ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

পুষ্টিগুণসম্পন্ন ‘বাতাবি লেবু’ তবুও অপ্রচলিত

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪
পুষ্টিগুণসম্পন্ন ‘বাতাবি লেবু’ তবুও অপ্রচলিত গাছের ডালে ঝুলছে বাতাবি লেবু। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: মৌসুমি ফলের কোনো বিকল্প নেই। প্রকৃতিতে যে সময় যে ফলটি ধরে তাকেই সহজ ভাষায় মৌসুমি ফল বলে।

মৌসুমি ফল মানেই বাংলার শাশ্বত ফল।

শরতের এই সময়টাতে গাছে গাছে বাতাবি লেবু ঝুলে থাকতে দেখা যায়। সবুজ বৃত্তাকার প্রাকৃতিক এ ফলটি পরিপক্ব বা পেকে গেলে ধারণ করে মৃদু হলুদে বর্ণ। আর তার ভেতরের অংশটি হালকা থেকে গাঢ় গোলাপি হয়ে থাকে।

বাতাবি লেবু টক-মিষ্টি জাতীয় রসালো ফল। খেতে দারুণ মুখরোচক। কারো কারো কাছে বেশ প্রিয় এই ফল। বাংলাদেশের কৃষি বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে বাতাবি লেবুর ভেতরের অংশটি অধিকতর সুমিষ্ট ও সুস্বাদু করে উৎপন্ন করছেন। কেউ কেউ এটিকে ‘জাম্বুরা’ বলে থাকেন। গরমকালে এই ফলটির জুড়ি মেলা ভার।

বাতালি লেবুর প্রসঙ্গ আলোচনায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, বাতাবি লেবুর ইংরেজি নাম Grape fruit। এ লেবুর খোসা পাতলা এবং মসৃণ হয় এবং এর ভেতরে সাদা বা গোলাপি রঙের রসালো মাংস থাকে। এই লেবুর স্বাদ মিষ্টি এবং টক। বাতাবি লেবু খাওয়ার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। এটি তাজা, নাস্তা বা জলখাবারে অথবা স্ন্যাক হিসেবে খাওয়া যেতে পারে।

তিনি আরও বলেন, এই বাতাবি লেবু ফলটি অপ্রচলিত হয়ে যাচ্ছে। আসলে এই ফলটি জনপ্রিয় হওয়ার কথা ছিল। ফলপ্রেমিদের পছন্দের তালিকায় এই ফলটি নেই বলেই প্রান্তিক কৃষকরা এই ফলটি চাষ করতে নিরুৎসাহিত হন। কম সংখ্যায় কৃষকরা এটি চাষ করছেন বলে এ ফলটি এখন অবহেলিত। এর পরেও মৌলভীবাজার জেলার মধ্যে জুড়ী উপজেলাতেই ২৭২ হেক্টর জায়গায় বাতাবি লেবু চাষ হয়। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের হিসাব অনুযায়ী ২ হাজার ৭৯৩ মেট্রিক টন ফলন।

চারার প্রকারভেদ এবং কার্যকারিতা সম্পর্কে সামছুদ্দিন বলেন, কাটিং চারা লাগালে ২ বছরের মধ্যেই ফলন চলে আসে। আর অন্য চারাতে ফলন ধরে ৩ থেকে ৪ বছর। আমাদের কৃষি বিভাগের ২টি উন্নতমানের জাত রয়েছে। এগুলো হলো বারি-১ এবং বারি-২।  

এছাড়াও আমাদের নিজস্ব কয়েকটি ভ্যারাইটি রয়েছে। সেগুলোর নাম জুড়ী-বাতাবি লেবু-১, জুড়ী-বাতাবি লেবু-২। এগুলো কাটিং চারা হওয়ায় ফলন দ্রুত এবং বেশি পরিমাণে হয়। এগুলোর ভেতর লাল এবং মিষ্টি স্বাদের হয়ে থাকে। মৌলভীবাজারের স্থানীয় নার্সারিগুলোতে এর চারাগুলো পাওয়া যাবে।  
পুষ্টিগুণের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাতাবি লেবু বহু গুণে ভরপুর এক মৌসুমি ফল। ভিটামিন ‘এ’ ও ভিটামিন ‘সি’ এর বড় উৎস। ৯১ শতাংশই রসে টইটম্বুর। লো ক্যালোরি, পুষ্টিতে ভরপুর। বাতাবি লেবুতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ ইলেকট্রোলাইটস ডিহাইড্রেশন দূর করে। ফাইবার, পটাসিয়াম, লাইকোপেন, কোলাইনের মতো সম্পদে সমৃদ্ধ বাতাবি। বাতাবির অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ভিটামিন ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ফ্রি র‍্যাডিক্যালস এর সঙ্গে লড়াই করে। বাতাবির লাইকোপেন প্রস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে।

যাদের হজমের সমস্যা আছে, তারা এই ফল নিয়ম করে ফেলে দারুণ উপকার পাবেন। ওবেসিটি, ডায়াবেটিস, হৃদরোগের মতো রোগের সঙ্গে লড়াই করে বাতাবি। রক্তের লিপিড লেভেলস মূলত ট্রাইগ্লিসারাইডসকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। নিয়ম করে বাতাবি খেলে মিলবে স্বাস্থ্যকর উজ্জ্বল ত্বক। ওজন কমায়, এনার্জি বাড়ায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

‘প্রত্যেকে নিজেদের বাসায় যদি একটি করে বাতাবি লেবুর চারা রোপণ করেন তবে এ ফলটির আবাদ হবে, নিজেদের পুষ্টি চাহিদা মিটবে এবং বাজারের চাহিদাও মিটবে’ বলে জানান এই কৃষিবিদ।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪
বিবিবি/আরএ                                 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।