ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

কুষ্টিয়ায় রঙিন ফুলকপির চাষ

মো. জাহিদ হাসান জিহাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৪
কুষ্টিয়ায় রঙিন ফুলকপির চাষ

কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ায় এ বছর প্রথম বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে রঙিন ফুলকপির আবাদ। দেখতে সুন্দর, খেতে সুস্বাদু এবং ক্রেতাদের চাহিদা বেশি থাকায় দাম বেশ ভালো।

 

সবসময় জেলাজুড়েই কৃষকরা সাদা ফুলকপি আবাদ করে থাকেন। তবে এবার বাজারের দাম ভালো পাওয়ার আশায় কৃষি অফিসের পরামর্শে ও সহযোগিতায় কৃষকরা চাষ করছেন রঙিন ফুলকপি।  

গাছ দেখতে সাদা ফুলকপির মতো হলেও ফুল বিভিন্ন রঙের। এর মধ্যে হলুদ ও গাঢ় গোলাপি/বেগুনি রঙের ফুলকপি চাষ করছেন কৃষকরা।

এবার ছয় উপজেলায়ই সাদা ফুলকপির পাশাপাশি রঙিন ফুলকপি চাষ করা হয়েছে। আর কুষ্টিয়ায় বাণিজ্যিকভাবে এ রঙিন ফুলকপি চাষ ও কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনীসহ উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর অঞ্চলের টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্প।

কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, কুষ্টিয়ার ছয়টি উপজেলায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের রবি মৌসুমে ৭৬৭ হেক্টর জমিতে ফুলকপি চাষ হয়েছে। এর মধ্যে কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ১৯১ হেক্টর, খোকসা উপজেলায় ২২ হেক্টর, কুমারখালী উপজেলায় ৫১ হেক্টর, মিরপুর উপজেলায় ৭৮ হেক্টর, ভেড়ামারা উপজেলায় ২৩০ হেক্টর এবং দৌলতপুর উপজেলায় ১৯৫ হেক্টর জমিতে সাদা ফুলকপির চাষ হয়েছে।

এছাড়া যশোর অঞ্চলের টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় কুষ্টিয়া জেলার ছয়টি উপজেলায় এ মৌসুমে মোট ১৮টি ভিন্ন ভিন্ন স্থানে রঙিন ফুলকপির বাণিজ্যিক চাষ প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

চাষ পদ্ধতি সাদা ফুলকপির মতো হলেও সাদা ফুলের তুলনায় রঙিন ফুলের কপি বেশি লাভজনক বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার নওদা ক্ষেমিরদিয়াড় এলাকার কৃষক সাইদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমি সাদা ফুলকপি চাষ করি। এবার কৃষি অফিস থেকে আমাকে রঙিন ফুলকপি চাষের বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। সেখানে থেকে উপকরণও দিয়েছিল। আমি ২০ শতাংশ জমিতে রঙিন ফুলকপি চাষ করেছি। গাছ বেশ ভালো হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই ফুল আসবে। আশা করছি, বেশ ভালো ফলন ও দাম পাব।

ভেড়ামারা উপজেলার ফকিরাবাদ এলাকার কৃষক মারুফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, মরিচ, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুন চাষ করি। এ বছর আমি রঙিন ফুলকপি চাষ করেছি। বাজারে রঙিন ফুলের দাম বেশি। কৃষি অফিস থেকে বীজ, সার, পরিচর্যার খরচও দিয়েছে। আগামীতে এ এলাকায় অনেকেই রঙিন ফুলকপি চাষ করবেন।

মিরপুর উপজেলার ফুলবাড়িয়া এলাকার মাধবপুর গ্রামের কৃষক ওয়াহেদ মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমি আগে রঙিন ফুলকপি চাষ করিনি। পেঁয়াজ ও বিভিন্ন সবজি আবাদ করি। কয়েকদিন আগে মিরপুর উপজেলা কৃষি অফিস থেকে আমি বিভিন্ন উচ্চমূল্যের সবজি চাষের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। সেখানে জানতে পারি যে, সাদা ফুলকপির চেয়ে রঙিন ফুলকপি বেশি লাভজনক। তাই কৃষি অফিসের পরামর্শে ও সহযোগিতায় আমি ২০ শতাংশ জমিতে রঙিন ফুলকপি চাষ করেছি। আমি বিষমুক্ত চাষ করছি। পোকা মারার জন্য হলুদ ফাঁদ এবং সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করছি।

তিনি আরও বলেন, এ এলাকায় আমার আগে কেউ এ রঙিন ফুলকপি চাষ করেননি। কৃষি অফিস থেকে আমাকে ফুলকপির চারা, জৈবসার, রাসায়নিক সার, হলুদ ফাঁদ এবং ফেরোমন ফাঁদ এবং পরিচর্যার জন্য খরচও দিয়েছে। রঙিন ও সাদা ফুলকপির চাষ পদ্ধতি একই রকম। আমার জমিতে ১০-১২ দিনের মধ্যেই ফুল চলে আসবে। গাছগুলো খুবই ভালো হয়েছে। বর্তমানে বাজারে সাদা ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা কেজি দরে। আর রঙিন ফুলকপির দাম ১০০ টাকার বেশি। আশা করছি, দাম ভালো থাকলে আমিও অনেক বেশি লাভবান হব।

মিরপুর উপজেলার ছাতিয়ান এলাকার কৃষক কামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সাদা ফুলকপির চেয়ে রঙিন ফুলকপি চাষটা বেশি লাভজনক হওয়ায় আমি এ বছর প্রথম এ কপি চাষ করেছি। এখনো ফুল ধরেনি গাছে। তবে আশা করছি ভালো ফলন ও দাম পাব। কারণ ফুলকপির মৌসুম যখন প্রায় শেষ হবে, তখন আমি বিক্রি করতে পারব। শীতকালীন সবজির দাম মৌসুমের শুরুতে এবং শেষে ভালো পাওয়া যায়। আর রঙিন ফুলকপির দাম তো বেশিই থাকে।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, যশোর অঞ্চলের টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় প্রদর্শনীর মাধ্যমে আমরা রঙিন ফুলকপি চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। যেহেতু রঙিন ফুলকপি চাষ আমাদের দেশে নতুন, তাই সার্বক্ষণিক মাঠ পর্যবেক্ষণ করে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি।

পাইকারি সবজি ব্যবসায়ী সেলিম আহম্মেদ বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে ক্রেতারা যেটাতে আকৃষ্ট হয়, সেটার দাম ভালো পাওয়া যায়। আমরা পাইকারি সাদা ফুলকপি ২৫-৩০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি করি। তার তুলনায় রঙিন ফুলকপির দাম পাইকারি ৫০-৬০ টাকা কেজি, তবে খুরচা বাজারে এলাকা ভেদে এর দাম কমবেশি হয়।

কুষ্টিয়া পৌর মিনিসিপি বাজারের ব্যবসায়ী হরিপুর এলাকার তুহিন আলী বাংলানিউজকে জানান, শীতকালীন সবজি বাজারে পাওয়া গেলেও দাম ভালো রয়েছে। সাদা ফুলকপি এখন ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর রঙিন ফুলকপি এখনো বাজারে খুব বেশি ওঠেনি। কুষ্টিয়ার বাইরে থেকে কিছু রঙিন ফুল আসছে, সেগুলোর কেজি ১০০ টাকার ওপরে। সাদার তুলনায় রঙিন ফুলের দাম সবসময়ই বেশি থাকে।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল বাংলানিউজকে বলেন, পুষ্টিগুণ ও চাহিদা বেশি থাকায় সাদা ফুলকপির চেয়ে রঙিন ফুলকপি চাষ বেশি লাভজনক। আমরা উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের এ ফুলকপি চাষের পরামর্শ দিয়ে থাকি। সেই সঙ্গে যশোর অঞ্চলের টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের রঙিন ফুলকপি চাষে প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনী দিয়েছি। আগামীতে এ রঙিন ফুলকপির আবাদ বাড়বে বলে আশা করছি।  

যশোর অঞ্চলের টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ রমেশ চন্দ্র ঘোষ বাংলানিউজকে বলেন, কৃষিকে বাণিজ্যিক ও লাভজনক করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। আমরা কুষ্টিয়ার ছয়টি উপজেলাসহ যশোর কৃষি অঞ্চলের ৩১টি উপজেলায় রঙিন ফুলকপি চাষে কৃষক পর্যায়ে প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনী এবং উপকরণ সরবরাহ করে প্রযুক্তি সম্প্রসারণ করছি। অনেক স্থানে কৃষকরা এ রঙিন ফুলকপি বাজারজাত করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। পুষ্টিগুণ এবং দাম ভালো হওয়ায় কৃষকরা বেশ আগ্রহী এ রঙিন ফুলকপি চাষে।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৪
এসআই/এসএএইচ


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।