ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

ভাষার সত্ত্বা ও কঙ্কাল নিয়েও ভাবতেন আবুল মনসুর আহমেদ

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৭
ভাষার সত্ত্বা ও কঙ্কাল নিয়েও ভাবতেন আবুল মনসুর আহমেদ বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আবুল মনসুর আহমেদ স্মৃতি পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা; ছবি- কাশেম হারুন

ঢাকা: আবুল মনসুর আহমেদ একাগ্রচিত্তে অকুতোভয়ে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে দাবি করেছিলেন। আর তিনিই প্রথম ‘পশ্চিম বাংলা তাদের পঠিত ভাষার ভিত্তিতে যেমন ভাষা ব্যবহার করে, ঠিক তেমনি আমাদেরও পূর্ব বাংলার কথ্য এবং পঠিত ভাষা ব্যবহার করা উচিত’ জানিয়ে বাংলা ভাষার একটি রূপ দাঁড় করান বলে জানান এমিরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আবুল মনসুর আহমেদ স্মৃতি পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

‘ভাষা আন্দোলন ও আবুল মনসুর আহমদের চিন্তা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি আরো বলেন, পূর্ব বাংলার স্থানীয় ভাষাকে যারা তুলে ধরতে চেয়েছেন, আবুল মনসুর আহমদ তাদের মধ্যে অন্যতম।

এছাড়া বাংলা ভাষা এবং সাহিত্যে এই মহান ব্যক্তির বিশেষ অবদান রয়েছে বলেও জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অধ্যাপক হাবিব আর রহমান। তিনি বলেন, ১৯৪২ সালে পূর্ব পাকিস্তানের ‘জবান’ প্রবন্ধটির মাধ্যমেই এই মহান ব্যক্তির ভাষা চিন্তার সূচনা দেখা যায়। এছাড়া তৎকালীন ‘ইত্তেহাদ’ পত্রিকার দায়িত্ব পালনকালীন সময়েও তিনি উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা না করা এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্যও বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন।

আবুল মনসুর আহমেদ সাম্প্রদায়িক না হয়ে বরং স্বাতন্ত্রবাদী ছিলেন বলেও জানান এই আলোচক।

এমিরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন ড. মো. চেঙ্গিস খান, ড. আহমেদ মাওলা, ড. মোহাম্মদ আজম, এবং অধ্যাপক মনসুর মূসা।

ড. আহমদ মওলা তার আলোচনায় বলেন, আবুল মনসুর আহমেদ তার ভাষা আন্দোলন বিষয়ক যে প্রবন্ধগুলো লিখেছেন, তাতে ভাষার ব্যবহার এবং সামাজিক প্রেক্ষাপট চিন্তা করলে লেখকের দূরদর্শিতার প্রমাণ পাওয়া যায়।

এছাড়া তার লেখাগুলোর কিছু অংশ বর্তমানে কারো কারো কাছে আবেগ মনে হলেও তৎকালীন সময়ে সেটাই ছিলো বাস্তবতা। আর লেখাগুলোতে কিছু আবেগ না থাকলে সে সময়ের সামাজের আর্থ-সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটও তুলে ধরা সম্ভব হতো না।

আবুল মনসুর আহমেদ শুধু ভাষা নয়, সাথে সাথে সাহিত্যের ভাষা কি হবে, তার সত্ত্বা এবং কঙ্কাল কি হবে, সেটাও সেই সময়েই চিন্তা করেছেন। আর তৎকালীন সময়ে এমন ভাবে ভাষার পক্ষে তার অবস্থান নেওয়াটা অবশ্যই দূরদর্শিতার পরিচয় বলে জানান এই আলোচক।

আলোচনায় ড. মোহাম্মদ আজম, আবুল মনসুর আহমদের লেখা পড়ার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। আর আবুল মনসুর আহমেদ ‘তিনি নিজের মতো করে চিন্তা করতেন এবং লিখতেন’ জানিয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা আরোপ করেন অধ্যাপক মনসুর মুসা।

সভাপতির বক্তব্যে এমিরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, আবুল মনসুর আহমেদ রাষ্ট্র ভাষা এবং মাতৃভাষা সম্পর্কিত চিন্তার নতুন দিকপাল। আর তার সমসাময়িক সময়ের অন্য কেউ তার মতো করে ভাষা নিয়ে চিন্তা করেনি বলেও জানান সভাপতি।

মূল অনুষ্ঠান শেষে আবুল মনসুর আহমেদ সম্পর্কিত এক প্রশ্ন উত্তর পর্বে অংশগ্রহণ করেন অনুষ্ঠানের দর্শক এবং আলোচকবৃন্দ। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন তরুণ কথাসাহিত্যিক ইমরান মাহফুজ।  

উল্লেখ্য, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক আবুল মনসুর আহমেদ ছিলেন একাধারে একজন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ, আইনজ্ঞ এবং সাংবাদিক। পূর্ব বাংলার শিল্পায়নের ক্ষেত্রে তার অবদান অনস্বীকার্য। তার রচনার মধ্যে আয়না, আসমানী পর্দা, ফুড কনফারেন্স এবং আমার দেখা রাজনীতির ৫০বছর উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৪ ঘন্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৭
এইচএমএস/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।