ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

একগুচ্ছ কবিতা | শিবলী মোকতাদির

কবিতা ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১৫
একগুচ্ছ কবিতা | শিবলী মোকতাদির

ডাক্তার

এমন শ্রাবণে;
হাসপাতালের পাশে ভাঙাচোরা ট্রাক,
পড়ে আছে বহুদিন।

তাদের চুপসে যাওয়া চাকার নিচে ছত্রাক
আশেপাশে রক্তমাখা তুলো, ব্যান্ডেজ...
কিছুটা দুর্গন্ধ, অভিমানী
নার্সদের সাথে তার চূড়ান্ত প্রকাশনা, অসাধ্যের ছড়াছড়ি।



তবু এই নির্জন বসন্তে;
প্রতিদিন মেডিকেল ছাত্ররা দলবেঁধে আসে, তাই—
ঝুঁকে পড়ে তারা ট্রাকদের দ্যাখে।

ঘন চৈত্রে;
ভাঙাচোরা ট্রাকগুলো পড়ে থাকে বহুদিন।


জাত-পাত-বর্ণ  নির্বিশেষে

জাতের প্রশ্ন চাপাও তুমি ক্ষেত্রে খেলার ছলে
ধর্মে-কর্মে-ফলে
শ্রেণির মধ্যে শোষণ ছাড়ো পদাধিকারবলে।

দূষণে হয় সুদৃঢ় সব বাক্যে বিস্তারিত
গোষ্ঠী-গোত্র প্রীত
আদির অন্তে সমস্ত ভুল কেন্দ্রে সঞ্চালিত।

সাম্যজ্ঞানে সুফি তুমি হিন্দু মুসলমান
সাধক-অন্ত প্রাণ
গানেই মারো চিন্তা-চেতন সুর বাণীতে টান।

তুষ্ট করো উদ্ধৃতিকার ধীবর, চর্মকার
চণ্ডালীনি তার
মাধুকরীর রূপ সে গলে কাপালিকের হাড়।

এই আমাদের পাল-চন্দ্র, দেব-সেন-বর্মণ
উদ্ভাসিত মন
জীবন হাতে যুদ্ধ করা সহিষ্ণু কোন জন।

শূদ্র আমি অন্ত্যজে হই শঙ্করে সঙ্করা
বর্ণাশ্রমে যারা
উচ্চ থাকে ভোগের ভিড়ে, নিম্নে বসুন্ধরা।


কাকতাড়ুয়া

বিনয় ও বেদনার মাঝে,
কিছুটা বাইজী ও বাতাসার লোভে
ফের তোমাকে আন্দোলনে নিযুক্ত হতে বলি।

বলি, নিকটে আমার উত্তরে ভেসে আসো...
যদিও উপকূল পশ্চিমে তোমার
নানান কৌশলে আজ অস্পষ্ট ক’রে তোলো।

যেহেতু তুমি প্রশ্ন আর প্রতাপে বিভাগীয়,
তরঙ্গ তর্কে শুধু বাঘের জঙ্গলে যেতে বলো।

ফলে আমি বিচিত্র বর্ষায় ভিজে ভিজে ‘শিকারীর’ প্রতিটি
অক্ষর মুছে ফেলে—আজ একেবারে শান্ত, হলুদ সর্ষে বনে
একা ভদ্রাসনে দাঁড়িয়ে আছি—
ভয় ও ভাঁজের ব্যাকরণে।

দূরে নানান জনতা,  গৃহস্থের নানান অলিগলি
অকুস্থলের আশেপাশে কিছু মেঘাচ্ছন্ন কিশোর কিশোরী
আর যত জ্ঞানী ও গম্ভীর পাখ-পাখালি।

শুধু দিবসের অনুরোধে রাত্রির ঘটনা ঘটে
দেখি এক নাদান গ্রাম্য-টহল-পুলিশ
ঢোলকলমির ঝোঁপে ভয়ে, নিজেকে আড়াল ক’রে
মাটির রাইফেলে গুলি ফোটাতে ফোটাতে
নিবিড় সন্দেহে ভাবে—
ব্যাটা কি কাকতাড়ুয়া নাকি?


ক্যামেলিয়া

লুকিয়ে জঙ্গলে প্রেম করতে গিয়ে,
বিশেষ পর্যায়ে, যদি কোনো ব্যক্তিগত প্রভাষক
অনর্থক অচেনা কণ্ঠে শুধায়:
হু আর ইউ?

আমি কিন্তু বলতেই পারি, আচানক; আরে অধ্যাপক!
না, মানে, আমরা তো মানুষ। রবীন্দ্রনাথ পড়তাছি।
আমরা তো আসলে বিয়েই করিনি।
কী বলো, ক্যামেলিয়া?

অথচ কেউ নেই ওপাশে তখন।
হাজারো শূন্যতায় শুধু এক কোকিল জেগে আছে।


প্রত্যাবর্তন

থমকে যাওয়া প্রেমের কাহিনী ধরে
বিচিত্র ব্যাখ্যায় ফের এসে দাঁড়িয়েছো
অশ্লীল গ্রন্থের নায়িকার মতো, সামাজিক সমাচারে।

বিগত বিনয় আর উদাসীন প্রলোভনে
নিকটে উপায় দু’হাতে আঁকড়ে ধরে—নিয়মিত লতায়-পাতায়
ছুটে আসো বিপন্ন শ্রেণির ধরাতলে।
যেন ঝপ করে নেমে পড়া অচেনা সন্ধ্যায়
বহুদিন পর ফেরত বালিকা তুমি,
শুধু বিবিধ বাঁকের প্রান্তে এসে
কাচুমাচু মুখ করে ভাবো;
কোন পথে সরল কাহিনী নিবেদিত

যেন মাধ্যমিকে ফেল করা বিষণ্ণ, লজ্জিত ছাত্রী এক
এই ভেবে অঙ্কুরিত ভয়ে, দ্বিধায়—
ধীরে ধীরে দিগন্তে স্পষ্ট হতে থাকো।



বাংলাদেশ সময়: ১৫১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।