ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

অভয়নগরে কৃষি অফিসের দেওয়া ধানের বীজে ভেজালের অভিযোগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৫ ঘণ্টা, মে ৮, ২০২৩
অভয়নগরে কৃষি অফিসের দেওয়া ধানের বীজে ভেজালের অভিযোগ ধানক্ষেত।

যশোর: যশোরের অভয়নগর কৃষি অফিস থেকে দেওয়া ধানের বীজ ভেজালের কারণে হতাশার মধ্যে আছেন উপজেলার কৃষকরা। ক্ষতি পোষাতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

এ ব্যাপারে ১২ কৃষক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে রোববার (৭ মে) লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের আট নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যপুর গ্রামের কৃষকদের মধ্যে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর অফিস থেকে ধানের বীজ ও সার দেওয়া হয়।  

ওই বীজ পুরাতন ও তিন ধরনের ভেজাল মিশ্রিত ধান। কৃষকরা চারা রোপণের পর এ ধানক্ষেতে যথাযথ পরির্চযা করেছেন। পরে ওই ধান থেকে ধানের মুকুল বের হওয়ার সময় প্রথম ধাপে ধান পেকে গেছে। আবার দ্বিতীয় ধাপের ধান কিছু বের হয়েছে। তৃতীয় ধাপের ধান গর্ভাস্থায় আছে। ধানের এ অবস্থা দেখে উপজেলার কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। পরে কৃষি মাঠ কর্মকর্তার সঙ্গে কৃষকরা কথা বললে এ ব্যাপারে কোন সঠিক উত্তর পাননি। এরপর কৃষককরা মোবাইলফোনে কৃষি মাঠ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ধান কেটে ফেলার কথা বলেন।

ওই কৃষি মাঠ কর্মকর্তাকে তারা কোনো দিন দেখেননি বলেও অভিযোগে উল্লেখ্য করেন।  

ওই ১২ কৃষক ধান না পেয়ে প্রায় চার লাখ টাকার ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন। যে কারণে তারা উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরের অফিসারের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

কৃষক গোলাম সরোয়ার বাংলানিউজকে বলেন, ৮৪ শতক জমিতে বীজ বোনার তিন থেকে চার মাসের মধ্যে ভালো ফলন হওয়ার কথা। কিন্তু এতদিনেও তার ক্ষেতে কোনো ফলন আসেনি। জমির ইজারা খরচ, শ্রমিকের মজুরি, ক্ষেত রক্ষণাবেক্ষণসহ অন্তত ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ভেজাল বীজের কারণে এই টাকা তুলে আনার আর কোনো সম্ভাবনা নেই।

মধ্যপুর গ্রামের কৃষক সামছুর মল্লিক বাংলানিউজকে বলেন, সরবরাহ করা বীজ থেকে চারা করে ক্ষেতে লাগানোর কিছুদিন পরেই তিনি মিশ্রণ দেখতে পান। এখন ধান গাছগুলো থেকে ছড়া বের হওয়ার সময়। কিন্তু জমিতে ছোট-বড় নানা জাতের ধান গাছ দেখা যাচ্ছে।

একই গ্রামের কৃষক জাহিদুল সরদার বলেন, ফলন বেশি হওয়ার আশায় মাঠের পর মাঠ কৃষি অফিসের দেওয়া ধান চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়নি।



ধার-দেনা করে চাষ করে ক্ষতি হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। ক্ষতি পোষাতে সরকারে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।

কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পাওয়া ধান বীজ নিয়ে প্রতারিত হয়েছেন কৃষকরা। ক্ষেতে লাগানো ধানগাছ কোনোটি ছোট, কোনোটি লম্বা আকার ধারণ করেছে। ওইসব গাছ থেকে আর মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে ছড়া বের হওয়া শুরু হবে। এ অবস্থায় কৃষকের চোখে জল ছলছল করছে। কৃষকরা ওই ধানের বীজ নিয়ে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

ফিল্ড সুপার ভাইজার শুভাংকর মিত্র বলেন, আমি পাঁচটি গ্রামের ফিল্ড সুপার ভাইজার হিসেবে কাজ করি। মধ্যপুর গ্রামের কিছু কৃষকের অফিস থেকে ধানবীজ দেওয়া হয়। তাদের ধানের ভালো ফলন হয়নি। তবে তার আশপাশের অঞ্চলের ধানের ফলন ভালো হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার অনেক দায়িত্ব। গুটি কয়েক কৃষক হয়তোবা অভিযোগ দিতে পারে। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের ব্যাপারে ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়া যায় কি না সে ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার পরিদর্শনে আসছেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার লাভলী খাতুন বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরপরি আমি ওই অঞ্চলে গিয়েছি। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো।

অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন বলেন, কৃষকরা অভিযোগ দেওয়ার পর আমি ও চেয়ারম্যান মহোদয় এক জায়গায় বসে পরামর্শ করে কৃষি অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।  

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ ফরিদ জাহাঙ্গীর বাংলানিউজকে বলেন, কৃষি অফিস থেকে দেওয়া ধানের বীজ ভেজালের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ দায়ভার আমি ও নির্বাহী কর্মকর্তা নেবো না। এ দায়ভার নিতে হবে কৃষি অফিসকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৩ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০২৩
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।