ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

ফুল | সালেহ মুহাম্মাদ

গল্প ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০১৭
ফুল | সালেহ মুহাম্মাদ ফুল | সালেহ মুহাম্মাদ

ভদ্রলোক গল্প লেখেন জানার পরে জিজ্ঞেস করলাম, আমাকে নিয়ে একটা গল্প লেখা যায় কিনা। তিনি বললেন,
- আপনার এরকম ইচ্ছা হওয়ার কারণ কী?

- না, আমার বুঝলেন মাঝে মধ্যে মনে হয় যে, আমি বাস্তবের থেকে গল্পের ক্যারেকটার হিসাবে বেটার।
- আচ্ছা দেখি।

একদিন আসেন আমার বাসায়।

তার বাসাটা ছোট। রাস্তার ওপারে। বাইরের দেয়ালে ফাটা ফাটা। ফাটার ভিতর ছোট গাছপালা জন্মেছে। বাসাটার চারপাশে খুব রোদ হয় দেখলাম। দরজা ধাক্কালে যে নারী খুলল তাকে আমি ধরে নিলাম তার স্ত্রী। নারীটি হেসে হেসে বললেন,
- আপনে কে আমি বুচ্ছি। আপনাকে নিয়ে একটা গল্প লেখার কথা। ভিত্রে আসেন।
ভেতরটা শীতল। বাইরের মতো রোদ নেই। একটা ছোট টেবিলে লাল লাল ফুল রাখা ফুলদানিতে। ফুলগুলি বোঝা যায় প্লাস্টিকের। নারীটি সোফায় বসছে দেখে আমিও ভাবলাম তার পাশে সোফায় বসব নাকি। পরে উল্টো দিকের চেয়ারে বসলাম। নারীটি বললেন,
- আপনার বিষয়ে জানা দরকার।
- কী জানবেন?
- যা যা জানা যায় সব। গল্প লিখতে হলে এসব লাগে।
- গল্প তো আপনার হাজব্যান্ড লিখবে। আপনার সঙ্গে এসব কথার কী দরকার?
তিনি বিরক্ত হলেন। চোখ কুঁচকে বললেন,
- আপনে কি ভাবসেন গল্প ও একা একা লিখবে! গল্প কখনও একা লেখা যায় নাকি?
- যায় না? আমি আসলে গল্প লেখার বিষয়ে কম জানি।
তিনি কী জানি চিন্তা করে বললেন,
- কমপক্ষে দু’জন বুচ্ছেন। গল্প লিখতে আপনার কমপক্ষে দু’জন লোক লাগে।
তিনি সোফা থেকে উঠে একদম আমার কাছে এসে দাঁড়ালেন। আমার খুব কেমন জানি করতে লাগল। মহিলা সুন্দরী না সেই অর্থে। কিন্তু আচ্ছন্নকারী। আমার মাথা ঘুরিয়ে গলার কাছে শুকনা শুকনা মনে হলো। আবার বুকেও কেমন সব আটকে আছে। নারীটি খুব হাসতে লাগল। তার কিরকম ধারালো শব্দের হাসি। বললেন,
- আপনার ব্যাপার আমি সব বুচ্ছি। আপনাকে নিয়ে গল্প লিখতে মজা লাগবে। একটু বসেন আপনে।
তিনি কোথায় জানি গেলেন। আমি বসে থাকতে থাকতে কাতর হয়ে উঠলাম।
তখন আমার ফোন বাজল। দেখলাম ওই লেখক ভদ্রলোকটিই করেছেন। ধরে বললাম যে,
- আপনি কই? আপনার বাসায় তো আমি বসে আছি।
- আমি তো ভাই একটু বাইরে।
- কী করছেন?
- আমি হাঁটছি। আমি সারাদিন বাইরে হাঁটি। আর রাতে এসে গল্প লিখি।
- আমি কী করব এখন তাহলে?
- আপনে কী করবেন মানে। আমার ওয়াইফের সঙ্গে দেখা হয়নি?
- হয়েছে তো।
- ওর কাছে সব ইনফরমেশন দিয়ে চলে যাবেন। আমার জন্যে ওয়েইট করবেন না।
ফোন নামিয়ে আমার কেমন রাগ হলো। নারীটি এমন আমাকে রেখে চলে গেলেন দেখে দুঃখও হলো খুব। আমি ভাবলাম এমন হতে পারে যে, তার সঙ্গে আমার কোনোদিন দেখা হয়নি বা এই বাসাতে আমি কোনোদিন আসিনি অথবা লেখক লোকটা আমাকে নিয়ে কোনদিন লিখবেন না। একটু নিশ্চিত হওয়ার জন্য একটা প্লাস্টিকের ফুল পকেটে ভরে আমি বেরিয়ে গেলাম।
বেরোনোর পর চিন্তা করে দেখলাম, আমার মন খারাপ। ভাবলাম, বাইরে ঘুরি কিছুক্ষণ। বাইরে খালি রাস্তার পর রাস্তা। কোনো রাস্তার শেষে আরেক রাস্তা। কোনো কোনো রাস্তার শেষে দেয়াল।
এভাবে সন্ধ্যা, রাত তারপরে মধ্যরাত হয়। একটা চায়ের দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে আমি সিগারেট টানতে থাকি। তখন মোবাইল বাজে। ধরলে লেখক লোকটির গলা শুনি। তিনি বলেন,
- আপনাকে নিয়ে গল্পটা লিখছি। মজা লাগছে লিখতে।
- ইনফরমেশন তো কিছুই দেইনি। কী লিখবেন আপনি?
- ওই যা দিয়েছেন তাতেই হবে। আচ্ছা এখন রাখি ভাই, পরে কথা বলবো আপনার সঙ্গে।

আমি পকেট থেকে ফুলটা বের করলাম। দেখলাম ওটাকে প্লাস্টিকের ফুল ভাবাটা ঠিক হয়নি, ওটা কুড়ি থেকে যে ফোটে ওই ধরনের ফুল। সারাদিন পকেটে থেকে থেকে মরে কালচে হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০১৭
এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।