ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

গাজীর পট, গানে মূর্ত আ কা মো যাকারিয়ার জন্মশতবর্ষ উৎসব

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০১৭
গাজীর পট, গানে মূর্ত আ কা মো যাকারিয়ার জন্মশতবর্ষ উৎসব গাজীর পট গানের সুরে সুরে বয়ান করেন মঙ্গল মিয়া ও তার দল; ছবি: হোসাইন মোহাম্মদ সাগর

ঢাকা: গাজীর পটে রয়েছে ২৭টি ভিন্ন চিত্র। প্রতিটি চিত্রের রয়েছে আলাদা আলাদা গল্প। যা বহন করে চলে সুন্দরবন এলাকার গাজী পীরের কাহিনী। তেমনি একটি পটচিত্র মঞ্চে আনলেন গায়েন মঙ্গল মিয়া। বকুলতলা ততক্ষণে মুখরিত হয়ে গেছে সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিবর্গের পদচারণায়।

কিছুক্ষণ পরেই বন্দনা শেষে “ও মন পলা রে, জঙ্গল ঘিরিলো বনের বাঘে” কথায় সুর বসিয়ে গাজীর পট গানের আরম্ভ করলেন বিক্রমপুর থেকে আসা মঙ্গল মিয়া গায়েন ও তার দল। সামনে উৎসুক জনতার ভিড়।

রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি আর ঐহিত্যকে জানতে আগ্রহী বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও। তারাও যেন মুগ্ধতায় ঠোঁট মেলালেন মঙ্গল মিয়া ও তার দলের গানে।

আর মঙ্গল মিয়া প্রতিটি চিত্র ধরে ধরে সুরে সুরে বয়ান করেন গাজীর পট গান। তার সাথে খমক বাজান জমির আলী বেপারী এবং বাওয়া বাজান ওয়াজ আলী বেপারী। তাদের পরিবেশনায় বুঁদ হয়ে পড়েন সমবেত দর্শকরা।

সোমবার (২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় এভাবেই স্মরণ করা হলো জ্ঞানতাপস আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়াকে। মহান এই ব্যক্তিত্বের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তার জন্মশতবর্ষ উৎসবের দ্বিতীয় দিনে ঢাকার স্থাপত্য বিষয়ক গ্রন্থ প্রণয়ন কমিটি আয়োজন করে গাজীর পট গান এবং গাজীর পালার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় চলে এ প্রাণের উৎসব।

এর আগে পটচিত্র নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা করেন পটচিত্র শিল্পী শম্ভু আচার্য্য। আর আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়ার গাজী কালু ও চম্পাবতী এবং গুপি চন্দ্রের সন্ন্যাস গ্রন্থ নিয়ে আলোচনা করেন বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ জামিল আহমেদ।

তিনি বলেন, আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়ার সঙ্গে আমার পরিচয় হয় তার বইয়ের মাধ্যমে। তার সংগৃহীত অষ্টাদশ শতকের পুথি দুটো আমাদের কাছে যেন এক আজগুবি গল্প। অথচ পরবর্তী সময়ে এগুলোই আমাদের ধর্মবোধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে উঠেছে।

গাজীর গানে আমরা মানুষকে শান্তির পথে, সহজভাবে ইসলামের দিকে টানতে দেখি। যেখানে ইহকালের কর্মের উপরেই নির্ভর করে পরকালের ফলাফল। অপরদিকে গুপি চন্দ্রের সন্ন্যাসে আমরা দেখি নাথ সিদ্ধাচার্যদের কায়া সাধনার মাধ্যমে বেঁচে থাকা ও অতীত সম্পদ রক্ষা করার বিষয়--যোগ করেন তিনি।
বাংলার পুথিগুলোকে বাংলার অতীত সম্পদ হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, আমাদের অতীত সম্পদগুলোকে রক্ষা করতে হবে। তবে সেটা জাদুঘরে সংরক্ষণের মধ্য দিয়ে নয়, বরং আমাদের পালাগানের মাধ্যমে।

গাজীর পালা পরিবেশন করেন মানিকগঞ্জের চান মিয়া গায়েন ও তার দল; ছবি: হোসাইন মোহাম্মদ সাগরগাজীর পট গান শেষে গাজীর পালা নিয়ে দর্শকদের সামনে উপস্থিত হন মানিকগঞ্জের চান মিয়া গায়েন ও তার দল। যা পরিবেশন করা হয় বাঁশি, মন্দিরা ও করতাল সহযোগে।

উল্লেখ্য, জ্ঞানতাপস আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া প্রত্নতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব, ইতিহাস, ভূগোল, ধর্মতত্ত্ব, পুথিসাহিত্যসহ জ্ঞানচর্চার নানা শাখায় কাজ করেছেন। প্রণয়ন করেছের প্রাচীন বঙ্গ বিষয়ক বিভন্ন আকর গ্রন্থ। তার গবেষণা এবং সকল গ্রন্থের বিষয় ছিলো প্রাচীন বঙ্গ। জ্ঞান চর্চার নানা শাখায় তিনি প্রাচীন বঙ্গকে অনুসন্ধান করে গেছেন আজীবন।

বাংলাদেশ সময়:২১১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১৭
এইচএমএস/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।