, বেদনা, আনন্দ, উচ্ছ্বাস সব অনুভূতির মিলিত এক স্বর্গীয় উপমা। তা মনকে শান্ত করে। শীত রাতে হৃদয়ে জাগায় অনন্য উঞ্চতা।

শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের রথি মহারথিদের নিয়ে রাজধানীর আবাহনী মাঠে চলছে উপমহাদেশের অন্যতম শাস্ত্রীয় সঙ্গীত উৎসব। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আয়োজনে বুধবার ২য় দিনের মূল আকর্ষণ ছিলো ওস্তাদ শিবকুমার শর্মার সন্ত্তর।

ছবি-বাংলানিউজটোয়েটিফোর.কমআবাহনী মাঠে কুয়াশার চাদরে পৌষের রাত যত গভীর হয়েছে, সুর উষ্ণতা ছড়িয়েছে পাল্লা দিয়ে। সুরে সমর্পিত ওস্তাদদের কণ্ঠের মূর্ছনা, যন্ত্র সঙ্গীতের মন মাতানো পরিবেশনা শোনার বিরল সুযোগ — এক কথায় অনবদ্য সুর ভ্রমণের সুযোগ এনে দিয়েছে পাঁচ দিনের বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উৎসব। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সে উৎসব বাংলার মানুষের মাঝে সঙ্গীত পিপাসাকে চিনিয়েছে নতুন করে।

‘সঙ্গীত জাগায় প্রাণ’ প্রতিপাদ্যে স্কয়ার নিবেদিত এ উৎসবে সহযোগিতা করছে ব্র্যাক ব্যাংক। এবারের উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে শিক্ষাবিদ এমিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানকে। সঙ্গীত উপভোগের পাশাপাশি খাবার ও পানীয়ের জন্য উৎসব প্রাঙ্গণে রয়েছে ফুডকোড। উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞদের পরিবেশনার পাশাপাশি উৎসব প্রাঙ্গণে চলছে বাংলাদেশের সঙ্গীত সাধক ও তাদের জীবনী নিয়ে সচিত্র প্রদর্শনী।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৭
এইচএমএস/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।