ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

কুয়াশা পর্ব | রুহিনা ফেরদৌস

কবিতা ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৫
কুয়াশা পর্ব | রুহিনা ফেরদৌস

সারাবেলা অন্ধকার বুকে বসে থাকি
সকাল দুপুর অহেতুক কেটে যায়,
জমে ওঠে ঘাসফড়িং প্রজাপতি
কোনো এক বিকেল বেলায়।

সব মানুষেরই একান্ত বিকেল থাকে,
থাকে ধুলো ওড়া গোধূলি, দুপুর
চড়ুইভাতি, কানামাছি স্মৃতি
কিংবা মধ্যরাতের কাঙ্ক্ষিত সুর।



টের পাই মা জেগে আছে
ঘুম চোখে তাকায় বারবার
বুকে ভালোবাসা নিয়ে সেও অপেক্ষায়
তার গল্পটা কেউ জানে না, হিসেবি সময়।

মনে হয়, আমি যেন অভিশপ্ত মানুষ এক
কোনো দুঃখ মরে না যার
কুয়াশায় দাগ কেটে যায় আলো,
হারানোর ইচ্ছা অনিচ্ছায়
খুঁজে ফিরি নিষিদ্ধ ইরেজার।

২.

দেয়ালগুলো ডুবে যাচ্ছে
অচেনা ছায়ায় বিপরীতে বসে আছি
আলো মেখে মৃত্যুরা হাঁটছে
আমার স্বপ্নের কাছাকাছি...

সময়গুলো সংখ্যা দিয়ে ঘেরা,
হাতড়ে হাতড়ে পৌঁছানো যায়
সব ঠিকানায়, সন্ধ্যার গন্ধ গায়ে মা বসে থাকে
সে আঁচলে রাখা আমার সমস্ত পরিচয়।

তোমাদের এই নগরে বেনামে ঘুরে বেড়াই
বেঘরে বেজন্মার মতো মন নিয়ে পড়ে থাকি।
কোনো কথা নেই যার, কিছুই দেখে না যে
কাউকে চেনে না, কোনো পিছুটান বোঝে না

নিয়ম হয়ে অন্ধকার নামে শহরে, শরীরে
জন্মান্ধ চোখ নিয়ে ঘুমোতে যাই।
মৃত ফড়িং মুখে
আমার শরীর বেয়ে কিছু পিঁপড়া চলে যায়।

৩.

এপার ওপার দুই পাড় বহমান
মাঝখানে নদী বেদনায় ভাসা
স্মৃতির পথে ধরে রাঙা বউ চলে গেছে
ছল ছল জলে তার রূপ পড়ে আছে

আমাকে ঘিরে কিছু মলিন ছড়িয়ে দাও
ভাঙ্গনের করুণ ভয় চারপাশে
এই বুক থেকে পাপ তুলে নাও
গত জন্মের দ্বিধারা লুপ্ত হোক

তোমাকে ঘিরে নিয়তির পরিণতি
আমাকে ভাবায় অবাক অদেখা বাঁক
এ জীবন কী মায়ায় বেঁধে রাখে
পথে তাই আদৃশ্য যতি এঁকে যাই,
 
প্রতি রাতে আমাদের মন দুটো
পাশাপাশি হাত ধরে হেঁটে বেড়ায়
তুমি জেগে থাকো আমার পাহারায়
আমার বুকে বাঁধা তোমার বসবাস।

৪.

বন্ধু, রক্তে শীত ঘুম
শরীরে পার্থিব দাগ,
পরাজিত অতীতের পুনঃপাঠ,
চোখে উষ্ণতা জমে এখনো?
 
এ বড় নির্লিপ্ত জেগে থাকা
সময় উড়িয়ে বাঁচা হয় না,
খুব মায়া লাগে!
জীবন উড়িয়ে ছুটা যায় না আর।

বন্ধু, বাতাসে নিহত শোক
কাল যারা ছিল আজ আর নেই
কেউ সমুদ্রে ডুবে গেছে, কেউ অন্তরীক্ষে
কেউবা গুম হয়েছে, কেউ নির্দ্বিধায় হারিয়েছে

এ বর্তমানের কাছে, অজস্র অবিশ্বাস রাখা আছে
আমার নারী জন্ম,
তোমার পুরুষ হয়ে জীবন কাটানো,
স্বপ্ন লুট হবার, মুত্যুর গন্ধের মতো অবিশ্বাস।

তবু সেই সুর আজো কানে ভাসে
রাতের রাস্তায়, অভিমানী পায়ে
ঘরে ফেরা রাখালের একলা বাঁশির
সে মায়া মিশে আছে মগরার ঝিরিঝিরি বাতাসে।

৫.

ভুল জন্মের আড়ষ্টতা চোখে
মাঝে মধ্যে ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে হয় জীবনের লুকায়িত ভাঁজ।

অতীত পুরুষের গেয়ে যাওয়া গীতের পুরনো পাঠ,
আহত বুকে খুঁজে ফিরি এ ঋতু থেকে অন্য ঋতুতে।

কিন্তু এ মানবিক মন
স্মৃতি বিস্মৃতির অতলে ডুব দিয়েও মনে করতে পারে না
গত সময়ের বহু শোনা সে গান।

নত হই আমি
নত হই নিজস্ব সত্তার পীড়নে।

গোপন নির্জনতা ভেঙ্গে জেগে ওঠা একলা পতিতার বহুগামী রাত
একরত্তি ভালোবাসা পেয়ে স্পন্দিত হয় বুকের ভিতর
ক্ষতমাখা অবসরে সেও গোপন চিহ্ন এঁকে রাখে প্রিয় পুরুষের।

আমি হাঁটু ভেঙ্গে বারবার নামি আত্মার লুকায়িত জলে
উষ্ণ রক্ত মাড়িয়ে পৌঁছে যাই সময়ের শবদেহ কাঁধে,

পেছনে পড়ে থাকে পরিচিত মাঠ, বহুচেনা পথ
ঘুমের ছলে কে বলে যায়, এ জন্ম জাতিস্মর।



বাংলাদেশ সময়: ১৫২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।