ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

শঙ্খচিল: উড়বার দেয় ডানা | ইলিয়াস বাবর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৬
শঙ্খচিল: উড়বার দেয় ডানা | ইলিয়াস বাবর

আজ থেকে গোছানো কাজের নাম- শঙ্খচিল। সংখ্যা ৩, বর্ষ ৪, জানুয়ারি ২০১৬। পাঠক, বিস্মিত হওয়ার দরকার নেই; হাতে নিয়ে দেখুন ওজনওয়ালা কাগজটি।

শঙ্খচিল: উড়বার দেয় ডানা
ইলিয়াস বাবর


আজ থেকে গোছানো কাজের নাম- শঙ্খচিল। সংখ্যা ৩, বর্ষ ৪, জানুয়ারি ২০১৬।

পাঠক, বিস্মিত হওয়ার দরকার নেই; হাতে নিয়ে দেখুন ওজনওয়ালা কাগজটি। যুগে যুগে পুরনোকে অস্বীকারের স্পর্ধা তো কেবল ছোটকাগজই দেখিয়ে আসছে! মূলত এর পুরোভাগে থাকে তরুণ সম্প্রদায়; ঐকিক নিয়মে না হোক সরলিকরণে তুলে আনে সময়ে চাল-চাহিদা।  

আবদুল মান্নান সৈয়দ যেমন বলেন, ‘লিটল ম্যাগাজিন মানেই তারুণ্যের বিস্ফোরণ, অপ্রাতিষ্ঠানিক চিৎকার, নতুন জ্যামিতি ও ইশতেহার’।  

এবারকার ‘শঙ্খচিল’ শুধুমাত্র সাহিত্য নয় বরং সম্পূর্ণ শিল্পের একটা পত্ররূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। বাজার চলতি অন্যান্য কাগজ থেকে শঙ্খচিল আলাদা একটা চরিত্র সহজেই পেতে পারি। কিন্তু সম্পাদক কে? কার বা কাদের শ্রম-অর্থদায়ে এ ষজ্ঞ? আপাতত সম্পাদকের সাকিন না খুঁজে ‘শঙ্খচিল’র বুকে শিল্প-সাঁতার হোক সাধ্যমতো।

আহা, আইলান! ভাই আমার, কাঁদিয়ে গেলে বিশ্ববিবেক। জীবনবাবুর কবিতার ইংরেজি তরজমা সহযোগে তুমি ফিরে আসো বারবার। পরের পৃষ্ঠায় কবীর সুমনের গানের দু’চরণ। তা কি গান? এ তো সুরমাখা বুলেট! সূচিমালার চিরায়ত ঢং ভেঙে নিজরূপে উড়াল দেয় ‘শঙ্খচিল’। স্মৃতিমেঘ-এ স্বকৃত নোমান- ‘তাঁর নিদানের আগে’ নাম দিয়ে লেখেন এক অসমান্য ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্যমাখা স্মৃতি-গৌরব। লেখকের মুন্সিয়ানায় আর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় লেখাটি হয়ে যায় বেদনবৃত এক স্মৃতি-আখ্যান। ক্যামেরাশিল্পী নাসির আলী মামুন’র লেখায় উঠে আসে বিখ্যাত চিত্রকর এস এম সুলতান’র শিল্পযাপনের কথা। সুখপাঠ্য গদ্য আর সুলতানের শিশুসুলভ সরলতা একাকার হয়ে যায় মামুনের কলমে। সংগৃহীত ছবিগুলো বাড়িয়ে দেয় কাগজের ওজন। টোকন ঠাকুর ‘খেলারাম খেলে যা’র চলচ্চিত্রিক বাস্তবতা তুলে আনেন হৃদয়ভরা গদ্যে; একই সঙ্গে তিনি আঁকার প্রয়াস পান বাবর আলীর সময়ের আনুপুঙ্খ। পাঠককে পরিভ্রমণ করানোর গুরুদায়িত্ব টোকন ঠাকুর তুলে আনেন তার গদ্যে।

অতঃপর আমরা ডুব দেই ‘জলছায়া’ বিভাগে। দারুণ সব গদ্য, দারুণ সব অভিজ্ঞতা। রিফাত চৌধুরী ‘অকথিত’ শিরোনামে মূলত জানিয়ে দেন আবিদ আজাদ তথা উত্থানপর্বের কবিগোষ্ঠীর অমূল্য ভুমিকার কথা। ‘কী যেন হারাল!’ আফসানা বেগম ঘুরিয়ে আনেন তারই শৈশবে। বলা শ্রেয় তার শৈশবভ্রমণ তখন একার থাকে না আর! সেজুল হোসেনের ‘দেহনৌকার দুলুনি’ দোলা দিয়ে যায় পাঠকহৃদয়ে। আঁখি সিদ্দিকার লেখাটি হয়ে ওঠে কবিতাভাবনার পরাণভরা এক দলিল। ওখানে আছে কবিতাবিষয়ক জিজ্ঞাসার বেশকিছু জবাবও। ‘গুলতির গল্প’ গুলতির ভেতর দিয়েই যেনো আঁকেন একটা সময়ের মধ্যবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্তের হাহাকারমাখা গল্প। কতো যে করুণ তা শতাব্দী ভব ভালোই জানেন। ভবদাকে ধন্যবাদ অমন বাস্তবতাভরা লেখাটির জন্য।

ছোটকাগজের সৌন্দর্য ঠিকরে পড়ে কবিতার ছায়ায়। ‘শঙ্খচিল’র ডানা হয়ে আসে প্রতিষ্ঠিত-প্রতিশ্রুতিশীল কবির বিবিধ বুদবুদে ভরা বিচিত্র সব কবিতা। অগ্রজ-অনুজ, এপার-ওপারের মেলাবন্ধন সত্যিই উপভোগের উপলক্ষ হয়ে আসে। কবির নাম না হয় কাগজের ভেতর থেকেই জানা যাক!

‘অনুবাদ সাহিত্যের সৃজনশীলতা’ শিরোনামে খালিকুজ্জামান ইলিয়াস অনুবাদকে সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে শুধু চিহ্নিতই করেন না, বৈশ্বিক যোগাযোগে এর অবদানকেও স্মরণে আনেন। কবি মাসুদ খানের একজোড়া কবিতা মু. মোজাম্মেল হক এর ইংরেজি অনুবাদ সমেত পাঠককে দেয় বাড়তি আনন্দ। এলিস মুনরো’র গল্প ‘দৃশ্যপট’ অনুবাদে আনেন অনুপমা মাহফুজ। ‘নেপালের কবিতা’ নামে পড়শি দেশের কবিতা সম্পর্কে ধারণা দেন শিমুল মাহমুদ। বানিরা গিরির কবিতা বাঙলায়ন করেন হায়াত মামুদ।

জনপ্রিয় জীবনবাদী শিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কিশোর ঘোষ। কথাবিনিময়ে বাংলা গান সংস্কৃতি নিয়ে আসে বাস্তব সব মন্তব্য। বোনাস হিসেবে রয়েছে নচিকেতার নতুন গান। কন্ঠশিল্পী সায়ান পরিষ্কার করেন তার অবস্থান। সামছুল আলম আজাদ ‘শিল্পের পথে পথে’ লেখায় দুই মহিরূহের সংযোগ এবং তারও অধিক বড়ো করে আনেন একজন শাহজাহানের কথা। দ্রাবিড় সৈকতের চিত্রবিষয়ক গদ্যটি উত্তম দাওয়াই কম জানাদের জন্য।

শামসুর রাহমান প্রধানত কবি এবং কবিতাতেই তার প্রসিদ্ধি-প্রতিপত্তি। অন্য অনেক কবির মতো তিনিও গল্প লিখেছেন; তবে তা কবিতার কাছে অসহায় বলতে গেলে। কবির গল্পে আলো ফেলেছেন মনি হায়দার। ফজলুল হক তুহিন কবি আল মাহমুদ’র দিহন্তবিস্তারি কবিপ্রতিভাকেই মনে করিয়ে দেন। কবি পলিয়ার ওয়াহিদের প্রথম কাব্যের আলোকে আলোচনায় নিমগ্ন হন লাওহে মাহফুজ। ছোটকাগজ নিয়ে জ্ঞানগর্ভ গদ্য লিখেছেন আহমেদ লিপু। লেখাটি চোখ খুলে দেবে অর্বাচীনদের। পলিয়ার ওয়াহিদ আলোচনা করেন ছোটকাগজ ‘ধমনি’- মহাজন সংখ্যা নিয়ে। গল্পে জীবন এঁকেছেন- মারজুক রবীন, রবিউল আলম নবী, মুম রহমান, শিপা সুলতানা, মেহেদী উল্লাহ ও মুহাম্মদ ফরিদ হাসান। রবীনের গল্পে এ সময়ের গল্পচর্চার ছাপ লক্ষণীয়; নবীর গল্পটি বাস্তব-পরাবাস্তবতার যৌগিক মিশেল। মুম রহমানের গল্পটি অন্যরকম; শিপা নিজেকে খোঁজেন ফেলে আসা স্মৃতির টুকরোরেখায়; মেহেদীর গল্পটি আয়তনে ছোট কিন্তু ইঙ্গিতবাহী; ফরিদ তো হৃদয় ভাঙার আর্তনাদ গেয়ে যান গল্পের শরীরে। আর রয়েছে মৃত্তিকা গুণের ভ্রমণকাহিনি।

শিল্পের সবটুকুই প্রায় শঙ্খচিল-এ উপস্থিত। গল্পবিষয়ক একটা মৌলিক গদ্য রাখলে আরও ভালো হতো। অন্য কাগজে যেখানে বড় করে খোদিত থাকে সম্পাদকের নাম, সম্পাদকীয়- সেখানে শঙ্খচিল-এ রীতিমতো পাওয়ারফুল গ্লাসে খুঁজতে হয় মাহফুজ পাঠক ও ইকবাল মাহফুজ সম্পাদকদ্বয়ের নাম। এমন কাজ করলে কি আর বড় নাম লাগে! সাহসের অমোঘতাই তো ছোটকাগজের শক্তি!

১৬০ পৃষ্টার ‘শঙ্খচিল’ এর দাম ৫০ টাকা; প্রচ্ছদ ও নামলিপি- সব্যসাচী হাজরা; অলংকরণ- মোস্তাফিজ কারিগর, রাজীব দত্ত, দেলোয়ার রিপন; শিল্পসজ্জা- কাজী যুবাইর মাহমুদ।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৬
এসএনএস


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।