ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

চম্পূকাব্য | মুজিব ইরম

কবিতা ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৫
চম্পূকাব্য | মুজিব ইরম

আর আমরা জাম্বুরাকে ফুটবল করে টুর্নামেন্ট খেলি। রাধানগরের কাদাভর্তি ধানী মাঠে বেগি হয়ে গায়ের জোরে চোট মারি।

চিন্তামনির লোকদের গোল আটকাতে না-পেরে বাল্লা মেরে ফাউল করি, অফসাইটের ছুতা তৈরি করে হাতাহাতি মারামারি শেষে অকথ্য ভাষায় গাল পাড়ি। তাতেও রাগ মিটে না বলে হাতের মুদ্রায় কাপড়ের নিচের গালি দিই। এতসব শরমিন্দা গালিতে ওরা চেতে, আর প্রীতিফুটবল খেলা গোল্লায় যায়। আমরা লায়েক হই। খালাত, মামাত, ফুফাত, চাচাত, তালত বোনদের নেক নজরে পড়তে চাই। লেখতে চাই উড়ুচিঠি, মনের চাঞ্চল্য। আমাদের চুলে বাতাস লেগে ফরফর করে। তেলপানি উধাও হয়। আমরা জামাকাপড়ে ইস্মাট হই। বাজার-টাউন আমাদের টানে। সিনেমার পোস্টার ভিউকার্ড আমাদের নোট বইয়ে পড়ার ঘরে শোভা বাড়ায়। আমরা বালেগ হই। সিদা মামার দোকানে দুরুদুরু বুকে হাজিরা দিই। সিদা মামা ভালা মানুষ। সংসার উদাসী সিদা মামা চিল্লা দেন, গেঞ্জির দোকান তার ইমান বাড়ায়। আমরা এসব ইমানী দায়িত্ব উপেক্ষা করি। গেঞ্জি কিনতে কিনতে একদিন আন্ডারওয়ার কিনে ফেলি, আর লুঙ্গির নিচে নয়া আন্ডারওয়ার পরে চামারি পুতায় ফুটবল খেলা দেখতে যাই। লুঙ্গির নিচে ঘনঘন বড় হওয়া টের পাই। ইচ্ছা হয় ফাইনাল খেলা তুচ্ছ করে সাত গ্রামের দর্শকদের কাছে জানান দিই—লায়েক হয়েছি, লুঙ্গির নিচে আমারও এখন জাঙ্গিয়া পরা আছে।



আমাদের পড়শিনী তেরাবুন দিনদিন সুন্দরী হয়, আর আমরা শুধু বিরহের গান শুনি। আমরা প্রেমে না-পড়েই বিরহে পড়ি। তার সুন্দরী হওয়ার হাত ধরে আমাদের জীবনে বিরহ আসে। প্রেমিক না-হয়ে ব্যর্থ প্রেমিক হই। ‘সাধ না মিটিল’ শুনি, ‘শাওনও রাতে যদি’ শুনি! আর আমরা ঘাটপাড় ভালা পাই, আর আমরা নির্জনতা ভালা পাই। সে উপযুক্ত হয়। আমাদের বিরহ বাড়ে। তার বিবাহের দিন-তারিখ ধার্য হয়, আমরা দেবদাস হই। বিরহ শুনে শুনে কুরচি মুরগির মতো ঝিম মেরে থাকি। প্রীতি উপহার আমাদের হাতে ধরিয়ে ঢাকা-সিলেট নাইট কোচের হেলপার একদিন তাকে তুলে নিয়ে গেলে আমরা সম বয়সীরা আরো বিরহ শুনি, আর এতসব পাশ দেওয়া বাদ দিয়ে দূর পাল্লার নাইট কোচের হেলপার হতে চাই। দরজায় দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে কেটে যেতে চাই ৮০ মাইল স্প্রিডে রাজপথী হাওয়া। আমরা মুর্খ হতে চাই, পাঠাতে চাই গাঁও সুন্দরী অন্য কোনো তেরাবুনকে বিবাহের পয়গাম।



আমাদের সহপাঠিনী শিল্পী রানী গলা সাধে, গান গায়, মনু নদী পাড়ি দিয়ে বহু পাক্ষিক বিদ্যালয়ে যায়। আমাদের রচনায় সাধু ও চলিত রীতির সংমিশ্রণ হয়। গরু চতুর্দশপদী জন্তু, তাহারা খড়বিছালি খায়, মাঠে মাঠে ছড়িয়া বেড়ায়—সহজ রচনা লেখা জপতে জপতে ভুল করি। রাফখাতায় হাবিজাবি লেখি—ও শিল্পী রানী, তুমি সেন পাড়ায় থাকো, তুমি নদীঘাটে যাও, তুমি সন্ধ্যাগীতি গাও। লিখি আর কত কিছু হতে চাই। তোমাদের ঘাটে হতে চাই হিজলের জল। আমরা আর জুতা ছাড়া হাঁটি না, আমরা আর লুঙ্গি পরে গাউয়া থাকতে চাই না, পল্লীগীতি-বাউল আর পীর মুর্শিদী শুনে ক্ষেত হতে চাই না, শুনতে চাই আধুনিক ভক্তিগীতি ঠাকুরের গান। আমরা ফিল্মী স্টাইলে চুল কাটি। তোমাদের বাড়ি বাউলি মেরে আসি। ভোরের বেলা গলা সাধা শুনি। দেখি তোমার সদ্য ধোয়া মুখের আদল। তুমি জবা তোলো, ঠাকুরঘরে ভক্তি দাও, হারমোনিয়ামে ভক্তিগীতি গাও! আমরা তোমার গানে মজি, রূপে মজি, আমরা তোমার সুরের ধারায় নতজানু, নিত্য জপি নাম, তোমার হাতে সন্ধ্যা প্রদীপ, সাষ্টাঙ্গে প্রণাম!

আমরা যখন রাফখাতায়, আমরা যখন বইয়ের ভেতর লিখি তোমার নাম, তুমি তখন মধ্যরাতে খুব গোপনে বর্ডার পাড়ি দাও! পড়ে থাকে খালিবাড়ি, গলা সাধা, ভোরের জিকির, ভাঙ্গাচোরা মন। আহা ভাঙ্গাচোরা মন!



বাংলাদেশ সময়: ১৩১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।