ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

কসোভোর অন্ধ বাঁশিওয়ালা (পর্ব-৪)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৭
কসোভোর অন্ধ বাঁশিওয়ালা (পর্ব-৪) কসোভোর অন্ধ বাঁশিওয়ালা

[পূর্ব প্রকাশের পর]

বাজারটি তৈরি হয়েছিলো সেই দ্বাদশ শতাব্দীতে। তারপর অবশ্য অটোমান সময়েই এর বিকাশ ও বর্ধন।

তাই এখানে নানা অলিগলিতে ছড়িয়ে আছে তুর্কি হাম্মামখানা। আছে বেশ কিছু মসজিদ- যার অনেকগুলোই এখন কেবল ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে সংরক্ষিত। আমি তেমন এক গলির মাঝে হাঁটতে গিয়ে এক তুর্কি জিলাপির দোকান আবিষ্কার করি। তুর্কি দোকান হিসেবে একে চিনে নিলাম এই কারণে যে, দোকানের কাচের ওপাশে তুর্কি পতাকা বেশ দৃশ্যমানভাবেই টাঙানো। কসোভোতে অটোমান সময়ের একটি মসজিদআর সেই সঙ্গে টাঙানো তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট এরদোগানের একখানা ছবি। আর জিলাপি বললেও সেই বস্তুটি ঠিক আমাদের জিলাপি নয়, বরং কাছাকাছি দেখতে এক ধরনের মিষ্টান্ন। কাগজের ঠোঙায় একটি নিয়ে চেখে দেখে বুঝলাম বেশ চড়া মিষ্টি এ বস্তুটি।

এ অঞ্চলে মেয়েদের মধ্যে নিশ্চয়ই বেশ গয়নার কদর আছে। নতুবা এ বাজারের এখানে-সেখানে এতো গয়নার দোকান কেন? আর অন্যসব দোকানে মাছি ওড়বার মতো অবস্থা হলেও গয়নার দোকানগুলোতে কিন্তু বেশ ভিড়। পুরোনো বাজারের ভেতর অবস্থিত হামামখানা অলঙ্কার বিশারদ আমি নই, তবে কাচের পেছনে রাখা সাদা আর সোনালি সোনার যে অলঙ্কারের কারুকাজ আমার চোখে পড়লো, তাতে করে মনে হলো এ অঞ্চলের স্বর্ণকারদের হাতে এলেম আছে বটে। সেই সোনার দোকানগুলো পার হয়ে এক উপগলির মাঝ দিয়ে হাঁটছি। এসময় মাটিতেই পুরনো জিনিস জিনিস পেতে রাখা তুর্কি টুপি মাথায় এক বুড়ো আমার পথরোধ করে বললেন, আমেরিকানা? আরে কী জ্বালা রে বাবা, আমাকে দেখে কোন আক্কেলে আমেরিকান মনে হয় তোমার বাপু। সজোরে মাথা নেড়ে বললাম, বাংলাদেশি। এবার বুড়োর মুখে বিস্তৃত হাসি, আ হা মুসলিমা, মুসলিমা। এবার বুড়ো আমাকে জাপটে ধরলেন, তার দোকান থেকে বলকানের ঐতিহ্যগত এক কফি গুঁড়ো করবার যন্ত্র কেনবার জন্যে, আমি যতই বলি দুঃখিত ও জিনিস আমার প্রয়োজন নেই, বুড়ো ততই যেন আমাকে জাপটে ধরে। শেষমেশ আমাকে একপ্রকার সেখান থেকে পালাতে হলো। স্কপিয়ের পুরোনো বাজারে তুর্কি মিঠাইয়ের দোকান  পরদিন স্কপিয়ে থেকে আমার এমন এক দেশে যাওয়ার কথা যে দেশটি কারও কাছে একটি স্বাধীন দেশ, আবার কারও কাছে একটি স্বায়ত্ত্বশাসিত অঞ্চলমাত্র, আর সে দেশটির নাম কসোভো। স্কপিয়ে থেকে কসোভোর রাজধানী প্রিস্টিনা আড়াই ঘণ্টার মতো পথ। তাই দিনে গিয়ে দিনে ফিরবো এমনই পরিকল্পনা। যদিও আমার মূল পরিকল্পনা ঠিক প্রিস্টিনা যাওয়া নয়, বরং প্রিস্টিনা থেকে আরও দু’ঘণ্টা দূরের শহর পেহাতে যাওয়া।

লোকমুখে শুনলাম প্রিস্টিনাতে তেমন কিছু করবার বা দেখবার নেই, বরং পেহাতে আছে বেশ কিছু অটোমান সময়ের নিদর্শন আর কিছু বিখ্যাত সার্বিয়ান মঠ। কিন্তু বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে বুঝলাম বিধি বাম, সেদিন নাকি এক সরকারি ছুটির দিন, আর তাই যাত্রীর অভাবে সকালের প্রথম বাস ছাড়বে দশটায়। স্কপিয়ে শহরের পুরোনো বাজারের একাংশঅর্থাৎ, প্রিস্টিনা পৌঁছুতেই আমার বেজে যাবে প্রায় সাড়ে বারোটা।

তারপর হয়তো পেহাতে পৌঁছে ঘুরে বেরিয়ে আবার সেদিনের মধ্যেই স্কপিয়েতে ফিরে আসা একটু কঠিন হয়ে পড়বে। আবার ওদিকে স্কপিয়ে থেকে যে পেহাতে যাবো, সে উপায়ও নেই, ওপথে কোনো সরাসরি বাস নেই, যেতে হয় সেই প্রিস্টিনা হয়ে ঘুরপথে। সে যখন হবে না, তখন কিই বা করা, প্রিস্টিনার বাসের টিকেট কিনে বাস ছাড়বার অপেক্ষায় থাকি।

চলবে...

**কসোভোর অন্ধ বাঁশিওয়ালা (পর্ব-১)

**কসোভোর অন্ধ বাঁশিওয়ালা (পর্ব-২)

**কসোভোর অন্ধ বাঁশিওয়ালা (পর্ব-৩)

বাংলাদেশ সময়: ১০২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।