ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

চরের ৩৫ টাকার গরুর দুধ বাজারে গেলেই ১০০ 

মো. নিজাম উদ্দিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৬ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২৩
চরের ৩৫ টাকার গরুর দুধ বাজারে গেলেই ১০০ 

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মেঘনার উপকূলীয় চররমনী মোহন ইউনিয়নের বেশ কিছু দুর্গম চর রয়েছে, যেখানে হাজার হাজার গরু লালনপালন করা হয়।  

গরুর মালিকেরা তাদের গরুগুলোর দুধ বিক্রি করে দেন বেপারির কাছে।

বেপারিরা দুধ সংগ্রহ করে বাজারে এনে বিক্রি করেন। এ দুধ দিয়েই বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে তৈরি হয় মিষ্টান্নসহ দুগ্ধজাত বিভিন্ন খাবার। এছাড়া চর থেকে কিনে শহরের বিভিন্ন এলাকায় খুচরা বিক্রি করা দুধ।  

চরের বাসিন্দা, গরুর মালিক এবং বেপারি এবং ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চরের মাটিতে প্রতি লিটার গরুর দুধের দাম পড়ে ৩৫-৪০ টাকা। আর সেই দুধ বাজারে এনে বিক্রি করা হয় ১০০ টাকা করে। কিছু কিছু অসাধু বেপারি খাঁটি দুধ এনে তাতে পানি ও কেমিকেল মিশিয়েও বিক্রি করেন।  

সদর উপজেলার চররমনী মোহনের মেঘনা নদী বেষ্টিত বিচ্ছিন্ন চরের বাসিন্দা কাজল হাওলাদার বাংলানিউজকে জানান, তিনি চরে থাকেন, ওই চর এবং তার আশেপাশে অন্তত পাঁচ হাজার গরু রয়েছে। এর মধ্যে এক হাজারেরও বেশি গরু থেকে দুধ সংগ্রহ করা হয়। প্রতিদিন সকালে বেপারিরা এসে দুধ সংগ্রহ করে নিয়ে যান।  

চররমনী মোহনের করাতিরহাট এলাকার বাসিন্দা ও গরুর মালিক শাহজালাল মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, বেপারিরা চর থেকে গরুর দুধ মণ হিসেবে কিনে নেন। প্রতি মণ ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকায় বিক্রি হয়। গরুর মালিক সরাসরি দুধ দোহন (দুধ দোয়া) করেন না। বেপারিরাই দুধ দোহন করে নিয়ে যান।  

তিনি জানান, দুধ আগাম বিক্রি করে দেওয়া হয়। অনেক গৃহস্থ বেপারির কাছ থেকে আগাম টাকা নিয়ে নেন।  
চরমেঘা নামে একটি চরের রাখাল রুবেল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, তার মালিক ইমান হোসেন সরকারের শতাধিক গরু রয়েছে। এর মধ্যে ২০টি গাভি দুধ দেয়। তিনি গরুগুলো দেখাশোনা করেন।  

তিনি জানান, প্রতিদিন এক মণের কাছাকাছি দুধ হয়। বেপারি এসে সরাসরি গরু থেকে দুধ সংগ্রহ করে নিয়ে যান।  
একই চরে দুধ সংগ্রহ করতে আসা ইসমাইল হোসেন বেপারি বাংলানিউজকে বলেন, ২৫ বছর ধরে আমি দুধের ব্যবসা করি। বিভিন্ন প্রত্যন্ত চরে ঘুরে ঘুরে দুধ সংগ্রহ করি। প্রতিদিন ভোর থেকে শুরু হয় দুধ সংগ্রহের কাজ। দুধ নদীপথে নিয়ে যাই বাজারে।  

তিনি জানান, মেঘার চরে ১৪৫টি গরুর মালিকদের সঙ্গে তিনি আগাম চুক্তি করে নিয়েছেন। সবগুলো থেকে দিনে প্রায় সাড়ে ছয় থেকে সাত মণ দুধ পাওয়া যায়।  

ইসমাইল বেপারি বলেন, জেলা শহর, দালাল বাজার, মান্দারী বাজারের বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে দুধ সরবরাহ করি। চর থেকে সংগ্রহ করা দুধ একেবারে খাঁটি। দেশি গরুর দুধ হওয়ায় এ দুধের চাহিদা সবখানে রয়েছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দুধ বিক্রি করি ১০০ টাকায়।  
৩৫-৪০ টাকায় কেনা দুধ বাজারে ১০০ টাকা কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুর্গম চরগুলোতে ঘুরে ঘুরে দুধ সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য। আমি নিজে এবং লোকজন দিয়ে দুধ দোহন করে নদীপথে ঘাটে নিয়ে যাই। এতে খরচ পড়ে। তাই বাজারে বাড়তি দামে দুধ বিক্রি করতে হয়।  
সাজ্জাদ নামে লক্ষ্মীপুর শহরের এক বাসিন্দা বলেন, বাজার থেকে প্রতি লিটার দুধ ১০০ টাকা করে কিনতে হয়। তাও বাজারের কিছু দুধে ভেজাল থাকে।  

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৪ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২৩ 
এসআই 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।